দেশ

চাষে রোটাভেটর জলের সংকট বাড়িয়ে তুলবে।


সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ১৭ আগষ্ট: বর্তমানে বিদেশের পাশাপাশি আমাদের দেশেও আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে চাষবাস হচ্ছে। পরিবর্তন হয়েছে চিরাচরিত চাষের পদ্ধতির। এখন আমাদের দেশে বলদ দিয়ে জমি তৈরী করার বদলে ট্রাক্টরকে কাজে লাগিয়ে তাতে লাঙ্গল জুড়ে জমি কর্ষন করছে। এতে জমিতে খুব দ্রুত হাল দেওয়া যাচ্ছে আর পরিশ্রম কমছে।

মাটির উর্বরতা শক্তি এতে বেড়েছে। কিন্তু এখন সবচেয়ে যেটা বড় প্রশ্ন সামনে এসে দাড়াচ্ছে সেটা হল এইরকম কাজ করতে গিয়ে চাষিরা জমির ক্ষতি করে ফেলছে না তো? আগামী দিনে এতে জমির ক্ষতি হবে না তো? জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কি?

এখন হালের বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে রোটাভেটর যন্ত্র। এতে সুনিপুন ভাবে জমি কর্ষন করা যাচ্ছে, এতে ফলন বাড়ছে। আর তাই এটি চাষিদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু কৃষি পারদর্শীরা অশনিসংকেত দেখছেন এর কুফল নিয়ে।

এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে সাথে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতে এই যন্ত্র দিয়ে চাষবাস চলছে। এই যন্ত্রটি হালের ফলার চেয়ে চাষের মাটি অনেক বেশি ঝুরঝুরে করে দেয়, আর অনেক গভীর পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে ফেলা যায় এটির সাহায্যে। কিন্তু এর ফলে মাটির নীচে জল সঞ্চালন হওয়ার যে কৈশিক নল থাকে সেটি যায় বন্ধ হয়ে। আর তাতেই তৈরী হয় সমস্যা। বৃষ্টির জল মাটির গভীরে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে ভৌমজলে মাটি পুষ্ট হতে পারে না। ফলে ক্রমেই নামতে থাকে মাটির জলস্তর।

হাল কর্ষনের ফলে মাটির কনায় জলধারণ বাড়ে, তার পাশাপাশি বাতাসও ধরে রাখে মাটি। কিন্তু রোটাভেটর দিয়ে জমি কর্ষণ করলে সেই বায়ু মাটির কনার মধ্যে থাকে না। রাজ্যের অন্যতম জেলা দক্ষিন দিনাজপুরের কৃষি দপ্তর জানাচ্ছে এখন লাঙল উঠে গিয়ে অল্প সময়ে দ্রুত চাষ করার জন্য যন্ত্র ব্যাবহার করা শুরু হয়েছে, কিন্তু ভবিষ্যতে এর কুফল পড়বে। এ নিয়ে চাষিদের সচেতন করা হলেও তারা এর ব্যাবহার থেকে বিরত হয়নি।

কৃষি আধিকারিকরা জানান জেলা থেকে চাষের জমির মাটি পরীক্ষা করে তা রাজ্যের কৃষি দপ্তরে পাঠানো হয়ে থাকে। আধিকারিকদের দাবী মাটি পরিক্ষা করতে গিয়ে দেখা গেছে তাতে রোটাভেটর দিয়ে চাষের ফলে মাটিতে পরিবর্তন এসেছে। পালটে গেছে মাটির গঠনতন্ত্র। কৈশিক নল বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে বৃষ্টির জল মাটির গভীরে পৌঁছাতে পারছে না। প্রাকৃতিক জলের পরিমান কমছে। আগামী দিনে মাটির জলস্তর আরও কমে যাবে। এতে জমিতে খরা দেখা দেবে।

এখনই যদি সচেতন না হওয়া যায় তবে এটি একটি ভংয়কর সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। একদিকে যেমন পানীয়জলের সঙ্কট দেখা দেবে অপরদিকে ফসলের গুনগত মান কমে যাবে। রোগপোকার আক্রমন বাড়বে। তাই এবিষয়ে অবিলম্বে চাষিদের সচেতন হতে হবে। এই যন্ত্র ব্যবহার করা যাতে বন্ধ হয় তার জন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। দরকার হলে আইন চালু করে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। এর পাশাপাশি সরকারকেও প্রচার চালাতে হবে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।