চৈতালী নন্দী: চিন্তন নিউজ:১লা মে :– অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি ইউরোপে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়। এর আর্থসামাজিক দিক হোলো শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব, শ্রমিক সংঘের প্রতিষ্ঠা ও শ্রমিকদের সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলন। পুঁজিবাদী বিকাশের সেই প্রথম যুগে শ্রমিকদের কাজের জন্যে না ছিল নির্ধারিত সময়সূচি, না ছিল নূন্যতম মজুরির নিশ্চয়তা।শ্রমিকদের শ্রেণী চেতনা তৈরীতে বিলম্ব হবার কারন ছিল শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব। এছাড়াও ছিল মালিক শ্রেনীর পক্ষে থাকা আইনকানুন ও কিছু দমনমূলক আইন যা শ্রমিকদের সঙ্ঘবদ্ধ হবার পথে বাধা সৃষ্টি করেছিল।
মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের কয়লাখনির শ্রমিকরা প্রথম স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন শুরু করে অসংগঠিত ভাবে। তাদের প্রথমিক দাবী ছিল ১০ ঘন্টার শ্রম বেঁধে দেওয়া। এরই মধ্যে ১৮৭৫ সালে পেনসিলভানিয়ায় ১০ জন খনি শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিকদের অনধিক দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজের দাবিতে সংগঠিত শহরের কেন্দ্র স্থলে সভা সৈনিকদের দ্বারা বাধাপ্রপ্ত হয় ও বহু শ্রমিক আহত ও নিহত হয়। কিছু শ্রমিককে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। সেদিন শ্রমিকদের রক্তে ভেজা শার্ট ই হয়ে ওঠে শোষিত নিপীড়িত মানুষের লাল পতাকা।
১৮৮৮ সালে আমেরিকার ফেডারেশন অব লেবারের উদ্যোগে সেন্ট লুই শ্রমিক সম্মেলনে ৮ ঘন্টা কাজের দাবীতে ‘মে দিবস’পালনের ডাক দেওয়া হয়। ১৮৮৯ খ্রী দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নামে খ্যাত সমাজতন্ত্রীদের প্যারিস সম্মেলনে ১ মে তারিখটিকে দেশে দেশে শ্রমিক শ্রেণীর আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়।১৯০৪ সালে ৮ ঘন্টা কাজের সময় বেঁধে দেবার দাবিতে আমস্টারডাম শহরে মিছিল ও শোভাযাত্রায় মে মাসের ১ তারিখটিতে বাধ্যতামূলক ভাবে কাজ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।
১৮৮৬ সালে শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার রক্ষার যে লড়াই শুরু হয়, ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লব ,১৯৪৯ এ চীনের সমাজতন্ত্র স্থাপন, কিউবার (১৯৫৯) ও ভিয়েতনামের সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রম অধিকার রক্ষার আন্দোলন ক্রমান্বয়ে নতুন মাত্রা পেয়েছিল।
কিন্তু গত শতাব্দীর ৯০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবসানে এক মেরু বিশ্বে শ্রমিক আন্দোলন আজ নয়া চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। নয়া উদারবাদী ব্যবস্থায় এতদিনের অর্জিত অধিকার ক্রমেই সঙ্কুচিত হচ্ছে, প্রাপ্য অধিকার থেকে ক্রমান্বয়ে বঞ্চিত হচ্ছে শ্রমিকরা। কোভিড ১৯ প্রসূত সঙ্কট আজ একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, বাজারকেন্দ্রীক ব্যবস্থা নয়, সাধারণ মানুষের স্বার্থে রাষ্ট্রের কল্যাণকামী ভূমিকায় অপরিহার্য।