শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

বিশ্ব থাইরয়েড দিবস: ডক্টর স্বপ্না চট্টরাজ


চিন্তন নিউজ, ২৫ মে: আজ বিশ্ব থাইরয়েড দিবস। বিশ্বব্যাপী ৭৫ কোটি মানুষ থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছেন। এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে ২০০৯ সাল থেকে এ দিনটিকে পালন করা হচ্ছে। আমাদের দেশে সরকারি ভাবে এই দিবসটি উদযাপিত হয় না। তবে বিভিন্ন সংগঠন গত কয়েক বছর ধরে দিবসটি পালন করে আসছে। দেশে বর্তমানে অন্ততঃ ৫ কোটি থাইরয়েড রোগী রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই হলো নারী। আবার এদের মধ্যে ৩ কোটি রোগীই জানে না তারা এ রোগে আক্রান্ত।

থাইরয়েড একটি গ্রন্থি যা আমাদের গলার শ্বাসনালীর সামনের দিকে থাকে। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিসৃত হরমোন আমাদের পক্ষে খুব উপকারী। এই হরমোন মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। কিন্তু হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণ বা কম ক্ষরণ আমাদের শরীরে অনেক সমস্যা তৈরি করে যার সম্পুর্ন নিরাময় হয় না। কিন্তু একটু বুঝে শুনে চললেই এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

এবার দেখা যাক থাইরয়েডে সাধারণত কি কি সমস্যা হয়। ১) হাইপারথাইরয়েডিজম- এখানে রক্তে থাইরয়েড নিসৃত হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। বেড়ে গেলে কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন বুক ধড়ফড় করা, ওজন কমে যাওয়া, গলগন্ড, চোখের আকার বেড়ে যাওয়া, গরম সহ্য হয় না, ঋতুস্রাবের সমস্যা, এমনকি মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
২) হাইপোথাইরয়েডিজম- এখানে রক্তে থাইরয়েড নিসৃত হরমোনের পরিমাণ কমে যায়। ফলে বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন- দূর্বলতা, ওজন বৃদ্ধি, বেশি ঠান্ডা লাগা, গলগন্ড, পেশি ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, চুল পড়ে যাওয়া, কিছু ভালো না লাগা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অনিয়মিত ও অতিরিক্ত ঋতুস্রাব ইত্যাদি। গর্ভাবস্থায় এই রোগ থাকলে বাচ্চার নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। জন্মের পর কোনো শিশু এই রোগে আক্রান্ত হলে তার বুদ্ধির স্বাভাবিক বিকাশ, পড়াশোনা, বয় সন্ধির সময়ে নানা সমস্যা হতে পারে।

থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ কমে যাওয়ার কারন কি তা আমাদের জানতে হবে।
১-খাদ্যে আয়োডিনের অভাব
২-কিছু অটো ইমিউন ডিস-অর্ডার
৩-কোনো কারনে থাইরয়েড অপারেশন হলে
৪-রেডিওথেরাপি নিলে
৫-এছাড়া কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া।
৬-জন্মের সময়ে থাইরয়েড গ্রন্থি তৈরি না হলে
৭-কিছুখাদ্য উপাদান বেশি পরিমাণে খেলে যেমন-বাধাকপি, ব্রকলি, পুইশাক, মিষ্টি আলু, স্ট্রবেরি ইত্যাদি।

থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ বেড়ে যাবার কারন হল
১-অটো ইমিউন ডিস অর্ডার
২-থাইরয়েড হরমোন বেশি পরিমাণে হলে
৩-থাইরয়েড গ্রন্থিতে কোনো সঙক্রমন হলে
৪-থাইরয়েড গ্রন্থিতে টিউমার হলে
একজন পুরুষের তুলনায় একজন মহিলা থাইরয়েড সমস্যায় বেশি ভোগেন। আমাদের চারপাশে প্রতি আটজন মহিলার মধ্যে একজন কোনো না কোনো ভাবে থাইরয়েড সমস্যায় আক্রান্ত। আজকাল তাই বলা হচ্ছে থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা মহিলাদের রুটিন পরীক্ষার আওতায় আনা হোক। সন্তান ধারন ও প্রসবের সময় থাইরয়েডের সমস্যা যেমন পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে, তেমনি সন্তান হবার পর ও দেখা দিতে পারে সমস্যা। তাই সন্তান ধারনের পরিকল্পনা করার সময়েই থাইরয়েডকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এবার আসা যাক খাবারের ব্যাপারে। থাইরয়েড এর সমস্যা থাকলে প্রথমেই এড়িয়ে যেতে হবে জাঙ্ক ও প্রসেসড খাবার। খেতে ভালো লাগলেও এ খাবার বিষের সমান। প্যাকেট জাত খাবার, চিপস, কেক, ক্যান ভর্তি পানীয়ের মধ্যে কোনো পুষ্টি গুন থাকে না। কিন্তু এর মধ্যে থাকে প্রচুর চিনি ও নুন। থাইরয়েড সমস্যায় হজম ঠিক হয় না। তাই বাড়তি ক্যালোরি হজম করা সমস্যা তৈরি করে। আ্যলকোহল, কফি, গম, বার্লি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এতে গ্লুটেন থাকে যা থাইরয়েড সমস্যায় শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। গ্লুটেন মুক্ত খাবার রাগি খাওয়া যেতে পারে। বাধা কপি, ফুলকপি, ব্রকলি, সরষে, মূলো, রাঙা আলু, চিনে বাদাম এড়িয়ে চলাই ভালো। পনির, চিজ, চিনি, পাকা কলা, শুকনো ফল, মধু, ময়দার রুটি, সাদা ভাত, আলু মিষ্টি এগুলো কম খেতে হবে। আয়োডিন যুক্ত খাবার, সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ী, ফল আনাজ, আয়োডিন যুক্ত নুন, ডিম, মাংস এগুলো খেতে হবে।

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে থাইরয়েড এর সমস্যা থাকলে কি ডায়াবেটিস হতে পারে। হ্যাঁ হতে পারে। থাইরয়েড হরমোন রক্তে বেশি হলে বা কম হলে ইনসুলিনের সঙবেদনশীলতা কমে যায়। ফলে ডায়াবেটিস হতে পারে। যেহেতু হাইপোথাইরয়েডিজম হাইপারথাইরয়েডিজম থেকে বেশি হয় সেজন্য চিকিৎসকেরা ডায়াবেটিস এর সাথে হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসা করে থাকেন।

থাইরয়েড রোগ নির্ণয়ের জন্য যে পরীক্ষা গুলি করা হয়
১-T3, T4 TSH রক্ত পরীক্ষা করা হয়
২-থাইরয়েড গ্রন্হিরUSG করা হয়
৩-ইমিউনোগ্লোবিউলিন পরীক্ষা করা হয়
৪-থাইরয়েড স্টিমিউলেটিঙ পরীক্ষা করা হয়।
থাইরয়েড এর সমস্যা হলে প্রথমেই থাইরয়েড বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এবং ওনার পরামর্শ মতো চলাই বাঞ্ছনীয়। আজকের বিশেষ দিবসে এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করাই প্রধান কাজ হিসাবে বিবেচিত হোক।।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।