অশোক কুমার দাস, চিন্তন নিউজ, ৬আগষ্ট: টিকে থাকার সংগ্রামে জীবিকার প্রয়োজনে মানুষই খুঁজে নিয়েছে তার রাস্তা। ঘাসের বীজে পেয়েছে খুঁজে খাদ্য শস্যের দানা। গাছের ছালে পেয়েছে খুঁজে লজ্জা নিবারনের আবরণ। হিংস্র পশুদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে গড়েছে গোষ্ঠী। চাহিদার অপূর্ণতায় প্রতিনিয়ত হন্য হয়ে করেছে সৃষ্টি নতুনত্বের। নিজেদের কাঁধ থেকে জোয়াল নামিয়ে চাপিয়েছে বলদের কাঁধে, আরো চাহিদায় বানিয়েছে ছোটো বড় পাওয়ার ট্রলার থেকে ট্রাক্টর। মানুষই মানুষের আরাধনার জন্য বানিয়েছে মন্দির মসজিদ গীর্জা গুরুদ্বার। মানুষই মানুষের প্রয়োজনে হাতে হাত মিলিয়েছে একে অন্যের সঙ্গে। মানুষই মানুষের প্রয়োজনে ভেঙে দিয়েছে বিভেদের বেড়া। এরই নাম সভ্যতা, এগিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়েই সভ্যতার উত্তরণ।
এগোতে গিয়ে ভাঙতে হয়েছে রাজতন্ত্র সামন্ততন্ত্রের বেড়া, ক্ষত বিক্ষত হতে হয়েছে ভূস্বামীদের রক্তক্ষয়ী আক্রমনের প্রতিরোধে। শেষ হয়েও হয়নি শেষ শ্রেণীশোষক বংশধরদের। চাপা পড়েছে গনতন্ত্র নামক ছাইয়ের গাদায়। দেশে গনতন্ত্র পরিচালক শাসকের কার্যকলাপে সেই চেপে থাকা আগুন আবারও ধিক ধিক করে জ্বলতে শুরু করেছে। সে আগুন পুড়িয়ে শেষ করে দিতে কখনোই করে না বাদ বিচার, সেই আগুনের ছ্যাঁকা গিয়ে লাগলো দেশের সর্ববৃহৎ গনতান্ত্রিক দেশের সর্বময় কর্ত্তা ও কর্ত্তাগিন্নীর গায়ে ।
করোনার ব্যাপকতায় সারা দূনিয়া যখন কুঁকড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে, তখন সর্ববৃহৎ গনতান্ত্রিক দেশের সর্বময় আদালতের নির্দেশে সচল থাকল পুরির জগন্নাথের রথযাত্রা। যে পুরির জগন্নাথ মন্দির দর্শন করতে গিয়ে (১৮/০৩/২০২০) হেনস্তার মুখে পড়তে হলো বৃহত্তম গনতান্ত্রিক দেশের সর্বময় কর্ত্তা রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দকে, পাণ্ডাদের দ্বারা ধাক্কা খেতে হলো তার স্ত্রী সভিতা কোভিন্দকে।
যারা ধর্মে হিন্দু, কিন্তু জাতিতে চাষি, তাঁতি, করণ, পৌন্ড্র, মুচি, সুৃড়ি, সাঁওতাল যারা ব্রাহ্মণ সমাজের দেওয়া আফিম খেয়ে রামের নেশায় মত্ত হয়ে বিধর্মী তাড়াতে খড়গহস্ত, তারা আদপে মন্দির চৌহদ্দির ত্রিসীমানায় প্রবেশাধিকার পাবে তো! তারা সভ্যতার মুল স্রোতে থাকতে পারবে তো! ব্রাহ্মণ বাড়িতে পা রাখার পরে গোবর জলের ছড়া ছিটানো হবে না তো! মহিলাদের আবার অন্দরমহলের অন্তরালে চলে যেতে হবে না তো! সতী হতে চিতায় চাপতে হবে না তো! বিধবার একাদশীর উপবাস, একাধিক যৌন পিপাসু বর্বরের ছিঁড়ে খাওয়ার তৃপ্তি সুখে ভঙ্গ হবে না তো!