দেশ

কেন্দ্র সরকারের বিলগ্নীকরন নীতিতে রেলের খেলার মাঠগুলিও রেহাই পেল না


বিশেষ প্রতিবেদন: মল্লিকা গাঙ্গুলী: চিন্তন নিউজ:৮ই জুন:– স্বামী বিবেকানন্দের মতে গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলা শ্রেষ্ঠ। রুশো, মন্টেসরি থেকে রবীন্দ্রনাথ, সমস্ত শিক্ষাবিদদের মতে শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশের জন্য আত্মিক শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গেই শারীর শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন, বরং বলা যায় সুস্থ শরীর না হ’লে সুস্থ মনন গড়ে ওঠে না। শরীর গঠনের মূল উপাদান খেলাধূলা। আধুনিক বিশ্বায়নে যন্ত্র দানবের গ্রাসে শিশুর শৈশব হারিয়ে যাচ্ছে বলেই খেলার মাঠও গুরুত্ব হারাচ্ছে, আর ভারতের সনাতনি খেলাগুলিও হারিয়ে যাচ্ছে।

তবুও আধুনিক বিশ্বে বানিজ্যিক বিপননের প্রয়োজনে ক্রিকেট, ফুটবলের মতো গুটিকয় খেলাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। সারাবছর এই খেলাগুলি যেমন মানুষের বিনোদনের মাধ্যম এবং সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু মানুষের জীবিকা বা পেশা হিসেবে যথেষ্ট গর্বের বিষয়।
বর্তমানে এই খেলাগুলি দেশের সীমা অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে উত্তীর্ণ। নিঃসন্দেহে এই উত্তরণের জন্য খেলোয়াড়দের যথার্থ অনুশীলন প্রয়োজন। শিশুর ক্রীড়া অনুশীলন ক্রমে যৌবনের চর্চা দেশকে সম্মানের শীর্ষে স্থান করে দেয়। এই অনুশীলন বা চর্চার জন্য প্রয়োজন হয় উপযুক্ত খেলার মাঠ বা স্টেডিয়াম। উচ্চমানের খেলোয়াড় তৈরির জন্য উপযুক্ত ও আধুনিক ক্রীড়াঙ্গন তৈরি হয়। পরাধীন ভারতবর্ষের ব্রিটিশ কু – শাসনের চরম দুর্দশার মধ্যেও ভারতের জন্য সুফল হিসেবে এসেছে রেল। রেলপথ ও রেলগাড়িকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা রেল শহরে তৈরি হয়েছে বহু বড় বড় স্টেডিয়াম। স্বাধীন দেশে সেই সমস্ত রেল স্টেডিয়াম থেকেই বিশ্বমানের খেলোয়াড় উঠে এসেছে, রেলমাঠ থেকে গড়ে ওঠা খেলোয়াড়রা আজ ও খেলার জগতে দেশকে সম্মানিত করে চলেছে।

সম্প্রতি দেশের বিজেপি সরকার “রেল ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি” নামক কর্পোরেট সংস্থার কাছে এক প্রকার নিঃশব্দে দেশের বড় বড় রেল অধিকৃত মাঠ ও স্টেডিয়ামগুলি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কলকাতা,পাটনা, ভুবনেশ্বর, চেন্নাই, গোরক্ষপুর বেঙ্গালুরুর মতো ১৫ টি দেশের খেলার মাঠগুলি বানিজ্যিক বিকাশের দোহাই দিয়ে কর্পোরেট কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার সংবাদ প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সমস্ত রেলকর্মীরা প্রতিবাদে সামিল হন। অল ইন্ডিয়া রেলওয়ে মেনস ফেডারেশন রেলবোর্ডের চেয়ারম্যান কে প্রতিবাদ পত্র পাঠিয়েছে। তাদের বক্তব্য, রেলের মাঠ রেলকর্মীদের পরিবারের জন্য তৈরি। রেলে কর্তব্যরত ক্রীড়াবিদরা এই মাঠে প্রশিক্ষণ নেয়। এমনকি রেলকর্মীদের ছেলেমেয়েরা এখান থেকেই খেলা শিখে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত খেলোয়াড় তৈরি হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করে।

এ, আই, আর, এফ, এর সাধারণ সম্পাদক শিব গোপাল মিশ্র রেল বোর্ডের চেয়ারম্যানকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন যে, দেশের ১৫ টি জোনের গুরুত্বপূর্ণ রেল মাঠ বা স্টেডিয়াম আছে তা কেন্দ্র সরকার ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের হাতে তুলে দিতে পারে না। তিনি এও জানান, গত ২০১৬ সালের অলিম্পিকের ৩৫জন ভারতীয় খেলোয়াড় রেল মাঠ থেকেই প্রশিক্ষিত হন। ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন টেনিস থেকে সাঁতার বা কুস্তী সব ক্ষেত্রেই রেল খেলোয়াড়রা পারদর্শিতা দেখিয়েছেন । কাজেই দেশের গর্বের মাঠ বা স্টেডিয়াম গুলি বিক্রি করে মোদি সরকার দেশের মর্যাদা ক্ষুন্ন করতে পারেন না।

রেল কর্মী ইউনিয়ন নিজেদের সম্পত্তি রক্ষার জন্য তাদের মতো করে বিরোধিতা করলেও দেশের জনগণের ও এই বিরোধিতায় এগিয়ে আসা উচিত। বর্ষাধিক কাল ভয়াবহ করোনা মহামারীতে দেশবাসী যখন বিপর্যস্ত, সেই সুযোগ নিয়ে কোনও রকম গনতান্ত্রিক আলোচনা না করেই জাতীয় সম্পত্তি বিক্রির চক্রান্ত গ্রহণযোগ্য নয়। এর আগে মোদী সরকার ঐতিহ্যপূর্ণ ট্রেনগুলি বেসরকারিকরণ করে এখন রেলের স্টেডিয়াম বিক্রির মত অনৈতিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ।

অতীত ভারতবর্ষের সমস্ত ঐতিহ্য ভূলুন্ঠিত, এখন রেল মাঠের মাধ্যমে ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিশ্ব দরবারে দেশের মাথা তুলে দাঁড়ানোর পথটুকুও বন্ধ করে দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। সাম্প্রদায়িক, অর্থলোভী, দেশ বিরোধী বিজেপি সরকার বিলগ্নী করণের নামে দেশ বিক্রির যে নীতি গ্রহণ করেছে তা আগামী প্রজন্মের পক্ষে ভয়ঙ্কর কুফলদায়ক। রাজনৈতিক চিন্তাশীল ব্যক্তিদের মতে গনতান্ত্রিক দেশের সরকারের যে কোনো ধরনের অনৈতিক জনবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার অধিকার জনগণের আছে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।