মধুমিতা ঘোষ: বিশেষ প্রতিবেদন:চিন্তন নিউজ: ১৫/০৪/২০২৪:– লোকসভা ভোটের জন্য বিজেপি মোদি সরকারের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করে এক লক্ষ পঁয়ষট্টি কোটি টাকা নিয়ে নেওয়ায় আর বি আই এর লাভজনক টাকার পরিমান একলাফে তিরিশ হাজার কোটিতে নেমে এলো। শুধুমাত্র ব্যাংকগুলো নয় রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার এইরকম দেউলিয়া দশা সমগ্র ভারতের অর্থনীতির ওপরে যেন এক বিপদ সংকেতের পূর্ণ ঘন্টাধ্বনি।
এই সরকারের আমলে সাধারণ মানুষ কিন্তু ভয়াবহ এই অর্থ সংকট কেন এবং কিভাবে এই সব প্রশ্ন করার চেয়ে বিশেষ বিশেষ ধর্মান্ধতায় বিভোর হয়ে আছে। সরকারের লাভ এটাই। সাধারণ মানুষকে ধর্মের কুসংস্কারের পাচন গিলিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো দেশের টাকা নয় ছয় করা যায়। সাধারণ মানুষ এমনকি এটাও জানে না যে মোদি সরকার আসার আগে ২০১৪ সালের আগে পর্যন্ত কোন সরকার ব্যাংকের পুরো লাভজনক আমানত নিয়ে নিতে পারত না। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় তখনকার ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রিজার্ভ ব্যাংকে পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকার পরিবর্তে ৭০ হাজার কোটি টাকা নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ওই সময় ব্যাংক ওই পরিমাণ অর্থ দিতে অস্বীকার করলে ইন্দিরা গান্ধীর সরকার ব্যাংকের সেই মতামত গ্রহণ করে। আর ২০১৮ তে লোভী মোদি সরকার রিজার্ভ ব্যাংকের সমস্ত লাভজনক আয় নিয়ে নিতে চাইলে রিজার্ভ ব্যাংকের তখনকার গভর্নর উরজিত প্যাটেল সবিনয়ে কারণ দেখিয়ে সব টাকা না দিতে পারার অক্ষমতা জানালে উরজিতকে রেজিগনেশন দিতে বাধ্য করা হয়। পরবর্তীতে মোদি সরকার অবশ্যই তার সুবিধামতো ৬ সদস্যের কমিটি তৈরি করেন লোক দেখানো রিজার্ভ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর বিমল জালানের তত্ত্বাবধানে। এরপরের চিত্রনাট্য তো জলের মতো পরিষ্কার- ধাপে ধাপে এই জনদরদী সরকার (পড়ুন পুঁজিপতি ও স্বার্থলোভীদের সরকার) কর্পোরেটস ও কম্পানি গুলোর স্বার্থে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নিয়ম-কানুন (ডিভিডেন্ট ও লোনের বিষয়ে) ৩২৩-২৭ নিয়মাবলী আমূল পরিবর্তন করে ব্যাংকগুলোকে পথে বসায়। এর ফলে গত তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে 50000 কোম্পানি লোন শোধ করতে না পারায় দেউলিয়া ঘোষণা করে, যার ফলে ব্যাংকও ডুবতে থাকে। এদিকে আবার ৭০০০০ নতুন কোম্পানি ব্যাংকের লোনে গজিয়ে ওঠে। এটাই বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিকভাবে দেশকে চাঙ্গা করার সরকারি পলিসি!”লক্ষী বিলাস ব্যাংক” সিঙ্গাপুর ব্যাংকের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে, ইয়েস ব্যাঙ্ক, ডি এইচ এফ এল ধুঁকছে এবং আরও দুটো ব্যাংক প্রাইভেটের হাতে চলে গেছে! এই কঠিন সংকটাপন্ন সময়ে দেশের মানুষ কুতুব মিনার বিষ্ণু স্তম্ভ হলো কিনা বা জ্ঞানব্যাপীতে শিবলিঙ্গ হল কিনা সেসব অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে মাথা ঘামিয়ে চলেছে। এই সরকার দেশকে কোথায় নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে উদাসীন দেশের মানুষ।
সংবিধানে নিয়ম আছে যে পরপর চার মাস যদি মুদ্রাস্ফীতির হার বাড়তে থাকে তাহলে সরকার ব্যাংকে এর কারণ দর্শানোর কথা বলতে পারে এবং রিজার্ভ ব্যাংকেও সরকারকে যথাযথ উত্তর দিতে হবে। কিন্তু গত ৬ মাস মুদ্রাস্ফীতির হার বাড়তে থাকলেও মোদি সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাংকের মধ্যে ওই ধরনের কোন কথোপকথন হয়নি এমনকি পার্লামেন্ট ও এই ধরনের আলোচনা থেকে বিরত ছিল। কার স্বার্থে সরকারের এত গোপনীয়তা? আর বি আই বোর্ড তো সরকারেরই আর গভর্নর প্যাটেল তো প্রতিবাদী হয়ে প্রাক্তন ই হয়ে গেছেন।
২০০৬ থেকে ১৪ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সরকার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে শুধুমাত্র এক লক্ষ্য কোটি টাকা নিয়েছিল যেখানে ২০১৪ থেকে ২০২২ নরেন্দ্র মোদিজির সরকার এর প্রায় পাঁচ গুণ টাকা অর্থাৎ ৬ লক্ষ কোটি টাকা নিয়েছে।
একেই বলে রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে কৌশলে দুর্নীতিকে সর্বজন গ্রাহ্য করে তোলা।
দেশের অর্থনীতি গভীর সংকটে। মানুষ সেটা বুঝতে বুঝতে বড়ই দেরি হয়ে যাচ্ছে।