তুলসী কুমার সিনহা : চিন্তন নিউজ:১৩ ই ডিসেম্বর:- বাংলা সাহিত্যে হাস্যরস নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই মনে পড়ে শিবরাম চক্রবর্তী’র নাম। শিবরাম চক্রবর্তীকে এককথায় রত্নের খনি বলা যায়। তাঁর রচনার প্রতি পাতায় কৌতুক,পরতে পরতে হাসি – মজা।
বর্তমানে হাস্যরসের গল্পে অনেক অশ্লীলতা প্রয়োগ ঘটলেও শিবরাম চক্রবর্তী সযত্নে এড়িয়ে গেছেন। তাঁর লেখা গল্পের পাঠক ছোট থেকে বড় সকলেই। সবচেয়ে আক্ষেপের বিষয় এই যে তাঁর জীবনের অনেক লেখা প্রকাশিত না হওয়ায় হারিয়ে গেছে। এহেন কথাশিল্পীর জীবন কিন্তু খুব সুখের ছিল না। মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের মেস বাড়িতে কাটিয়ে গেছেন অতি সাধারণ অথচ আদর্শবান জীবন। আজ তাঁর জন্মদিবসে শ্রদ্ধায় স্মরণ ।
শিবরাম চক্রবর্তী ১৯০৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। । তাঁর বাবা শিবপ্রসাদ চক্রবর্তী ছিলেন মালদহের চাঁচলের রাজপরিবারের সন্তান। তিনি কিছুটা ভবঘুরে সন্ন্যাসী প্রকৃতির ,ফলে শিবরামকে শৈশব ও কৈশোরে অধিকাংশ সময় মালদহের চাঁচলে মায়ের কাছে থাকতে হয়। তাঁর মা শিবরাণী দেবীর মধ্যে আধ্যাত্মিকতার প্রচ্ছন্ন ছায়া থাকার কারণে শিবরাম বাবা-মায়ের স্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। তাই ছোটবেলা থেকেই বন্ধনহীন মুক্ত পরিবেশে বড় হয়েছিলেন শিবরাম। সুযোগ পেলেই উদ্দেশ্যহীন, গন্তব্যহীন হয়ে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে পড়তেন।।
১৯১৯ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের আহ্বানে স্বদেশী আন্দোলনে যোগ দিতে কলকাতায় চলে আসার জন্য তিনি মালদহের সিদ্ধেশ্বরী ইনস্টিটিউট থেকে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় বসতে পারেন নি।যদিও পরবর্তী কালে দেশবন্ধুর প্রচেষ্টায় শিবরাম গৌড়ীয় সর্ববিদ্যায়তন থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন ।স্বদেশী আন্দোলনে অংশ গ্রহণের জন্য তাঁকে কারাবাসও করতে হয়। প্রথমে তাঁকে প্রেসিডেন্সি জেলে এবং পরে বহরমপুর সেন্ট্রাল জেলে থাকতে হয়। বহরমপুর সেন্ট্রাল জেলে কাজী নজরুল ইসলামের সংস্পর্শে আসেন।
তিনি বিজলী ও ফরওয়ার্ড পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ছিলেন যুগান্তর পত্রিকার প্রকাশক। তিনি অনেক স্বদেশী কবিতা ও গান রচনা করেন।
শিবরামের খামখেয়ালিপনার জন্য তাঁর লেখালেখি খুব একটা প্রচার ও প্রসার হয়নি। লেখালেখি সংরক্ষণ বা ছাপার খুব একটা আগ্রহ তাঁর ছিলো না। শিবরামের লেখালেখি বা সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে যতটা জানা যায় তার চেয়েও কম জানা যায় ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে। শিবরাম চক্রবর্তীর রচিত হর্ষবর্ধন গোবর্ধনের গল্প আজও পাঠকের কাছে সমাদৃত।তাঁর অমর সৃষ্টি উপন্যাস ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ যেটি ঋত্বিক ঘটকের পরিচালনায় ১৯৫৮ সালে চলচ্চিত্র আকারে মুক্তি পায়। এছাড়াও শিবরাম কলকাতার হালচাল, বর্মার মামা,, মনের মত বৌ, মস্কো বনাম পন্ডিচেরী সহ আরও বেশ কিছু বই লিখেছেন। প্রবন্ধ, গল্পের পাশাপাশি তিনি কিছু কবিতা , নাটক ও কিছু রম্য গোয়েন্দাকাহিনিও রচনা করেন। তার গোয়েন্দার নাম কল্কেকাশি।
তাঁর জীবনের শেষ প্রান্তে আপনজন বলতে কেউ ছিল না।তীব্র আর্থিক সংকটের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁর মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করে।১৯৮০ সালের ২৮শে আগস্ট কলকাতায় শিবরাম চক্রবর্তীর জীবনাবসান ঘটে।