কলমের খোঁচা

“রাজনীতিতে স্বজনপোষণ” নিজস্ব কলমে


মৌমিতা হীরা: চিন্তন নিউজ:২৩শে জুন:- স্বজন পুষব। বেশ করব। আমার দুধের বাছাকে আমি দেখব না তো কে দেখবে? আমার ছেলেকে ছেড়ে কি পরের ছেলেকে সিংহাসনে বসাব? এটি আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিবারগুলির অকথিত বক্তব্য। মানে যেসব পরিবারের ছেলেমেয়েরা তাদের অন্যান্য পারিবারিক ব্যবসার সাথে সাথে রাজনীতিকেও একটা ব্যবসা হিসাবে ধরে নিয়েছে।

তা বেশ তো! নিজের পারিবারিক ব্যবসায় নিজের ছেলে মেয়ে বউমা জামাই ভাইপো ভাইঝি সবাইকে সিংহাসনে বসান। কারুর কিছু বলার অধিকার নেই, কিন্তু দেশসেবার নামে ব্যবসা চালালে আমাদের প্রতিবাদ করতেই হবে। আফ্টার অল আমাদের দেশের সম্পদ আমাদের সকলের সম্পদ। কোন পরিবারের সম্পদ নয়। আর দেশের সম্পদ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার, নেপটিজমের চক্বরে কোন অযোগ্য লোকের হাতে তো তুলে দেওয়া যায় না!

স্বজনদের প্রচার পাওয়ার সুবিধা জন্মগত। তাদের পদবীর কারণে সারাক্ষণ তারা স্পটলাইট এ থাকে। তাই পোলিং বুথে দাঁড়িয়ে এদের মুখ আমাদের মনে প্রথমেই ভেসে ওঠে। প্রচারের আলোহীন যোগ্য মানুষ যদি কেউ থেকেও থাকেন আমরা তার কোন খবর রাখি না। তবে আশার কথা আমাদের দেশের জনগণ বেশ সচেতন। অনেক সময়ই তারা অযোগ্য বংশপ্রদীপদের ছুড়ে ফেলে দেয়, দেশ চালানোর ভার দেয় না। নইলে এতদিনে আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিবারগুলি যা হালচাল তাতে আমাদের আবার সামন্ততান্ত্রিক যুগে ফিরে যেতে হতো। মন্ত্রীর ছেলে মন্ত্রী, সাংসদের ছেলে সাংসদ হয়ে সংসদ ভবন আলো করে বসে থাকত।

যেখানে আদর্শের জন্য নয়, পদবীর জন্য পরবর্তী প্রজন্ম রাজনীতির ময়দানে আসে সেখানে “ঘোটালা” তো হবেই। দেশের সম্পদ বিলিবন্টন হয়ে যাবে স্বজনদের বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে, দেশের কোন লাভ হবে না। পারিবারিক কোষাগার ফুলে-ফেঁপে উঠবে, ভারতের রাজকোষ নয়।

বিজ্ঞাপনের ফাঁদে, সোশ্যাল মিডিয়ার ফেক পোস্টে আর কোটি টাকায় ভাড়া করা পলিটিক্যাল স্ট্রাটেজিস্টের স্ট্রাটেজিতে ভুললে চলবে না। গনতন্ত্রকে সামন্ততন্ত্রে বদলে দিতে দেওয়া যাবে না। অনেক সময় বিজ্ঞাপনের ফাঁদে আমরা অযোগ্য লোককে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দিয়ে ফেলি আর পরে পস্তাই। বিজ্ঞাপনের কায়দায় নেহাৎ অযোগ্য মানুষকেও মহামানব মহামানবী বলে মনে হয়। আমরা খোঁজখবর নিয়ে দেখার চেষ্টা করি না যে তাদের সম্বন্ধে যে সব দাবি করা হচ্ছে সেগুলো কতটা সত্যি। চোখের সামনে পরিকল্পনা মাফিক যে খবর ভাসিয়ে দেওয়া হয় শুধু সেইটুকুই দেখি সেইটুকুই শুনি।

আমি যতটা অযোগ্য স্বঘোষিত নেতাও যদি ততটাই অযোগ্য হয় তাহলে আমি তাকে কেন ভোট দেবো ?যার অভিজ্ঞতা আছে, যোগ্যতা আছে সে আমার নেতা হবে। সে আমার ভোট পাবে। আমাদের দেশের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারগুলি কোথায় রাখা আছে জানেন? সংসদ ভবনে আর বিধানসভা গুলিতে। নেপটিজমের মাধ্যমে ভোটে দাঁড়ানো আর কোটি টাকা খরচ করে সেই ভোটে জেতা ওই চেয়ারগুলিতে বসার যোগ্যতা হতে পারে না। তাহলে আমাদের দেশ পৃথিবীর সাথে প্রতিযোগিতায় প্রতিদিন পিছিয়ে পড়বে। আমরা পিছিয়ে পড়তে চাই না তাই অন্তত রাজনীতির ক্ষেত্রে স্বজন পোষণকে জিততে দেওয়া চলবে না।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।