সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ২৪ জুন: যেন বনধ, ওষুধ এর দোকান ছাড়া সব বন্ধ। রিলায়েন্স জুটমিল, কাকিনাড়া জুটমিল সব খোলা, কিন্তু শ্রমিক নেই। গত একমাস ছুটি স্কুল, দশটির বেশী প্রাইমারি স্কুল বন্ধ। শুনশান রাস্তাঘাট, মোড়ে মোড়ে শুধু জটলা। প্রাণচঞ্চল শিল্পাঞ্চল বেমালুম পরিণত হয়েছে বিধ্বস্ত, রক্তাক্ত এক ক্লান্ত জনপদে।
যদি চটকলে কেউ না যায় তো মাইনে কাটা যায়। এবার ঘরে খাবারের টান পড়তে শুরু করেছে। ছেলেমেয়েরা স্কুল যেতে পারছে না। অতিষ্ঠ হয়ে ওঠা সেই রোজনামচার কোনও ফারাক নেই কাকিনাড়ার মানিকপীরের বাসিন্দা চটকল শ্রমিক বিজন চৌধুরীর সঙ্গে বারুইপাড়ার শ্রমিক কানাইলাল সাউ এর।
ঘরেতে খাবারের টান পরতে শুরু করেছে। যদিও ভাটপাড়ার আতঙ্কে ভাটা পড়েনি। জগদ্দল থেকে কাকিনাড়া, কাছারিপাড়া রোড এলাকা থেকে বারুইপাড়া – বিনিদ্র রাত জাগছে মহল্লার মানুষজন। দুই শাসক দলের সংঘর্ষে ক্রমেই নিঃস্ব হচ্ছেন গরিব শ্রমজীবী পরিবার গুলি। এক মহল্লার শ্রমিক আর এক মহল্লাতে কাজে যেতে ভয় পাচ্ছেন এই ভেবে যে, যদি চোরাগোপ্তা আক্রমন হয়।
বাংলার এই রূপ মানুষের অচেনা। তা আরও উদ্বেগজনক হচ্ছে পুলিশের ভুমিকায়। এদের ভূমিকায় অশান্তি শুরু হচ্ছে। দু’জন প্রবীন নাগরিক আক্রান্ত হলেন। বিজেপির দাবী আক্রান্তরা তাদের কর্মী। উত্তেজনার আগুনে ঘি পড়ল। সুজন চক্রবর্তী ও পরে কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান আসেন কাকিনাড়াতে। তাদের নেতৃত্তে পরিষদীয় দল যায় নিহত দুই ফুচকা বিক্রেতার বাড়ী এবং তাদের পরিবারের সাথে কথা বলেন। এই দল ফিরে যেতেই আবার রণক্ষেত্র হয় ভাটপাড়া। পুলিশ ক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে অবিরাম লাঠিচার্জ করতে শুরু করে আর তার উল্টো দিকে মানুষরাও ইট ছুড়তে শুরু করে – এই দৃশ্য এখন নিত্যকার ঘটনা ভাটপাড়াতে।
কাকিনাড়ার কাছারি মোড় খুব অপরিসর গলি। সেখানেই রয়েছে অস্থায়ী ফুচকার দোকানের কাঠামো। এই দোকানেই বসত রামবাবু সাউ। রামবাবুর মা রাখী সাউ বিড় বিড় করে বলে চলেছেন “এখন আমাদের কি হবে? সকালে উঠেই আলুসিদ্ধ, ঘুগনি বানাতাম। সেই নিয়ে ছেলেটা দোকানে বসত। ওই আমাদের সংসারে একমাত্র উপার্জন শীল।” বড় ছেলে বেকার আর ছোটটা স্কুলে পড়ে। সেদিন সকালে কাছারি মোড়ে দোকানের জন্যই সওদা করতে গিয়েছিল ১৮ বছরের ছেলেটা। রামবাবুর কাকা মুন্না সাউ জানালেন বিক্রি বাটা না হলে খাবে কি? সে কি করে রাজনীতি করবে? এখন অনেকেই বলছে ছেলেটা রাজনীতি করত না। একা হাতে রামবাবু সংসার চালাত। দোকানের জন্য টকজল কিনতে গিয়েছিল। পুলিশ আশ্বস্ত করেছিল, বলেছিল দোকান খুলতে। আর সেই পুলিশের গুলিতেই প্রান গেল ছেলেটার। সন্তান হারা জননীর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কেউ নেই।
আর এক নিহত ধরমবীর সাউ এর স্ত্রী কৃষ্ণা সাউ, সাথে দুই ছেলেমেয়ে। বাবার মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না ছেলে সজল সাউ। বলল “ক্ষতিপুরণ চাই না। বাবা চাইত বড় চাকরি করি। সেটা দেখে গেল না বাবা।”
অসহায় পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। তাদের কথায় ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তার উপর আছে মুখ্যমন্ত্রীর উস্কানিমুলক কথা। পুলিশ প্রশাসন এলাকার শান্তি রাখতে পুরোপুরি ব্যর্থ। মানুষকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিতেও ব্যর্থ। পরিস্থিতি ভয়ানক হয়ে উঠছে দিন কে দিন।