জেলা

সফদর মরে না –


মিতা দত্ত,বিশেষ প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ: ১২/০৪/২০২৪:– প্রতিটি লড়াইয়ের ময়দানে বারেবারে উচ্চারিত নাম সফদর হাশমি।উত্তর ভারতের সফদর যেন বাংলার সুকান্ত। আজকের দিনে মাতৃ জঠর থেকে পৃথিবীর। আলো দেখেছিলো সফদার। বেড়ে ওঠা মার্কসবাদে নিবেদিত পরিবারে। সফদর হাশমি র কাকা স্বাধীনতা উত্তর সময়ে পাকিস্তানে কমিউনিস্ট পার্টির দায়িত্ব নিয়ে থেকে গেছিলেন। সেই সময় পাকিস্তানে গণতান্ত্ৰিক আবহাওয়া ছিলো না। সেই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানে কমিউনিস্ট পার্টির দায়িত্ব নেওয়ার মধ্য দিয়ে পারিবারিক পরিচয় সহজেই উপলব্ধ হয়।
এইরকম একটি পারিবারিক পরিমন্ডলে বড়ো হওয়ায় তিনি মাকর্সবাদী হয়ে ওঠেন।জেএনইউ থেকে ইংরেজী সাহিত্যে এমএ পাশ করে প্রথমে গারোয়াল ইউনিভার্সিটি ও জম্মু ইউনির্ভারসিটিতে অধ্যাপনা করেন। শুধু অধ্যপনার জীবন কাটাতে তিনি চাননি। তাই দিল্লীতে এসে দিল্লী পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করে সর্বক্ষণের কর্মী হয়ে নতুন জীবনে প্রবেশ করেন। ইংরেজি,হিন্দি, উর্দু ও বাংলা -সব ভাষাতেই উনি সাবলীল ছিলেন। তাই বাংলার সাথে উত্তরভারতের সাংস্কৃতিক জগতের তিনি সেতু রচনা করেছিলেন। বামপন্থী সাংস্কৃতিক কর্মী হওয়ায় আইপিটিএ (IpTA)র সঙ্গে নিবিড় সংযোগ গড়ে ওঠে।

এইসময় তাঁর জীবনকে আলোকিত করে আসে তাঁর সহধর্মিনী। দুইজনেই যেন দুইজনের পরিপূরক হয়ে ওঠেন । তিনি ছিলেন সাধাসিধে, প্রাণচাঞ্চল্য ভরপুর । তাঁর উপল‌দ্ধিতে শ্রমিকশ্রেণিকে জাগাতে হলে একদিকে তাদের আপনজন হতে হবে, অপরদিকে পথনাটিকার মধ্য দিয়ে তাদের কথা তুলে ধরতে হবে। খাঁকি প্যান্ট ও ফতুয়া পরে শ্রমিক মহল্লা সহ বিভিন্ন জায়গায় পথনাটিকা করে বেড়াতেন ।অসম্ভব পরিশ্রমী, সদাহাস্যময় মানুষটি খুব দ্রুত শ্রমিকের মন জয় করতে সক্ষম হন। শ্রমিকদের পরিবারেও ছিলো অনায়াস যাতায়াত।অকুতোভয় মানুষটি যাতায়াতের ওপর কোনো আগল টানতেন না। জনম নামে একটি দল গঠন করে এলাকার পর এলাকার পথনাটিকার মধ্য দিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির মুখোশ উন্মোচন করতেন। এভাবেই তিনি শ্রমিকের প্রাণের জন হয়ে যান। ফলত প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির কুনজরে পড়ে তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা হয়।

সময়টা শীতকাল ২রা জানুয়ারি। তিনি তাঁর নাটকের দল নিয়ে গাজিয়াবাদে তার সৃষ্টি হল্লাবোল পথনাটিকা করছিলেন। প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি নাটিকা চলাকালীন তাদের আক্রমণ করে। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় সে এক দুঃসহ পরিস্থিতি। সেই আক্রমণে দলের অন্যেরা প্রাণ রক্ষা পেলেও সফদরের ৩৫ বছরের সংগ্রামী জীবন নিভে গেল। জ্বলে উঠলো হৃদয়ে হৃদয়ে। তাই তো তাঁর শেষযাত্রায় জনস্রোত বয়ে গেছে – যা আজও প্রবহমান।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।