একটি বিশেষ প্রতিবেদন: ডাক্তার স্বপ্না চট্টরাজ: চিন্তন নিউজ:৮ই জঙন:– আজ বিশ্ব ব্রেন টিউমার দিবস। মারাত্মক এ রোগ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়ানো, আক্রান্ত রোগীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে দিনটি আন্তর্জাতিক ভাবে পালন করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে প্রতি বছর ২লক্ষ ৬০-হাজার মানুষ ব্রেন টিউমার এ আক্রান্ত হন। আমাদের দেশে সংখ্যাটা বছরে ৪০-৫০হাজার। মস্তিষ্কের কোনো বিশেষ অঞ্চলের কোষ যখন অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়ে যায় তখন তাকে ব্রেন টিউমার বলা হয়। মারাত্মক এ রোগে যে কোনো সময়ে যে কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে। তবে ৬বছর- ৯বছর বয়সী শিশুদের ও ৪৫বছরের পর বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক।
ব্রেন টিউমার দুরকমের হয়।
১-বিনাইন(Benign) -যা আস্তে আস্তে বাড়ে এবং অতটা প্রাণঘাতী নয়।
২-ম্যালিগন্যান্ট(Malignant) -খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে, ক্যান্সার ও প্রাণঘাতী।
ব্রেন টিউমার কে দুভাগে ভাগ করা হয়
১- প্রাইমারি টিউমার (Primary tumour): এদের সূত্রপাত – এটা মস্তিষ্কের ভিতরেই হয়। যেমন- মেনিনজেস (Meninges), নার্ভ সীধ(Nerve sheath) বা সেরিব্রাল সাবস্টেন্স (Cerebral substance) । এছাড়াও পিটুইটারি গ্ল্যান্ড (Pituitary gland) এ টিউমার হতে পারে। ব্লাড ক্লট,ক্রণিক ফোড়া (Blood clot, Chronic abscess )অনেক দিন থাকলেও সেখান থেকে টিউমার হবার সম্ভাবনা থাকে।
২- সেকেন্ডারি টিউমার (Secondary tumour-) এদের সূত্রপাত সাধারণত শরীরের অন্য কোনো স্থানের টিউমার থেকে। যা ছড়িয়ে গিয়ে ব্রেন টিউমার তৈরি করে। ফুসফুস ক্যান্সারের থেকে ছড়িয়ে ব্রেনে টিউমারের হার সবচেয়ে বেশি হয়। ব্রেষ্ট ক্যান্সার, জরায়ুর ক্যান্সার থেকে ও ব্রেন টিউমার হয়ে থাকে। যেহেতু এটি ম্যালিগন্যান্ট, সেহেতু কোষ বৃদ্ধির হার বেশি হয়।
কি কি লক্ষন দেখলে আমরা বুঝতে পারবো ব্রেন টিউমার হয়েছে (Clinical feature of Brain tumour)
প্রথম দিকে সাধারণত কোনো লক্ষন পাওয়া যায় না (Silent Period) । টিউমারের position ও টিউমারের বৃদ্ধির ( Rate of growth) উপরে নির্ভর করে রোগীর লক্ষনগুলো। যদি টিউমারটি ব্রেনের এমন কোনো area তে হয় যেখানে কোনো disturbance নেই, সেখানে কোনো Symptoms বা Sign পাওয়া যায় না। কিন্তু Intracranial Pressure পরলে Symptoms বা Sign পাওয়া যায়।
১-দীর্ঘ মেয়াদী মাথা ব্যথা। এক্ষেত্রে ঘুম থেকে ওঠার পর তীব্র মাথার যন্ত্রনা শুরু হয়।
২-খিচুনি হয় -জ্বর বা অন্য কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ হঠাৎ কাপুনি শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর নিজের থেকেই কমে যায়।
৩-অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
৪-বমি বমি ভাব(Nausea)
৫-বমি হওয়া(Vomiting)
৬-দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়
৭-কথা জড়িয়ে যায়।
৮-কথা বলতে অসুবিধা হয়।
৯-আচরনগত কিছু পরিবর্তন। যেমন-চেনা মানুষকে অচেনা মনে হয়।
১০-ঢোক গিলতে ও খাবার খেতে অসুবিধা হয়।
১১-গন্ধের বোধ চলে যায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ইয়ার ফোন বেশি ব্যবহার করলে এবং মোবাইল টাওয়ার থেকে রেডিয়েশনের ফলে ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও নিয়মিত শরীর চর্চা করে ব্রেন টিউমার কিছুটা হলেও ঠেকানো যায়। তবে কোনোরকম সন্দেহ হলেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব।
ব্রেন টিউমার হলে কি করনীয়?
ব্রেন টিউমার শব্দটি কানে এলেই ভয়ে আমরা শিউরে উঠি। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় আমরা অনেক সময় চিকিৎসার ব্যাপারে গা ছাড়া ভাব দেখাই। মাথা থাকলে মাথা ব্যথা হবে, হজম হয় নি তাই বমি বমি ভাব লাগছে বা চোখে অন্ধকার দেখাকে প্রথম দিকে অবহেলা করা হয় বা ওষুধের দোকান থেকে বলে ওষুধ কিনে খাওয়া হয়। এসব না করে প্রথমেই কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক রোগী দেখার পর কিছু পর্যবেক্ষণ (Investigation) এর মাধ্যমে জানতে পারবেন কি হতে চলেছে এবং পরবর্তীতে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে উক্ত রোগীকে পাঠাবেন। উপযুক্ত চিকিৎসার সাহায্য নিয়ে ব্রেন টিউমারের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া খুব কঠিন নয়। তবে টিউমার যদি ক্যান্সার যুক্ত হয় তবে চিন্তা থেকেই যায়।প্রথম ধাপেই (lst Stage)এ রোগ শনাক্ত করে সার্জারি (surgery) র মাধ্যমে টিউমার বাদ দিয়ে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেওয়া যায়। আবার রেডিও সার্জারির মাধ্যমে টিউমারকে ছোটো করে তার কার্যক্ষমতা নষ্ট করা হয়।