মধুমিতা রায়: চিন্তন নিউজ:৮ই জুন:– আজ ৮ ই জুন, “বিশ্ব মহাসাগর দিবস ”। ১৯৯২ সালের এই দিনটিতে প্রথম আন্তর্জাতিক মহাসাগর দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ব্রাজিলের রিও ডে জেনেরিওতে ধরিত্রী সম্মেলনের মাধ্যমে। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালের ৮ ই জুন প্রথম “বিশ্ব মহাসাগর দিবস “হিসেবে বিশ্ব জুড়ে পালন করা হয়।
এই বিপুলা পৃথিবীর তিনভাগ জল ও একভাগ মাত্র স্থল, এ আমরা সকলেই অবহিত। সারা পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে পাঁচটি মহাসাগর । যা আমাদের প্রাণকেন্দ্র। আজ ২০২১ এ সমুদ্র দিবসের থীম হলো , সমুদ্র: জীবন জীবিকা
আজ “ বিশ্ব মহাসাগর দিবসের প্রাসঙ্গিকতা কোথায় ? প্রাচীনকালে এই সমুদ্রের জলপথেই আমাদের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতো । পৃথিবীর আকৃতির ধারনা করতে নাবিক কলম্বাসকে বেছে নিতে হয়েছিল মহাসাগরের উপর দিয়ে জলপথ। ব্যবসা বাণিজ্য সবই এই মহাসাগরের বুকের উপর দিয়েই চলতো । কত শত রণতরীর ভেসে বেড়ানো দেখেছে সমুদ্র তার বুকের উপর দিয়েই। আজ ও একবিংশ শতাব্দীতে মহাসাগর সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে আমাদের মানব তথা জীব জগতেও । অতীতের ন্যায় বর্তমানেও আকাশ বা স্থলপথের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রপথ অত্যাবশ্যকীয় যাতায়াত বা ব্যবসা, বাণিজ্যিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সারা বিশ্বের প্রায় ৩০০ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ভাবেই এই সমুদ্রের ওপর নির্ভর করে তার জীবন জীবিকা নির্বাহ করে। এবং বিশ্বের প্রায় ৫০ – ৮০ শতাংশ জীব মহাসাগর , সাগরের গর্ভে বসবাস করে। এছাড়াও বর্তমান আধুনিক জীবন যাপন করতে , নিজেদের ভোগবিলাসের জন্য যত্রতত্র বৃক্ষনিধন করা হচ্ছে। এতে জীবজগতের অতি প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সংকট আজ একটি বড়ো সমস্যা। জেনে রাখা ভালো, পৃথিবীর মোট উৎপাদিত অক্সিজেনের ৭০ শতাংশ আসে মহাসাগরের গর্ভে তৈরী হওয়া অক্সিজেন থেকে। তাই সমুদ্রকে পৃথিবীর ফুসফুস নামে অভিহিত করা হয়। এছাড়াও সমুদ্র জলবায়ু পরিবর্তন রোধেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারন এই মহাসাগর গুলোই পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের একটি বড়ো অংশ দখল করে আছে। সূর্য থেকে পৃথিবীতে আসা ক্ষতিকারক বিভিন্ন রশ্মী পৃথিবীতে বিভিন্নভাবে তৈরী কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে দূষনের হাত থেকে রক্ষা করে। কিন্তু প্রকৃতির এই দান মানুষ ভুলে যায় বারবার।
বিজ্ঞানের দাক্ষিন্যে নিজেদের অর্থ সম্পদ বৃদ্ধি, ক্ষমতা দখলের জন্য সমুদ্রের উপর নানাবিধ কর্মকাণ্ড ঘটাই যা মহাসাগর গুলির পরিবেশ দূষিত করে। মাত্রা ছাড়া কার্বন ডাই অক্সাইড শোষনের ফলে সাগরের জল ক্রমশ অ্যাসিডিক হয়ে যাচ্ছে। তার ফলে সমুদ্রে থাকা মাছ ও প্রচুর সামুদ্রিক প্রাণী মারা যাচ্ছে। সমুদ্রের গভীরে থাকা উদ্ভিদ গুলো বিশ্বের ৭০ শতাংশ অক্সিজেন সরবরাহ করে। এছাড়াও সমুদ্র গর্ভে বিশ্বের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনূজীবগুলো বাস করে। এখানেই “গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ কোরালের বাসস্থান। বিশ্ব পরিসংখ্যান অনুযায়ী ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রার অব মেরিন স্পিসিস জানায় সারা পৃথিবীর সমুদ্র গুলিতে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৮৭৮ ধরনের সামুদ্রিক প্রানী আছে। যা মানবজাতির বিভিন্ন কার্যকলাপে আজ সংকটের মুখে এবং তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তা মানবজাতিরও সংকটের কারন।
মহাসাগরের পরিবেশ রক্ষায় মানুষকে আরো বেশী বেশী করে সচেতন হতে হবে। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্লাস্টিক মহাসাগরের পরিবেশ ভয়ঙ্কর ভাবে নষ্ট করছে। ইউনাইটেড ন্যাশনাল রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর প্রায় ৮ মিলিয়ন প্লাস্টিক সমুদ্রে নিক্ষেপিত হয় । পারমাণবিক বোমার নিস্ক্রিয়করনের জন্য মহাসাগরের মধ্যে যে প্রবল কম্পন ও রাসায়নিক পদার্থ নিষ্ক্রমণ হয় তার ফলে সমুদ্রের জল দূষিত হয়ে প্রচুর পরিমাণে মাছ, অনুজীবের ও পাখির মৃত্যু ঘটাচ্ছে। বিরল প্রজাতির জীবকূল বিলুপ্ত হতে চলেছে।
আজ মানুষ ভোগবিলাস, অর্থ উপার্জন, ক্ষমতা , লোভ লালসায় জর্জরিত পৃথিবীতে বাস করছে এবং প্রকৃতিকে নিজের খেয়ালে ব্যবহার করছে। তার ফলস্বরূপ ধ্বংস করছে নিজেদেরও । প্রকৃতিও তার প্রতিদান ফিরিয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাধ্যমে। প্রকৃতিও রূদ্ররূপ দেখিয়ে দিচ্ছে বিভিন্নভাবে ধ্বংসের মাধ্যমে, লক্ষ কোটি জীবনের বিনিময়ে। তাই সমাজ সচেতন মানুষ হিসেবে নিজেকে ও চারপাশের পরিবেশ রক্ষায় ৮ ই জুন “বিশ্ব মহাসাগর দিবস” পালন শুধু নয় , তৈরী করতে হবে সচেতনতা, রক্ষা করতে হবে মহাসাগরের পরিবেশ,মানব তথা জীবজগতের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায়।