দেশ

*অভিবাসী শ্রমিকদের ব্যাপারে উদাসীন শীর্ষ আদালত


মল্লিকা গাঙ্গুলী :চিন্তন নিউজ:১৬ই মে: বিশ্ব জোড়া করোনা অতিমারি সংকটে ভারতের জনজীবন ও বিপর্যস্ত। কোভিড ঊনিশ দেশের সমাজ,সংস্কৃতি, অর্থনীতি সব উলোট পালোট করে দিয়েছে। এই সময় সরকারের অনেক বেশি সংবেদনশীল হওয়া দরকার অথচ এই পরিস্থিতিতে ও বহুক্ষেত্রেই সরকারের অমানবিক চেহারা ফুটে উঠছে। ভারতবর্ষ প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডার হলেও এদেশের বৃহৎ সংখ্যার মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এই দরিদ্র মানুষ গুলি রুজির টানে নিজ রাজ্য ছেড়ে অপর রাজ্যে পাড়ি দিতে বাধ্য হয়। নিজের দেশেরই ভিন্ন প্রদেশে খেটে খাওয়া এই অগণিত শ্রমিক আজ পরিযায়ী, অভিবাসী ইত্যাদি নামে পরিগণিত। বর্তমান করোনা সংক্রমণ রুখতে কেন্দ্র সরকার অপরিকল্পিত ভাবে লকডাউন বা গৃহবন্দি ঘোষণা করে ফলে সমস্ত প্রকার কাজের ক্ষেত্র গুলি অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়; কিন্তু এই দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলির জন্য কোনো সুবন্দোবস্ত করা হয় না, ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থা হয়ে পড়ে শোচনীয়। একদিকে খিদের জ্বালা অপর দিকে অজানা মৃত্যু ভয় তাদের মরিয়া করে তোলে। সুদূর উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ মহারাষ্ট্র বা দক্ষিণী রাজ্য গুলি থেকে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক পরিবারের টানে ঘরমুখী হয়ে রাস্তায় নামে। অনিদ্রায় অনাহারে, চরম পরিশ্রমে নাজেহাল হয়ে বহু মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে পথক্লান্ত শ্রমিকের দল না জেনে কখন রেলপথের উপর ঘুমিয়ে পড়ে, আর তাদের এই অসহায়তায় মালগাড়ির চাকা পিষে দেয় ষোলো জন শ্রমিকের তাজা প্রাণ। এই মর্মান্তিক ঘটনায় মর্মাহত হয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী আলাখ আলোক শ্রীবাস্তব এই সমস্ত শ্রমিকের দুর্দশার জন্য কেন্দ্র সরকার কে দায়ী ক’রে দেশের শীর্ষ আদালতে এক মামলা দায়ের করেন। দুর্ভাগ্যবশতঃ শ্রীবাস্তবের অভিযোগকে সুপ্রিম কোর্ট কোনো আলোচনা না করেই জানিয়ে দিয়েছে এ ব্যাপারে আদালতের কিছু করার নেই! এমন কি বলা হয়েছে শ্রমিকদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ বিষয়ে আদালতে কোনো শুনানি হবে না! আরো একধাপ এগিয়ে সুপ্রিম কোর্ট অভিযোগ কারী আইনজীবীকে বলেন তিনি বিভিন্ন সংবাদ পত্রের ক্লিপিং পড়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন যা ভিত্তি হীন এবং শীর্ষ আদালত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না! কোর্টের ভাষায় কেউ যদি রেল লাইনের উপর ঘুমায় তার দায়িত্ব আদালতের নয়। যারা দিনের পর দিন হেঁটে চলেছে তাদের থামানো যাবে কি ভাবে?

কেন্দ্রের পক্ষে সলিসিটর তুষার মেহতা জানান, অভিবাসী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে কেন্দ্র সরকার পূর্বেই অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে তা সত্ত্বেও তারা আগে থেকেই হাঁটতে শুরু করেছে এখন এদের বলপ্রয়োগ করে থামাতে গেলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। ভারতের লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী বলে চিহ্নিত দরিদ্র অসহায় মানুষের জীবন জীবিকা নিয়ে বেশিরভাগ রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকারের কোনো সহানুভূতি নেই। তাদের অকাল মৃত্যু সরকারের হিসেবে মৃত্যু নয়! এমন কি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই চরম নিষ্ঠুর নির্দয়তার পরিচয় পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দেশের শীর্ষ আদালত ও কি কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছে? জনগনের জন্য, জনগনের দ্বারা, জনগনের, শাসন ব্যবস্থায় প্রজানুগামী তন্ত্র কোথায়?? সাধারণ মানুষ সমস্ত বঞ্চনার প্রতিকার এবং জীবন সুরক্ষার জন্য দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখে অথচ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এমন অমানবিক পদক্ষেপ দেশবাসীর মনে চরম হতাশার জন্ম নেবে! কোভিড ঊনিশ অতিমারির সংকট কালে ব্যক্তি, সমষ্টি, দল, সর্বোপরি রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের মানবিক সহৃদয় সহযোগিতা মানুষ প্রত্যাশা করে। কায়িক পরিশ্রমী শ্রমজীবীরাই দেশের মূল স্তম্ভ। বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এই অভিবাসী বা পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবন, জীবিকা, এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার সম্পূর্ণ দায় সরকারের। বর্তমান করোনা অতিমারির জরুরি পরিস্থিতিতে রাজ্য এবং কেন্দ্র উভয় সরকারের ভোট রাজনীতির ঊর্দ্ধে উঠে প্রজাপালন রাজধর্ম হওয়া উচিত বলেই বুদ্ধিজীবী মহলের অভিমত।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।