কাকলি চ্যাটার্জি: চিন্তন নিউজ:১৬ই মে:–আত্মনির্ভরশীল ভারত গঠনের নামে ভাঁওতাবাজি শুরু হয়েছে পূর্ণমাত্রায়। ২০ লক্ষ কোটি টাকা প্যাকেজের পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে কৃষক শ্রমজীবি মানুষের বঞ্চনার দূরভিসন্ধি। অর্থমন্ত্রী সীতারামনের ঘোষণার কোথাও নেই কৃষক, শ্রমিক , পরিযায়ীদের জন্য কোনো সুরক্ষাকবচ, আছে কৃষি ব্যবস্থার ব্যাপক বাণিজ্যিকিকরণের প্রস্তাব। কর্পোরেটদের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া হল কৃষি পণ্যের বাজার। কৃষি বিপণন শিল্প চাঙ্গা করতে এক লক্ষ কোটি টাকা ঘোষিত হয়েছে। সুযোগ পাবেন কারা? বেসরকারি সংস্থাগুলো। কৃষকের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে ফসল সংগ্ৰহ করে মজুত, বিদেশে রপ্তানি করবেন যাঁরা। কৃষক তাহলে কী পেলেন? স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী উৎপাদিত পণ্যের খরচের দেঢ়গুণ সহায়ক মূল্য দেবার কথা ছিল, কৃষি ঋণ সহজলভ্য, ঋণ মকুবের যে কথা ছিল তা এককথায় এড়িয়ে যাওয়া হল, ভুলিয়ে দেওয়া হল।বেসরকারি উদ্যোগপতিরা ফসল ফলানোর আগেই কৃষক কে ঋণের জালে আষ্টেপৃষ্টে ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলে বাধ্য করবেন বাজার মূল্যের কম দামে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে। ফলে গরীব কৃষক আরও গরীব হবেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আইন সংশোধন হবে বলে জানা গেছে। তার মানে চাল, ডাল, আলু, পিঁয়াজ, তেল ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের ওপর থাকবে না কোনো সরকারি নিয়ন্ত্রণ, থাকবে না মজুতের ঊর্দ্ধসীমা। জাতীয় বিপর্যয় নেমে এলে সেক্ষেত্রে মজুতের ঊর্ধ্বসীমা চিহ্নিত করা হতে পারে। প্রশ্ন এখানেই, এখন কি জাতীয় বিপর্যয় নয়? বোরো ধান পড়ে আছে মাঠেই, লকডাউনের জন্য মজুর অপ্রতুল, লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক পথে, সর্বত্র কর্মী সংকোচন, মজুরি হ্রাস পাচ্ছে। অর্ধাহার, অনাহারে আত্মহত্যার মিছিল শুরু হয়েছে দেশের নানা প্রান্তে। এখনই তো জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করা উচিৎ! তা না করে দেশবাসীর চরম অসহায় মূহুর্তে যখন লড়াই আন্দোলন সংগঠিত করার হাজারো বিধিনিষেধ, হাজারো সমস্যা তখন এইসমস্ত কালা আইন পাশ করিয়ে নেওয়ার নোংরামি অব্যাহত। কালোবাজারি পেতে চলেছে আইনত বৈধতা।
কৃষকসভা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে বলেছে এর ফলে বাজারে খাদ্যশস্যের দাম হবে ঊর্ধ্বমুখী,দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। কৃষক পুরোপুরি বেসরকারী সংস্থার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন। নয়া উদারনীতি কৃষকদের জীবনে চরম দুর্দশা নামিয়ে আনবে। অসহায়, ফসলের মূল্য না পাওয়া, প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় বিপর্যস্ত কৃষকদের জন্য কোনো আর্থিক সহায়তার কোনো ঘোষণা নেই এই কৃষক বিরোধী নয়া প্যাকেজে।