দেশ

যোগবাবা রামদেব থেকে বিজনেস টাইকুন রামদেব – বিজেপির দীর্ঘ পরিকল্পনার ফসল।


কল্পনা গুপ্ত , বিশেষ প্রতিবেদন -চিন্তন নিউজ, ০৯/০২/২০২৪:– মহেন্দ্রগড়, হরিয়ানার রামকিষান দেব থেকে যোগ শিক্ষক রামদেব যিনি একই সঙ্গে ব্যবসায়ী ও পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের ব্র‍্যান্ড এম্বাসাডর। ২০০২ থেকে যোগ শিবির সংগঠন, টিভিতে সম্প্রচার শুরু করলেও ২০০৬ সালে সহকর্মী বালকৃষ্ণের সাথে পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ ও পতঞ্জলি যোগপীঠ, ভারত স্বাভিমান ট্রাস্ট গঠন করেন।

তার সর্বপ্রথম নেতিবাচক পদক্ষেপ হল আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিকে সর্বতোভাবে বিরূপ সমালোচনা করা এবং এই মর্মে মানুষকে বিভ্রান্ত করে দেওয়া। রামদেব স্বাভিমানের নাম করে ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনীতির সাথে সংযুক্ত হন এবং নিরপেক্ষতার আড়ালে পতঞ্জল আয়ুর্বেদ পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয়ের প্রচার ও প্রসার চালাতে থাকেন। কার্যের প্রধান শিবির হরিদ্বারে। সংবাদ মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য থেকে পাওয়া যায় ২০১৩ সালে তার ব্যাক্তিগত সম্পত্তির মূল্য প্রায় ১১০০ কোটি টাকা।

ভারতীয় দর্শনে গেরুয়া রং ত্যাগের প্রতীক। যা সারাবিশ্ব সম্ভ্রমের চোখে দেখে। যোগ শিক্ষক গেরুয়া বসন ধারণ করেও ক্রমশ একজন বিজনেস টাইকুন হয়ে ওঠেন বিজেপি লালিত দীর্ঘ পরিকল্পনার পথে হেঁটে।

২০০৬ সালে রামদেবের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও ওষুধের লেবেলিং এ ভুল তথ্য দেবার অভিযোগ ওঠে। হরিদ্বারে দিব্যা যোগ ফার্মেসি উৎপাদন কারখানা ১১৫ জন কর্মীকে বরখাস্ত করে। ফলে শ্রমিকরা উন্নত মজুরি ও বীমার দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন সি আই টিউ এর নেতৃত্বে। আন্দোলনের ফলে জেলা প্রশাসনের সাথে যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তাকেও রামদেব মান্যতা দেয়নি। একই সঙ্গে সি পি আই ( এম) নেতৃ বৃন্দা কারাত কারখানা পরিদর্শন করতে এসে শ্রমিকদের কাছ থেকে জানতে পারেন , ওষুধ তৈরিতে মানুষের মাথার খুলি ও পশুর দেহের অংশ ব্যবহৃত হয়। ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। আয়ুষ বিভাগ নমুনায় মানুষ ও প্রাণীর ডি এন এ- এর প্রমাণ পেয়েছে।

৩ রা জানুয়ারী ২০০৬ এ বৃন্দা কারাত, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের চিঠি সমর্থনে রামদেবকে ভেজাল ও লেবেল আইন লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করেন। ওষুধ নিয়ে বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের অভিযোগে রামদেব সুপ্রিম কোর্টের নিশানায় আসে। এবারে অভিযোগ এনেছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল এসোসিয়েশন। মামলার পর্যবেক্ষণে বিচারপতি আহশানউদ্দিন এবং প্রশান্ত কুমার মিশ্রর ডিভিশন বেঞ্চ সতর্ক করে দেয় যে এই ধরণের বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন ফের প্রকাশ হলে কমপক্ষে ১ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে। এইসব কান্ডকারখানাকে ছাপিয়ে গিয়েছিলো রাজস্থানে ধর্মীয় অনুভূতিকে রামদেবের আঘাত করার প্রচেষ্টা। পতঞ্জলির বিক্রয় কেন্দ্রগুলিতে কোয়াক ডাক্তার বসানো হয় রোগী দেখার জন্যে, যারা কোন প্রতিষ্ঠানিক স্বীকৃত চিকিৎসক নয়।

গত ৬ ই ফেব্রুয়ারিতে রামদেবের সংস্থা পতঞ্জলির দাঁতের মাজন দৈব দন্তমাজনে ভেষজ নয় আমিষ পদার্থ আছে এই অভিযোগে মামলা করেন আইনজীবী যতীন শর্মা। এই সূত্রে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রকের গঠিত কমিটিকে আগামী ১০ সপ্তাহের মধ্যে এই বিষয়ে জানাতে নির্দেশ দিয়েছে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।