দেশ

বিনা বেতনে বাধ্যতামূলক ছুটির ঘোষণা এয়ার ইন্ডিয়ার—


কাকলি চ্যাটার্জি: চিন্তন নিউজ:১৬ই জুলাই:- এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মচারীদের জন্য বিনা বেতনে বাধ্যতামূলক ছুটির ঘোষণা সংস্থাটির পরিচালক মন্ডলীর। সংস্থার চেয়ারম্যান রাজীব বনশল জানান পরিচালনা পর্ষদ কর্মচারীদের ছয় মাস থেকে দু’ বছরের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে, প্রয়োজনে এই ছুটির মেয়াদ পাঁচ বছরও বৃদ্ধি করা হবে। ছুটির দিনগুলোতে মিলবে না কোনো বেতন। বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর ক্ষেত্রে কর্মীর সুস্থতা, দক্ষতা, কোম্পানিতে তাঁর বিশেষ অবদানের কথা বিবেচনা করা হবে।

গতকালের এয়ার ইন্ডিয়ার পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান রাজীব বনশলকে কর্মীর উপযুক্ত দক্ষতা, যোগ্যতা, কাজের গুনমাণ, শারীরিক সুস্থতা বিবেচনা করে এবং অতীত কাজের মূল্যায়নের নিরিখে তাঁকে ছয় মাস থেকে দু’বছর বিনা বেতনে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে। প্রয়োজনে, পরিস্থিতির কারণে পাঁচ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে ছুটির মেয়াদ। সদর কার্যালয়ে বিভাগীয় প্রধানদের পাশাপাশি আঞ্চলিক পরিচালকরাও তাঁদের অধীনস্থ কর্মচারীদের ঐ একই ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্ৰহণ করবেন বলে সার্কুলার জারি করা হয়েছে। সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে,”সিএমডির প্রয়োজনীয় অনুমোদন পাওয়ার জন্য কর্মচারীদের নামের তালিকা জেনারেল ম্যানেজারের কাছে পাঠানো দরকার।” সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এয়ার ইন্ডিয়ার মুখপাত্র বলেন,”আমরা এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।” কোভিড১৯ মোকাবিলায় লকডাউনের কারণে ভারতের মধ্যে এবং বিদেশে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞার জন্য সংস্থার বাণিজ্য বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছে যে কারণে আর্থিক মন্দার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের অন্যান্য উড়ান সংস্থাও কর্মচারীদের রোস্টার ডিউটি, বেতন সংকোচন, ছুটিতে পাঠানোর মত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অন্য একটি সংস্থা গো এয়ার গত এপ্রিল মাস থেকেই তার বেশীরভাগ কর্মীদের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়ে আর্থিক মন্দা কাটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক যাত্রী বিমানগুলো গত ২৩ মার্চ থেকে তার পরিষেবা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে ভাইরাসজনিত কারণে। দুই মাস পরে ২৫ মে থেকে দেশের মধ্যে যাত্রী বিমান পরিষেবা শুরু হয়েছে তবে কিছু নিয়মাবলী মাথায় রেখে। বর্তমানে বিমানগুলো তার পূর্ণাঙ্গ বহন ক্ষমতার ৪৫% পালন করতে সক্ষম। দৈহিক দূরত্ব বজায় রাখতে পাশাপাশি দুটি আসনে যাত্রীদের বসা অথবা পাশাপাশি তিনটি আসনের ক্ষেত্রে মাঝের আসনটি ফাঁকা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এরফলে গোটা বিশ্বেই বিমান পরিবহনের ক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোর তুলনায় প্রায় ৪৯% যাত্রী চাহিদা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

গতকাল এয়ার ইন্ডিয়ার পরিচালন বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০ জুলাই থেকে তাদের অফিসগুলো পূর্ণ শক্তি নিয়ে কাজ শুরু করবে। কোভিড১৯ পরিস্থিতির জন্য কোনোরকম রোস্টার মেনে কাজ হবে না। অনুপস্থিত কর্মীদের ছুটির জন্য আবেদন করতে হবে। দৈহিক দূরত্ব বজায় রাখা, প্রয়োজনীয় স্যানিটাইজেশন সহ অন্যান্য বিধিনিষেধ কঠোরভাবে মেনে কাজ করার জন্য বিভাগীয় প্রধানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে,”ক্রিটিক্যাল রোগে আক্রান্ত, গর্ভবতী মহিলা ও কন্টেনমেন্ট জোনগুলোতে থাকা কর্মচারীদের জন্য ওয়ার্ক ফ্রম হোম বিবেচনা করা যেতে পারে।

২০১৯ সালে এয়ার ইন্ডিয়া ৭৬%শেয়ার বিক্রী করে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করে, দরপত্র আহ্বান জানায়। কোনো ক্রেতাই সেভাবে এগিয়ে আসেনি। বর্তমান বছরে ১০০% শেয়ার বিক্রি করতে তৎপর, তবে পূর্বের শর্তাবলী কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়ার মোট ঋণের পরিমাণ ৬০০৭৪ কোটি টাকা। ক্রেতাকে বর্তমানে ২৩২৮৬ কোটি টাকার দায়িত্ব নিতে হবে, পূর্বের শর্তে ৩৩৩৯২ কোটি টাকার ঋণ ও বর্তমান দায় নেওয়ার কথা ছিল। তবে নরিম্যান পয়েন্ট বিল্ডিং ও দিল্লির কনট প্লেসের অফিস নিজেদের দায়িত্বে রাখবে এয়ার ইন্ডিয়া।

এয়ার ইন্ডিয়া বর্তমানে দেশের মধ্যে ৫৬ টি শহরে এবং বিদেশের ৪২ টি শহরে উড়ান পরিচালনা করে। মোট ১২১ টি বিমানের মধ্যে ১৮ টি বিমান ব্যবহার হয় না। মোট কর্মচারী ১৭৯৮৪ জনের মধ্যে স্থায়ী কর্মচারী মাত্র ৯৬১৭ জন। ৩৬% কর্মচারী খুব শীঘ্রই অবসর গ্ৰহণ করবেন। কিন্তু বর্তমান কোভিড১৯ পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক মন্দায় ধুঁকছে গোটা বিশ্ব যা আগামী দিনে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে চলেছে। এমতাবস্থায় কোন বেসরকারি সংস্থা আগ্ৰহী হবে অলাভজনক এই সংস্থা কিনতে? যদি কোনো সংস্থা অধিগ্ৰহণ করতে রাজী হয় তার পাখির চোখ হবে এই সংস্থাকে লাভজনক করার দিকে এগোনো। সেক্ষেত্রে বেশ কিছু অন্তর্দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রুটে (যে রুটগুলি অলাভজনক) বিমান পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।

ইউনিয়নসমূহ প্রবল আপত্তি জানিয়েছে সংস্থা বিক্রির ব্যাপারে। যা আর্থসামাজিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাতে হয়তো টুকরো টুকরো করে বিক্রি করতে হবে এই খ্যাতিসম্পন্ন বিমান সংস্থাকে। কেন্দ্রীয় সরকার যদি কোনো বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা না করে তবে সমূহ বিপদ। যদিও বর্তমান সরকার যেভাবে সমস্ত লাভজনক বা অলাভজনক সংস্থা বিক্রি করতে উঠেপড়ে লেগেছে তাদের কাছে এই আশা করা সম্পূর্ণ অনুচিত বলেই বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।