কলমের খোঁচা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বনাম ট্রাম্প


কাকলি চ্যাটার্জি: চিন্তন নিউজ:১৮ই এপ্রিল:– মারণক্ষমতা অত্যন্ত কম কিন্তু সংক্রমণ ক্ষমতা মারাত্মক—বিশ্বব্যাপী মহামারী কোভিড১৯ আধুনিক মানুষের জীবন তথা সমগ্ৰ বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। শেয়ার বাজারের সর্বোচ্চ পতন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম আজ তলানিতে ঠেকেছে। উন্নত প্রথম বিশ্বের পুঁজিবাদী রাষ্ট্র আমেরিকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কঙ্কালসার চেহারা হতবাক করেছে মানুষকে।

মার্কিন মুলুকে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৩১০০০ অতিক্রান্ত, প্রতি ঘন্টায় মৃত্যু ৮৫ জনেরও বেশি, আক্রান্ত ছয় লক্ষেরও অধিক। নির্লজ্জ প্রশাসক ট্রাম্প দেশবাসীর কথা ভাবা দূরে সরিয়ে চাঁদে খননকার্যের চুক্তিতে সই করতে ব্যস্ত। একদিনে ২০০০ জনেরও বেশি মারা গেছেন, নিউইয়র্কে মৃত্যুর সংখ্যা সর্বাধিক। সেখানের মহানাগরিক ঘোষণা করেছেন গণকবর দেওয়ার। কবর দেওয়ার ও জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। পার্শ্ববর্তী খেলার মাঠকে কবরস্থানে পরিণত করতে হচ্ছে। সংক্রমণ ছড়ানোর ভয়ে পোস্টমর্টেম করা হচ্ছে না কোনো মৃতদেহের, শেষ দেখাও দেখতে পাচ্ছেন না নিকটজন। মাংসবাহী শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ট্রাকগুলো কে শবদেহ রাখার জন্য ব্যবহার করতে হচ্ছে, মর্গে রাখার স্থান অপ্রতুল। সত্যিই যেন জাতীয় শোক! জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে দেশের সর্বত্র।

হুমকি চলছিল আগে থেকেই। এবার সেটা কাজে পরিণত করলেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প। চীনের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণের দোহাই দিয়ে বিশ্ব স্থাস্থ্য সংস্থা ‘হু’কে অনুদান দেওয়া বন্ধ করলেন। অথচ এই ট্রাম্পই গত জানুয়ারি মাসে করোনা ভাইরাস আটকাতে চীনের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। রাষ্ট্রসংঘের ইউনেস্কো থেকে আমেরিকা সরে গেছে আগেই, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতেও সই করেনি।

ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত সমালোচিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। করোনা নিয়ে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে তাঁর ভূমিকার নিন্দা করেছে চীন, জার্মানি, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশ। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরস ও এই সিদ্ধান্ত সময়োচিত নয় বলে দাবি করেছেন। জনস্বাস্থ্য অবহেলিত থাকলে কোনো দেশ সুস্থ থাকবে না। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে না পারলে এই মৃত্যু মিছিল রোখা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য নীতি পরিচালনার দর্শন আগে ঠিক করতে হবে। চীন, ভিয়েতনাম দেখিয়ে দিয়েছে সমাজতান্ত্রিক কাঠামোয় কী করা সম্ভব। আগামী দিনে ঐ দেশগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্যান্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোকে নিজেদের রণকৌশল ঠিক করতে। সুস্থভাবে বাঁচার লক্ষ্যে সমাজতন্ত্র‌ই পথের দিশারী।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।