জেলা

দেশের বর্তমান কোভিড বিপর্যয়ের দায় কার?


মল্লিকা গাঙ্গুলী, চিন্তন নিউজ, ১ মে:–  বিগত এক বছরের উপর ভয়াবহ করোনা সংক্রমণ বিশ্বকে বিধ্বস্ত করলেও সাম্প্রতিক করোনার দ্বিতীয় প্রবাহে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের পরিস্থিতি অবর্ননীয়। প্রথম পর্বে ছ মাসে সংক্রমন হয়েছিল ৭৭ লক্ষ, যা এবার দু মাসেই ছাড়িয়ে গেছে। সরকারের দেওয়া তথ্যে যথেষ্ট কারচুপি আছে তা সত্ত্বেও যদি সরকারী হিসাব মেনে নেওয়া যায় তাহলেও দেখা যাচ্ছে, শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সরকারি হিসেবেই ২৪ ঘন্টায় দেশে সংক্রামিত হয়েছে ৩ লক্ষ ৮৬ হাজার ৪৫২ জন এবং ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩৬৯৮ জনের। সরকারের দেওয়া তথ্য থেকেই জানা যাচ্ছে, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর হার। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা এই হার বজায় থাকলে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যেই ভারতে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ৭ হাজারে পৌঁছে যাবে।

রাজ্যের বেলাগাম সংক্রমনে উদ্বিগ্ন চিকিৎসক মহল। দেশের সর্বত্র চিকিৎসা ব্যবস্থার চরম দুর্দশার চিত্র প্রকট। বেড নাই , অক্সিজেন নাই, ওষুধ অমিল, টীকাকরনে ভয়ঙ্কর অনিয়ম, এমনকি কোভিডে মৃত ব্যক্তির দেহ সৎকারেও চরম অব্যবস্থা। দেশের আঠারো ঊর্ধ সমস্ত জনগনকে টিকা দেওয়ার ঘোষণা করেও সরকার ভ্যাকসিন দিতে পারছে না, এমনকি প্রথম দফা টিকা নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজের জন্য মানুষ হন্যে হয়ে ঘুরছে।

দেশের এই ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত দায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের। দেশের মানুষের জীবন বাজি রেখে মোদি সরকার নিজেদের ঘৃণ্য স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ওষুধ কোম্পানি গুলির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। ভ্যাকসিন কোম্পানিগুলির লাভ বাড়াতে মোদি সরকার তৎপর। সি,পি,আই,এম এর দলীয় মুখপত্র পিপলস ডেমোক্রাসির সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৪৩ সালের মন্বন্তরে অনাহারে, অপুষ্টিতে, রোগে ভুগে তিন লক্ষ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছিল, আর এই করোনা মহামারিতে এই মুহূর্তেই প্রায় তিন লক্ষ মানুষ মৃত। আরও কত মানুষ করোনার শিকার হবে জানা নেই!

কোনো গবেষণা না করেও বর্তমান ভারতে করোনায় মড়কের কারণ সাধারণ মানুষের চোখেও স্পষ্ট। করোনার প্রথম ঢেউ থেকে দ্বিতীয় প্রবাহের মাঝে সরকারের হাতে এক বছর সময় ছিল, যে সময়কে কাজে লাগিয়ে মোদি সরকার দেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য পরিষেবা উদ্ধার করতে পারতো। বিশ্বের প্রায় সব দেশ করোনা১ থেকে করোনা২ এর মধ্যবর্তী সময়কালে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে মজবুত করার ফলেই তারা দ্বিতীয় ঢেউ এর আঘাত মোকাবিলা করতে সক্ষম। অপর দিকে ভারত সরকার দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য সেবাকে গুরুত্বই দেয়নি। করোনার মারণ ক্ষমতা পূর্বের তুলনায় অনেক গুন প্রবল, অথচ ভারত সরকারের চরম উদাসীনতা দেশের মানুষকে এই বিভৎস পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সর্বত্র বেড নাই, ওষুধ নাই, ভ্যাকসিনের ঘাটতি, অক্সিজেনের হাহাকার এককথায় চিকিৎসার অভাবে আজ চারিদিকে মৃত্যু মিছিল!!

শুধু বাম দলগুলি নয়,  দেশের সাধারণ মানুষের চোখেও বর্তমান কোভিড পরিস্থিতির সমস্ত দায় কেন্দ্রের মোদি সরকারের। এখনও যদি  সরকারের চেতনা না হয়, কেন্দ্র  সরকার যদি শক্ত হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে না পারে তবে করোনার দ্বিতীয় ঝড়ে দেশের অর্থনীতি সমাজ সংস্কৃতির বিপর্যয় আটকানো সম্ভব হবে না।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।