দেশ

কাশ্মীর কেমন আছে :দ্বিতীয় পর্ব


কল্পনা গুপ্ত,চিন্তন এর বিশেষ প্রতিবেদন :- ১২/৪/২৪
শ্রীনগর থেকে পহেলগামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পথ ক্রমশ উঁচুতে উঠতে থাকলো। পাইন গাছের সারি পাহাড়ের ঢাল বেয়ে অপূর্ব দৃশ্য রচনা করেছে। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে লিডার নদী। রাজধানী শহরের জৌলুস ছেড়ে এবারে প্রবেশ করলাম কাশ্মীরের গ্রামে। অর্থনৈতিক অবস্থার আসল চিত্র ধরা পড়ে গ্রামে গেলে। যেতে যেতে গার্লস, বয়েস পৃথক স্কুল চোখে পড়লো। মেয়েরা স্কুলে চলেছে হিজাব পরে। এখানে রাস্তাঘাটে মেয়েদের চোখে পরে খুব কম। বৃহৎ কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের উপস্থিতি খুবই কম। আমার স্বপ্নের লিডার নদীকে দেখে আমি হতাশ হলাম। নদীর চারিপাশ অপরিচ্ছন্ন। উদাসিন মানুষগুলো নিজেদের দিন গুজরানের সংগ্রামেই ব্যস্ত। এখানকার হোটেলগুলোতেও আছে নানান অসুবিধা। দীর্ঘক্ষণের জন্য ভয়ঙ্কর লোডশেডিং। এই সমস্যা সারা কাশ্মীর জুড়েই আছে। ব্যবসায়ী শ্রেণীর মানুষেরা আছে যারা খুবই ধনী। কিন্তু জনসমষ্ঠির বেশিরভাগ মানুষই অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া, নানান সমস্যায় জর্জরিত। প্রধানত পর্যটনকে কেন্দ্র করেই বেঁচে থাকা। গ্রামের দিকে তার পরিমাণও কম। ঘোড়ায় চড়ে ভ্রমণের ইচ্ছা থাকলেও অত্যন্ত কৃশ ও নোংরা ঘোড়াগুলো সে ইচ্ছা থেকে বিরত করে। চারিদিকে কেমন একটা হতশ্রী ভাব মনকে দমিয়ে দেয়। এখানে কয়েকটা শাল ফ্যাক্টরি দেখলাম। কিছু গ্রামীণ দোকানে বিক্রি হলেও কেনার লোক কম। এগুলিই শহরে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। একটা ছোট্ট মার্কেট আছে।

আমাদের হোটেলের মালিকের সাথে আলাপচারিতায় জানলাম কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা। যেমন- ৩৭০ ধারা বাতিলের পরেও যে সময়টা পেরিয়ে গেছে তাতে কোন উন্নয়ন হয়নি। এর বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ আছে।
স্বাস্থ্য পরিষেবা খুবই খারাপ। পহেলগামে একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে, প্রয়োজনে ৪৪ কিমি দূরে অনন্তনাগে যেতে হয় পাহাড়ি ভয়ানক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে। অথবা সেই শ্রীনগরে যেতে হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু ঘটে। মেডিসিন একেবারে ভেজালপূর্ণ। দিনের পর দিন খেয়েও কোন কাজ হয় না। কোন বিখ্যাত ওষুধ কোম্পানি এখানে নেই। আমরাও মাইলের পর মেইল ট্রাভেল করতে থেকে দেখেছি সহজে কোন ওষুধের দোকান বা ডাক্তারখানা নেই।

শিক্ষাক্ষেত্রেও একই চিত্র। স্থানীয় স্কুলের পাঠ শেষ করে কলেজে পড়তে গেলে ৪৪ কিমি দূরে অনন্তনাগে যাওয়া আসা করতে হয়। ফলে উচ্চশিক্ষা লাভের ইচ্ছা থাকলেও তা অর্জন করতে অনেকেই পারেনা। জীবন জীবিকার বৈচিত্রের একান্ত অভাব। এই চিত্র শুধু পহেলগামে নয় কাশ্মীরের অন্যান্য গ্রামগুলিতেও আছে। যাঁর সাথে কথা বলছিলাম তিনি বললেন, এখানে বিজেপি এইসব কারণেই কোন জায়গা করতে পারবে না। এখানে অর্থাৎ জম্মু কাশ্মীরে। তিনি আরো বললেন, বিদ্যুৎ থাকে না অথচ ভয়ানক বিদ্যুৎ বিল মেটাতে হয়, জলকরও অনেক বেশি দিতে হয়। নির্বাচনের আগে এখানে এসে একটা ছোটখাটো সমীক্ষা হয়ে গেলো। এখন দেখা যাক, রাম জাগে না ভূত জাগে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।