দেশ

ঘৃণার বিষবাষ্পে আক্রান্ত যোগীর সরকার


মধুমিতা রায়, চিন্তন নিউজ, ৩০ ডিসেম্বর: হিন্দু সম্প্রদায়ের ঠিকেদার বিজেপির রাজত্বে বেশ কিছুদিন ধরেই “লাভ জিহাদ” বিরোধী এক মঞ্চ ধর্মান্তকরন বিরোধী এক আইন পাশ করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গত নভেম্বরে উত্তরপ্রদেশ সরকার ধর্মান্তকরন বিরোধী এই অর্ডিন্যান্স জারি করেন। এই আইনে বলা হয় জোর করে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও বিবাহ অবৈধ বলে গণ্য করা হবে।

আসলে বিজেপি শাসিত আদিত্য নাথ যোগীর রাজ্য সরকারের মূল উদ্দেশ্য ছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর “লাভ জিহাদ” আইনকে হাতিয়ার করে দমন পীড়ন নামিয়ে আনা। আজ এই আইনের কবলে পড়ে উত্তরপ্রদেশ সরকার তার রাজ্যকে ঘৃণা, বিভাজন, উগ্ৰ সাম্প্রদায়িক রাজনীতির আঁতুড়ঘরে পরিনত করেছেন। এই অভিযোগে উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারকে এক লিখিত চিঠিতে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় বিঁধলেন প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন, প্রাক্তন বিদেশ সচিব নিরুপমা রাও, প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন উপদেষ্টা টি কে এ নায়ারের মতো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শতাধিক আই এ এস অফিসার।

দিন প্রতিদিন রাজ্যকে উগ্ৰ সাম্প্রদায়িক রাজনীতির শিকার করে রাজ্যকে গোঁড়ামির উৎকেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে বলে আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন। স্বাক্ষরকারীরা লেখেন, “উত্তরপ্রদেশ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সহ রাজনীতিবীদদের নুতন করে সংবিধান পড়ে সুশিক্ষিত হওয়ার অনুরোধ জানাই।” সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বজরং দলের কর্মীবাহিনী গোটা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে সন্ত্রাস ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর। জোর করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। এই অর্ডিন্যান্সকে হাতিয়ার করে মোরাদাবাদে রশীদ ও পিঙ্কির রেজিস্ট্রী করার মুহুর্তে রশিদকে গ্ৰেফ্তার ও পিঙ্কিকে হোমে পাঠানো হয়। যেখানে পিঙ্কি জোর করে বিবাহ করার অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন। এই হেনস্থার কারনে পিঙ্কির গর্ভপাতও ঘটে।

বিজনৌরে জোর করে ধর্মান্তরিত করে বিবাহ করার অভিযোগে এক সপ্তাহ ধরে জেলবন্দী থাকেন এক তরুণ। যেখানে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই ভাবে দমন-পীড়ন চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে যোগীর রাজ্যে। মূলতঃ সাধারণ ও নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকজনের উপরই এই নির্যাতন বেশি ঘটেছে। আর এই সমস্ত সন্ত্রাস পুলিশের নিষ্ক্রীয়তায় বেড়ে চলেছে এমনকি পুলিশি মদতেই এই সব ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করেন স্বাক্ষরকারী আই এ এস অফিসারেরা।

এই বিষয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টও রায় দেন যে, পছন্দ মতো জীবনসঙ্গী নির্বাচনে স্বাধীনতা থাকবে প্রত্যেক নাগরিকের। ধর্মান্তরণ অর্ডিন্যান্সের আড়ালে রাজ্যকে গোঁড়ামির , উগ্ৰ সাম্প্রদায়িক ও ঘৃণ্য রাজনীতির আঁতুড়ঘরে পরিনত করে ধর্মান্ধতার কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে। আজ উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার ধর্মীয় বিষ প্রয়োগে মানুষের সুস্থ, স্বাধীন জীবন যাপন ব্যাহত করছেন বলে আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন অভিজ্ঞ আই এ এস অফিসারেরা।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।