রাজ্য

ধর্মঘটের বহর দেখে পা কেঁপে উঠল শাসকের


সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ৯ জানুয়ারি: বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কোন কর্মসূচি থাকলেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কলকাতার বাইরে চলে যান। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গতকাল বন্ধের দিন তিনি গিয়েছিলেন গঙ্গাসাগর। সেখান থেকে ধর্মঘটের সাফল্য দেখে হেলিপ্যাড থেকেই চটজলদি ব্যাবস্থা গ্রহন করার ঘোষণা করেন।

কিন্তু কার বিরুদ্ধে “প্রম্পট অ্যাকশন” নেবে নবান্ন? চটজলদি ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হলে তো প্রশাসনের উর্দিধারীদের বিরুদ্ধেই নিতে হবে। সারা ভারত দেখেছে উর্দিধারী পুলিশ কিভাবে উন্মত্ততা দেখিয়েছে। সম্পত্তি নষ্ট করেছে পুলিশ। তবে তো তাদের উপরই ব্যবস্থা গ্রহন করতে হয়।

মমতা ব্যানার্জি বলেছেন তিনি মনে করেন পুলিশ ধর্মঘটীদের উপর যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহন করবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে পুলিশ ধর্মঘট ভাঙার জন্য সারাদিন ধরে রাস্তা দখল করে রাখলো, অবাধে ভাঙচুর করলো, নিজেদের ক্ষমতা দেখাতে গিয়ে সাথে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে প্রশাসনের গাড়ি ভাঙচুর করতে এতটুকু পিছপা হল না। তাহলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কথা অনুযায়ী গুন্ডামির অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধেই। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগকে পাশ কাটিয়ে তাক করেছেন ধর্মঘটীদের বিরুদ্ধে।

কলকাতা ফেরার পথে গঙ্গাসাগরের হেলিপ্যাড থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, “এটা কোন আন্দোলন নয় এটা গুন্ডামি।” কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন সারা দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট ডেকেছিল। ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করেনি বিজেপির শ্রমিক সংগঠন বিএম এস। দোসর ছিল শাসকদলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিউসি। মমতা ব্যানার্জি প্রথম থেকেই ধর্মঘটের বিরুদ্ধে সুর ছড়িয়েছিলেন। ধর্মঘটের বিরুদ্ধে ফরমান জারি করেছিল নবান্ন। প্রশাসনকে রাস্তায় নেমে ধর্মঘটের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার নির্দেশ দিয়েছিল নবান্ন।

কিন্তু সমস্ত হুমকি, ফতোয়া উড়িয়ে দিয়ে পশ্চিম বাংলা সামিল হয়ে গেল ধর্মঘটে। আর সেই খবরও খুব তাড়াতাড়ি চলে যায় মমতা ব্যানার্জির কাছে। হুমকি, নানারকম নির্দেশিকার পরও যখন ধর্মঘট সফল হবার পথে, তখন তিনি আর রাগ সামলাতে পারলেন না। ক্ষোভ উগরে দিলেন সকলের সামনে। রেগে গিয়ে ঘোষণা করেন, “যারা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করবেন তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন আইনের পথে চলবে।”

সরকারি সম্পত্তি নষ্ট রোধ করার জন্য এরাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীই পাশ করিয়েছেন কালা আইন। সরকারের হাতে রয়েছে ক্ষতিপূরণ আদায়ের আইন। এখন সবথেকে বড় কথা আইন প্রয়োগ হবে কাদের বিরুদ্ধে? ব্যবস্থা গ্রহন করতে গেলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিতে হয়। যিনি ক্ষমতায় আসার আগে কমবেশি ১০০টা ধর্মঘট করেছে তিনি এখন ধর্মঘটের তীব্র বিরোধী।

সাধারণ মানুষের করের টাকা থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে শিল্প মেলায় বিনিয়োগকারীদের কাছে সগৌরবে বলেছেন এরাজ্যে তিনি ধর্মঘট করতে দেন না। নবান্নে বনিকসভার বৈঠকেও বলেছেন তিনি ধর্মঘট বিরোধী। শ্রমিক-মালিক যাতে একসঙ্গে কাজ করতে পারে তিনি সেই চেষ্টা করেন। শিল্পপতিদের মমতা ব্যানার্জি বলেছেন কথায় কথায় ঝান্ডা নিয়ে বসে পড়ার পক্ষে তিনি নন, এটাই সবচেয়ে হাস্যকর।

শ্রমিক মালিক মিলিয়ে দিতে গিয়েও আজ অবধি আদায় করতে পারেননি চা শ্রমিকদের নুন্যতম মজুরি। চা বাগান গুলো বুধবার সকাল-সন্ধ্যা পুরো সময় স্তব্ধ হয়ে ছিল। এত কষ্ট করে শ্রমিক মালিক চুক্তি করেও গঙ্গা পাড়ের একটা চটকল থেকেও চিমনির ধোঁয়া বের হয়নি। গতকাল বন্ধের ডাক ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। যারা ধর্মঘটে সামিল ছিলেন তাঁদের পরিষ্কার কথা ছিল ধর্মঘট কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। এন আর সি, এনপিআর বাতিল করার দাবি ছিল প্রখর ভাবে। এটাও কেন্দ্র সরকার বিরোধী কর্মসূচি।

কিন্তু হতভাগ্য এই পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মোদী সরকারের প্রতিনিধি। তাই জন্য মানুষ কিভাবে তাদের প্রতিবাদ জানাবেন সেটাও মমতা ব্যানার্জি ঠিক করে দেবেন। তিনি বলেন শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন করতে হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কথা মত চলেনি বাংলা। তাই প্রশাসন নৃশংসতার প্রমাণ দিয়েছে। সবচেয়ে অদ্ভুত কথা বিজেপির বিরুদ্ধে বনধ ডাকা হল, কিন্তু তাদের ১৮ জন সাংসদ, দুজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকা স্বত্বেও সারাদিন তাদের বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে। তাদের হয়ে বন্ধুত্বের কর্তব্য পালন করতে দেখা গেল মমতা ব্যানার্জি সরকারের কর্মী সমর্থকদের।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।