দেশ বিদেশ

ইংল্যান্ড এ বসে মনিপুর নিজেদের ভারত থেকে স্বাধীন ঘোষণা করল!


মল্লিকা গাঙ্গুলি:চিন্তন নিউজ:১লা নভেম্বর:–মনিপুর নিজেদের ভারত থেকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করল!

সুদীর্ঘ দুশো বছরের পরাধীন ভারতবর্ষ বহু জীবন ধন প্রাণক্ষয় করে অভাবনীয় ত্যাগের বিনিময়ে ভারতবাসী দুর্ধর্ষ ইংরেজের হাত থেকে যে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল সেই স্বাধীনতাও নিরঙ্কুশ হয়নি! ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা নামক লাল গোলাপটির সাথে অনেক কাঁটা সেদিন রেখে দেওয়া হয়েছিল বলেই অতি সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ধারা প্রয়োগ আর তার প্রভাব নাগাল্যান্ড মণিপুরে ইত্যাদি স্বশাসিত রাজ্যগুলির উপর বহুল ভাবে পড়েছে! প্রকৃষ্ট প্রমাণ ইংল্যান্ডের মাটিতে মণিপুরের স্বাধীনতা ঘোষণা।

ভারতের স্বাধীনতার প্রাক মুহুর্ত ফিরে দেখলে দেখা যাবে নাগাল্যান্ড মণিপুরে পন্ডিচেরি ইত্যাদি বেশ কিছু অঞ্চল ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট সদ্য স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। বিশেষ করে ১৯৪৭এর ১৪ই আগস্ট ব্রিটিশ সরকার মণিপুরে রাজার হাতে মণিপুরের শাসনভার তুলে দিয়ে ১৫ই আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। পাকিস্তানের মতোই মণিপুর ও ১৯৪৭ এর ১৪ই আগস্ট একটি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত হয়। পরবর্তী কালে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজনে মণিপুর ১৯৪৯ সালে ভারতভুক্ত হয়। ভারত ভুক্ত হলেও প্রথম থেকেই ভারত সরকার মণিপুরকে যেমন কিছু বাড়তি সুবিধা দেয় মণিপুর ও তেমনি নিজেদের স্বাধীন সত্ত্বা বজায় রাখতে তৎপর ছিল। বলা যেতে পারে কাশ্মীর প্রসঙ্গ মণিপুর বাসীকে আবার একবার মাথাচাড়া দিতে ইন্ধন জুগিয়েছে।

অতি সম্প্রতি কোন পূর্ব সূচনা ছাড়াই ইংল্যান্ডের লন্ডন শহর থেকে মণিপুর রাজ্য পরিষদের মুখ্যমন্ত্রী ইয়ামবেন বিরেন এবং বিদেশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নারেংবং সামারজিত ঘোষণা করেন- তারা অর্থাৎ মণিপুর রাজ্য ভারত থেকে বেরিয়ে পৃথক রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়! মণিপুরের এই দুই বিশিষ্ট নেতা তাদের মহারাজা সানজাওবার পক্ষ থেকেই স্বাধীন মণিপুর ঘোষণা করছেন বলে জানান। মণিপুরের তরফে তারা ব্রিটেনের বর্তমান রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে দরবার করেছেন যাতে রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বীকৃতি পেতে রানী সাহায্য করেন! মণিপুরের নেতারা ইংল্যান্ডে এক সাংবাদিক বৈঠক করে নিজেদের “মণিপুর স্টেট কাউন্সিল” এর নেতা বলে ঘোষণা করেন। অবিলম্বে পৃথক মণিপুর প্রশাসনের ডাক দেন মন্ত্রী বিরেন এবং সামারজিত! এই দুই বলিষ্ঠ নেতা নিজেদের দাবির সমর্থনে ২০১৯ সালের আগস্ট মাস থেকেই ব্রিটেনের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাশি বলে তাদের নথি প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন। তাঁরা বলতে চান যদিও তারা দুজন প্রতিনিধি হিসাবে ইংল্যান্ডে উপস্থিত হয়েছেন কিন্তু মণিপুরের ৩০লক্ষ মানুষই আর ভারতের অধীনে থাকতে চায় না।

মণিপুরীরা ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন মণিপুর গঠন করতে আগ্রহী। মণিপুর প্রশাসনের দুই কর্ণধার বলিষ্ঠ ভাষায় বলেন ভারতীয় সেনারা যথেচ্ছ ভাবে মণিপুরের মানুষের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে, তাঁরা এই আশঙ্কা ও প্রকাশ করেন যে, তাঁদের এই বিদ্রোহী মনোভাবের জন্য হয়তো দেশে ফিরলে তাদের জীবন সংশয় হবে তাদের হত্যা করাও হতে পারে! এমন কি এ যাবৎ মণিপুরে ১৫১৮ টি হত্যা মামলার যেমন কোনো নিষ্পত্তি হয়নি তেমনি তাদের হত্যা মামলার ও কোনো কিনারা হবে না বলেও তাদের তীব্র অভিযোগ! মন্ত্রীরা তাদের বক্তব্যের সমর্থনে গোটা বিষয়টির এন আই এ (NIA) তদন্তের দাবি ও তোলেন। এতদসত্ত্বেও নেতৃদ্বয় তাদের জীবনের মূল্যে মণিপুর বাসীকে ভারতীয় সেনার কবল মুক্ত এক স্বাধীন স্বকীয় মণিপুর উপহার দিতে চান।

আন্তজার্তিক মঞ্চে এ রকম একটি অভাবনীয় প্রস্তাব বিশ্ববাসীকে চমৎকৃত করেছে! এমন কি মণিপুর রাজ নিজেও অবাক! তিনি জানিয়েছেন তাঁর নামে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা হলেও তিনি তার মন্ত্রি পরিষদকে এমন নির্দেশ দেন নি। এমনকি লন্ডনের মাটিতে এমন ঘোষণা হতে পারে বলে ও তাঁর জানা ছিল না। মণিপুর রাজ্য পরিষদের তরফে এই ঘোষণা হলেও বিদেশমন্ত্রক সুত্রে ও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি। ভারতীয় দূতাবাস ও পুরো বিষয়টি জানার পর মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে।

মণিপুর নেতৃত্বের এমন জোরালো ঘোষণা নিঃসন্দেহে ভারত বিদ্রোহী মনোভাবের পরিচয়। মণিপুরের আচম্বিত এই বিক্ষোভে হতবাক ভারতীয় দূতাবাস সাময়িক চুপ থাকলেও মণিপুরের অভ্যুত্থান ভারতের আর এক নতুন অশান্তির আগুনের পূর্বাভাস। জম্মু ও কাশ্মীর ইস্যু যে কেবল কাশ্মীরে সীমাবদ্ধ নয় সীমান্তবর্তী রাজ্য বিশেষ করে বিতর্কিত রাজ্য গুলির ক্ষেত্রে ৩৭০ধারা যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে এটা বুঝে নিতে অসুবিধা নেই। রাজনৈতিক মহলের মতে এই ভাবে ভারতের একটা একটা ক’রে রাজ্য পৃথক সত্ত্বা ঘোষণা করতে থাকলে ভারতভূমি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুর্বল রাষ্ট্র বলে চিহ্নিত হয়ে পড়বে। বিজেপির সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ফলেই অখণ্ড ভারতের ঐতিহ্য বিঘ্নিত। এখন দেখার বিষয় বর্তমান ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কিভাবে মণিপুর সমস্যা সমাধান করে!!


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।