কলমের খোঁচা

বিশ্ব নদী দিবস


মিতা দত্ত:বিশেষ প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ: ২৫/০৯/২০২২:– “নদী, তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ ?” পিতার চিতাভস্ম নদীস্রোতে সমর্পণ করবার পর বিষন্নচিত্ত কিশোর নির্জন তটভূমিতে বসে এই প্রশ্ন করেছিলেন নদীকে। নদীর উৎসসন্ধানে পরে তিনি নন্দাদেবী, ত্রিশূল ইত্যাদি পর্বতশৃঙ্গে অভিযান করেছিলেন। সে অভিযানের অসামান্য কাব্যমন্ডিত ন্যারেশন আমরা ‘অব্যক্ত’ গ্রন্থে পাঠ করে রোমাঞ্চিত হয়েছি। সেদিনের সেই কিশোর জগদীশচন্দ্র বসু। জগদীশচন্দ্র বিজ্ঞানসাধক, তাই ঈশ্বরের অভিপ্রায় বর্ণনার ছলে তিনি আসলে বিজ্ঞানের কথাই বলেছিলেন। বলেছিলেন, নদী যেখান থেকে আসে, সেখানেই গিয়ে মেশে। নদীর এই চক্রপথ পরিক্রমণের কথা তিনি নিজস্ব বাকভঙ্গিমায় আমাদের শুনিয়েছিলেন। নদী যখন তার উৎস কোনো একটি গ্লেসিয়ার থেকে বেরিয়ে আসে নির্ঝররূপে, তখন সে শীর্ণকায়, অগভীর অথচ তীব্রগতি, সমতলে সে বিশালকায় অথচ মন্দগতি, সমুদ্রসকাশে তার গতি আরও মন্থর, এমনকি, জোয়ারের জলস্রোত নদীপথকে বিপরীতগামীও করে তোলে। তাই নদীর চেহারা বিচিত্র। নদী তার গর্ভের পলি থেকে জন্ম দেয় সবুজ ― পৃথিবীর সর্বাধিক জলধারা বহন করে লাতিন আমেরিকার যে নদী আমাজন, সে তার সুদীর্ঘ অববাহিকায় সৃষ্টি করেছে সবুজ অরণ্যানী। নদীর দাত্রীরূপ, ধাত্রীরূপ, সৌন্দর্যবাহিকারূপ আমরা দেখেছি, আবার বন্যায় সে ভয়ংকরী, খরায় সে কৃপণা ― তাই বলছিলাম, নদী বড়ই বিচিত্র, তাই সে এত জীবন্ত, এত চিত্তাকর্ষক।
আমার মনে হয়, নদী মানুষকে সংযোগের ভাষাও দান করেছে। সুদীর্ঘ যাত্রাপথে সে ‘নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধানে’র ভিন্নতাকে মিলিয়েছে, মিলিয়েছে এপার-ওপার একাকার করে। পাহাড়ের খবর পৌঁছে দিয়েছে সমতলে, সমতলের বার্তা পাঠিয়েছে সাগরসঙ্গমে। আসমুদ্রহিমাচল নদী মালায় সুতোর মতো গেঁথে রেখেছে মানুষের বিচিত্র জীবনপুষ্প।
নদী হোক অপ্রতিহতগতি, নদীর জয় হোক !

ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি ১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রবিবার বিশ্ব নদী দিবস হিসেবে পালন করে।যার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিলো বিসি রিভার্স ডে পালন দিয়ে। তারপর থেকে বিশ্বজুড়ে নদীদিবস পালন হয়ে আসছে।বিশ্বজুড়ে প্রকৃতির এই অপরুপা আক্রান্ত। বিশেষ করে পুঁজিবাদী ও সহযোগী দেশগুলো নদীকে নিজের মতো করে ব্যবহার করছে। ফলে নদী হারাচ্ছে তার নিজস্বতা।

আমাদের ভারতবর্ষে নদীগুলির অবস্থা করুন। বরফগলা জলে পুষ্ট হোক বা বর্ষার জলে পুষ্ট হোক। -সবই আক্রান্ত। অথচ আমরা জানি মনুষ্য সভ্যতা গড়ার পিছনে নদীর অবদানের কথা। কিন্তু বর্তমানে শিল্প কারখানার মালিকের বদ্যানতায় নদী হয়ে উঠেছে আর্বজনা ফেলার জায়গা। কারখানার নোংরা জল নদীতে গিয়ে পড়ছে। দূষিত হচ্ছে জল। জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে বর্ষার জলে সেই কীটনাশক গিয়ে নদীতে পড়ছে। জলের জীববৈচিত্র্য হারাতে বসেছে ।নদীতে শাসকের ইচ্ছেমতো বড়ো বড়ো জলাধার বসিয়ে নদীর স্বাভাবিক চলা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে অপরিনামদর্শিতার শিকার হচ্ছে একদিকে যেমন প্রকৃতি, অন্যদিকে প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ ।

নদীর নাব্যতা হারাচ্ছে। ফলে অল্প বন্যায় নদী ধাওয়া করছে তার উপকূলে। অথচ এমনটা হবার কথা নয়।।কিছু দিন প্রধানমন্ত্রী মন কি বাতে কতো কথা শোনা গেলো। কিন্তু সবই বাগাড়ম্বরে ।সমস্যা সমস্যা হয়েই থেকে গেল।
এখন সময় আছে নদীর নাব্যতা ফেরানোর পরিকল্পনা নেওয়া, নদীগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে পরিকল্পনার মাধ্যমে সেগুলিকে জুড়ে দেওয়া, নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা।কারখানার নোংরা জল নদীতে ফেলতে না দেওয়া।নদীকে নদীর মতো বইতে দেওয়া। সরকার নিজ উদ্যোগে একাজ করবে না। তাই নদী দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে ও নিজেদের নদীর পাড়ে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।