কলমের খোঁচা

আপনিই যোদ্ধা, অস্ত্র আপনার হাতেই।


নিজস্ব প্রতিবেদন, শ্রীমন্ত মুখার্জি:-চিন্তন নিউজ-০১/০৫/২০২৪:- প্রায় ২৬ হাজার যুবক যুবতীর চাকরি চলে গেল! এর দায় কার ? সরকারের? প্রশাসনের? না মামলাকারীদের ? একবার ভাবুন তো এরজন‍্য দায়ী আপনিও নন কি ?
এই সরকারের গঠনের পর থেকেই সাধারণ দৃষ্টিতে যা (প্রকল্প) করেছে তার ভাল মন্দ পর্যালোচনা করেছেন? সারদার বৃহত্তম লুট দিয়ে সরকার বাল্যকাল পার করেছে। তারপরেও আপনি ক্ষমা করে দিয়েছেন। যৌবনে নারদার ঘুষ, ত্রিফলা কেলেঙ্কারি সহ অসংখ্য দুর্নীতিকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছিলেন। ১০০ দিন (MGNRGA)এর কাজ না করে গোটা গোটা স্কীমের লুট দেখেও চুপচাপ ছিলেন, তখন দেখেছেন যবকার্ডে ২০০০ টাকা তুলে কার্ড হোল্ডারদের ৫০০ দিয়ে ১৫০০ টাকা লুট হতে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার প্রাপকদের থেকে ৫০০০-২০০০০ টাকা পর্যন্ত কাটমানি নিতে, তারপরেও আপনি চুপ থেকেছিলেন। এই সরকার SSC PSC বছর বছর পরীক্ষার মাধ‍্যমে বছর বছর নিয়োগ না করে যুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ করে প্রশাসন চালাচ্ছে, তারপরেও আপনি চুপ ছিলেন। এরপর সরকারী পরীক্ষার স্বচ্ছতা বজায় রাখার নিয়ম কানুনগুলি দুর্নীতি করার জন্য আইন করে বদল করলো তখনও চুপ করে সব দেখেছিলেন! আপনার বাড়ির মেধাসম্পন্ন যুবক যুবতীর ভবিষ্যত কি হবে ভেবে আপনি আতঙ্কিত হননি! সবকিছুই স্বাভাবিক ভাবছিলেন। ভোটের সময় রাজ্য জুড়ে ভোট লুট সন্ত্রাস দেখেও আপনি চুপ ছিলেন কারণ আপনি তো রাজনীতি করেন না, ওটা নোংরা জিনিস! আপনি ঘুরে দাঁড়ালে ওরা এত সাহস পেত? আপনার চুপ থাকা ওদের সাহস জুগিয়েছে।

আচ্ছা ভেবে বলুন তো আপনি শোনেননি শাসক দলের কেষ্ট বিষ্টুরা টাকা নিয়ে চাকরি বিক্রি করছে’ আপনি কখনও শোনেননি? সব শুনেও আপনি এই সরকারকে প্রাপ্তবয়স্ক করেছেন। একবারও ভাবেননি আপনার নিজের হাতে তৈরি ফ্রাঙ্কেনস্টাইন একদিন আপনাকেও গ্রাস করবে !
এই সরকারের একটা নিয়োগও স্বচ্ছ হয়েছে বলে আপনি মনে করেন? খাদ্য কেলেঙ্কারির ভয়াবহতা মানুষকে শিউরে দিয়েছে, তারপরেও এদের বাড়তে তো আপনিই দিয়েছেন!
অনেকেই ভেবেছিলেন তৃনমূলের এই অরাজকতা থেকে বিজেপি উদ্ধার করবে। কিন্ত নারদার সাংসদ ঘুষখোরদের বিরুদ্ধে তৈরি সংসদীয় এথিক্স কমিটির ভূমিকার কথা ভুলে গেলেন। লালকৃষ্ণ আদবানি তদন্ত দূর অস্ত একটা মিটিং ডেকে কেন ঘুষ নিতে দেখা গেল এটা পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেননি! আবার এই এথিক্স কমিটি রাহুল গান্ধীকে একমাসের মধ্যেই দ্রুততার সঙ্গেই বহিষ্কার করেছিল। এসএসসি দুর্নীতিতে তদন্ত স্বচ্ছভাবে করার সবুজ সংকেত সিবিআই যদি কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে পেতো তাহলে বহুদিন আগেই নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত মাথাদের টেনে বের করে কারা ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছে আর কারা নিজেদের মেধায় চাকরি পেয়েছে সেটা নির্ণয় করা যেত, তাহলে আজকে আর প্রকৃত মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়া শিক্ষক শিক্ষিকাদের বিপদে পড়তে হতো না। এ তো রাজায় রানিতে সেটিং হচ্ছে আর প্রকৃত মেধাবী শিক্ষকরা ও তাদের পরিবার আর্থিক ও সামাজিক বিপদে পড়ছে! সারদার সিবিআই তদন্তের কি পরিনতি হয়েছে সেটাও ভুলে গেছেন! আসলে একই মালিকের দুটো টিম যে জিতবে ট্রফি মালিকের। দুই দলের ক্যাপ্টেনের লড়াই দেখে ভুলে গেলেন! মালিকের মুখপত্র স্বস্তিকাতে তো প্রকাশ্যেই স্বীকার করে নিয়েছে। তারপরেও ভাবছেন মোদী মমতার সরকারের বিরুদ্ধে! কেজরিওয়াল, হেমন্ত সোরেনকে সিবিআই ইডি গ্রেফতার করতে পারেন কিন্ত এখানে এলেই সিবিআই ইডি নকদন্তহীন বাঘ হয়ে যায়। ওই যে কালীঘাটের কাকু বলেই দিয়েছিল সিবিআই কান পর্যন্ত এসেই থেমে যাবে, আমার মালিককে দুনিয়ার কোন শক্তি ছুতে পারবে না! ঠিকই তো বিপদের দিনে মালিকের ইচ্ছায় বড় দেখে একটা পশু বলিদান দিলেই বিপদ কেটে যাচ্ছে। আর দুই মেদিনীপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদের চাকরি চুরির মূল এজেন্ট এখন ফুল বদলে বিজেপিতে গিয়ে বড়ো বড়ো বাতেলা মারছে!! আর আপনি ‘ভাই বোনের’ মকফাইট দেখে অভিভূত হচ্ছেন! ভাবুন ভাবুন ভাবা প্রাকটিস করুন। কেন্দ্র সরকারের প্রচ্ছন্ন মদত না থাকলে মাথা থেকে পা পর্যন্ত জেলের ভিতর থাকত।

এখন চোরের সাগরেদ গাঁটকাটারা বলতে শুরু করছে পার্থ চোর তাই ওকে মন্ত্রীসভা থেকে সরিয়ে দিয়েছে, সব জানে পার্থ! তাহলে পার্থ চাকরি বিক্রির এত বড় সিন্ডিকেট চালালো মাননীয়া কিছুই জানতে পারলেন না? মাননীয়া যে বলেন রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকায় একটা ড্রেন বা একটা ঢালাই রাস্তাও ওনার অনুপ্রেরণা ছাড়া হয় না, যে যা করে সব ওনার নখ দর্পনে। তহলে সব জেনেও উনি চুপ ছিলেন কেন ? প্রতিটি বিধানসভার প্রার্থী উনিই, তাই দায় তো ওনাকেই নিতে হবে। ওনার মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে সব চুরি বা জোচ্চুরি যা হয়েছে ক্যাবিনেটের প্রধান হিসাবে অপরাধী উনিই। সুপার নিউমেরিক পোস্ট না লুটের নিয়োগ কার সিদ্ধান্তে ? উনি মন্ত্রিসভায় কার্যকরী করলেন আর গাঁটকাটা শুধু পার্থর ঘাড়ে চাপলেই হলো! এখনও নূন্যতম সম্মান ও লজ্জা থাকলে পদত্যাগ করুন।

সমস্ত বাঙালির সামনে সময় এসেছে বদলা নেওয়ার। ইলেক্টোরাল বন্ডের লুটের টাকায় মানুষকে ভুলিয়ে বিভ্রান্ত করার সমস্ত অপচেষ্টাকে পদাঘাত করে তৃণমূল বিজেপিকে রাজ্য থেকেই উৎখাত করে ফেলুন। যা ভুল করেছেন সংশোধনের সময় সামনে। ইলেক্টোরাল বন্ডের লুটের টাকায় ওদের মস্তি করতে দিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মের আর সর্বনাশ করবেন না। নাহলে আপনাকেই আবার এই অন্ধকার দিনের জন্য দায়ী করবে আপনারই উত্তরাধিকারীরা।

তৃণমূল বিজেপির সাজানো লড়াইয়ে না ভুলে চাকরিচোর, কয়লাচোর, বালিচোর, গরু পাচারকারী, কাটমানিখোর তৃণমূল ও ইলেক্টোরাল বন্ডের লুটেরা, রেল, বীমা, খনি, এয়ারপোর্ট, জাতীয় সম্পদ বেচা বিজেপিকে হারিয়ে বাম প্রার্থীদের জয়যুক্ত করুন (হয়তো ১৯৯৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত এসএসসির মাধ্যমে আপনার কোন আত্মীয়, বন্ধু বা আপনার এলাকার কেউ কতটা স্বচ্ছ ভাবে চাকরি পেয়েছিল সেটা প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা ও আপনার আছে)। আপনার লড়াই এরাই লড়তে পারে। এই লড়াইয়ে আপনিই যোদ্ধা, আপনার একটি মাত্র ভোট এই অন্ধকার থেকে বের হওয়ার রাস্তা দেখাবে।

লেখক শ্রীমন্ত মুখার্জ্জী (সমাজকর্মী)।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।