কলমের খোঁচা

আজ চে গুয়েভারার জন্মদিনে।


শাশ্বতী ঘোষাল: চিন্তন নিউজ:-১৪ই জুন:– চেতনায় যার বিপ্লবের অগ্নিগোলক, যিনি আজীবন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, বিশ্বের শোষিত, বঞ্চিত মানুষকে পথ দেখিয়েছেন নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সেই মুক্তির দূত চে গুয়েভারা -র আজ ৮৫ তম জন্মদিন। চিন্তনের পক্ষ থেকে আমরা এই কিংবদন্তী বিপ্লবী র প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।
১৯২৮ সালের ১৪ ই জুন আর্জেন্টিনায় তাঁর জন্ম। পাঁচ ভাইবোনের তিনি ছিলেন বড়। পুরো নাম ছিল আর্নেস্তো গুয়েভারা দে লা সের্ণা। তবে সারা বিশ্বে তিনি চে গুয়েভারা নামেই পরিচিত। শৈশব থেকেই সমাজের বঞ্চিত, অসহায়, দরিদ্রদের প্রতি এক ধরণের মমত্ববোধ তাঁর ভেতরে তৈরী হতে থাকে। তাঁর পিতা ছিলেন স্পেনের গৃহযুদ্ধে রিপাবলিকানদের একজন গোড়া সমর্থক। সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক ভাবধারার পরিবারে বেড়ে ওঠার কারণে রাজনীতি সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান লাভ করেন তিনি। তরুণ চে ডাক্তারির ছাত্র হিসাবে সমস্ত লাতিন আমেরিকা ভ্রমণ কালে ঐ সব অঞ্চলের সর্বব্যাপী দারিদ্র্য পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁর মনে গভীর ভাবে রেখাপাত করে এই সীমাহীন অর্থনৈতিক বৈষম্য । তিনি উপলব্ধি করেন একচেটিয়া পুঁজিবাদ ,নব্য ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদই এর মূল কারণ। আর এর সমাধান হলো বিশ্ব বিপ্লব। লাতিন আমেরিকার সমস্ত শোষিত, বঞ্চিত ও মুক্তকামী মানুষের জীবনে উজ্জ্বল ধ্রুবতারা চে বিপ্লবকেই সঙ্গী করে সারা লাতিন আমেরিকা ঘুরে বেড়ালেন। তিনি তখন ডাক্তারীর ছাত্র।
তিনি একাধারে ছিলেন চিকিৎসক ,মার্কসবাদী বিপ্লবী, লেখক, বুদ্ধিজীবী,কূটনীতিবিদ সামরিকতত্ববিদ, গেরিলা নেতা ,কিউবা বিপ্লবের প্রধান ব্যক্তিত্ব ও প্রাণপুরুষ। মৃত্যুর ৫০ বছর পরেও টাইমস পত্রিকায় বিংশ শতাব্দীর সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ১০০ জন ব্যক্তির তালিকায় রয়েছে তাঁর নাম।
তিনি অত্যন্ত সমাজ সচেতন মানুষ হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন ধনী দরিদ্রের ব্যবধান ধ্বংস করার জন্য বিপ্লব ছাড়া আর অন্য কোনো পথ নেই। তাই শুরু করেন মার্কসবাদ নিয়ে পড়াশোনা। সচক্ষে তার প্রয়োগ দেখার জন্য ভ্রমণ করেন গুয়াতেমালা। সেখানকার সমাজ সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে সেখানকার রাষ্ট্রপতি জাকোবা আরবেনজ গুজমান সি.আই. এ র ষড়যন্ত্রে ক্ষমতাচ্যূত হলে তাঁর বৈপ্লবিক চেতনা আরো দৃঢ় হয়ে ওঠে।
পরবর্তী কালে মেক্সিকো সিটিতে বসবাসের সময় রাউল ও ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। চে তাঁদের আন্দোলনে যোগ দান করেন। মার্কিন মদতপুষ্ট কিউবান এক নায়ক ফুল জেনসিও বাতিস্তাকে উৎখাত করার জন্য সমুদ্র পথে কিউবায় প্রবেশ করেন। খুব অল্প দিনেই তিনি ফিদেলের বিপ্লবী সংঘের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।
সারাজীবন চে শোষিত বঞ্চিত মানুষের জীবনে নতুন আশার আলো বপন করার কাজে তাঁর বৈপ্লবিক চেতনাকে কাজে লাগিয়েছেন। তাদের জীবনের অন্ধকার দূর করাই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত।
১৯৬৭ সালের অক্টোবর মাসে চে-র মৃত্যু সংবাদ জানতে পারে গোটা দুনিয়া। তাঁর আদর্শের মধ্য দিয়ে তিনি আজও জীবন্ত হয়ে আছেন বিশ্বের শোষিত সংগ্রামী মানুষের মধ্যে। আজ সমগ্র বিশ্বের শোষণ,বৈষম্য ও পরিবর্তনের প্রতীক হয়ে উঠেছে বিপ্লবের প্রাণপুরুষ চে গুয়েভারার ছবি ও আদর্শ।

চে র কিছু অবিস্মরণীয় উক্তি আমরা স্মরণ করে নিতে পারি এই প্রসঙ্গে :—
১. আমরা কিসের জন্য বাঁচব সেটা আমরা নিশ্চিত হতে পারি না যতক্ষণ না আমরা তার জন্য মরতে প্রস্তুত থাকি।
২.নতজানু হয়ে সারাজীবন বাঁচার চেয়ে আমি এখনই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত।
৩.বিপ্লবী হতে চাও বিপ্লবের প্রথম শর্ত শিক্ষিত হও।
৪. যখনি তুমি অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠো তখনি তুমি আমার সহযোদ্ধা।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।