সূপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ৬ই সেপ্টেম্বর:- সব ঠিকঠাক থাকে তবে তবে আগামী ৭ ই সেপ্টেম্বর চাঁদের মাটিতে নামছে ভারতের জিএস এলভি এমকে থ্রি-মহাকাশযানের সংগে যাওয়া ল্যান্ডার বিক্রম।। কিন্তু তার আগে দেখা যাক এই মহাকাশ যান চন্দ্রযান-২ নিয়ে কিছু গুরুত্ব পুর্ন তথ্য—-চাঁঁদের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেওয়া এই মহাকাশ অভিযানের বিশেষত্ব সম্পর্কে।
আমেরিকার মহাকাশচারীদের চাঁদের মাটিতে পা দেওয়া থেকে শুরু করে চাঁদের উৎপত্তি ও গঠন নিয়ে গবেষনা নতুন কিছু নয়।। কিন্তু সেসব হয়েছে চাঁদ এর উত্তর মেরুতে।। এখানে সুর্যের আলো বেশী পড়ে।। আর এই অঞ্চল নিয়ে গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা রাশিয়ার মতো দেশ গুলো।।। তবে এই গবেষনার মধ্যে রয়েছে চাঁদের দক্ষিনমেরু অংশ।। আর চাঁদের এই অংশেই মহাকাশযান বিক্রমকে নামানোর পরিকল্পনা নিয়েছে ভারতের মহাকাশ সংস্থা ইসরো।। কেননা চাঁদের এই ছায়াবৃত অংশটি উত্তরমেরু থেকে অনেক বড়।। এখানে তাই চাঁদের মাটিতে জল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন ইসরোর মহাকাশ গবেষকরা।। চাঁদের এই অংশটি ছায়াবৃত থাকে তাই এই অঞ্চলটি বেশ ঠান্ডা এবং এখানে জল পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশী। তবে শুধু চাঁদের মাটিতে জল পাওয়াই একমাত্র উদ্দ্যেশ্য নয় এই মহাকাশ অভিযানের।। কারন এর আগে চন্দ্রযান-১ নিয়ে গবেষনা করতে গিয়ে চাঁদের মাটিতে জল আছে বলে দাবী করেছিলেন গবেষকরা।। কিন্তু সেটা মাটিতে নেমে পরীক্ষা করে দেখা হয়নি।
এবার ভারতের এই মহাকাশ অভিযানে চাঁদের মাটিতে নেমে চালানো হবে জলের সন্ধান।। কারন জলই দিতে পারে সেখানে প্রানী আছে কিনা আর বেচে থাকার মত অক্সিজেন আছে কিনা? গবেষকদের ধারনা দক্ষিন মেরুতে গর্তের উপস্থিতি আছে।। গবেষকদের ধারনা এই গর্তের মধ্যে মিলতে পারে জলের সন্ধান অথবা পাওয়া যেতে পারে ফসিল—-যার থেকে জানা যেতে পারে চাঁদের অতীত নিয়ে নানা অজানা তথ্য। সেই কারণেই চাঁদের এই গর্ত গুলি নিয়ে জানবেন গবেষকরা।
তাছাড়া চাঁদের ভুপ্রকৃতির গঠন এবং চাঁদের ভুপৃষ্টের মানচিত্র তৈরী করাও এই মহাকাশ অভিযানের অন্যতম উদ্দেশ্য।। এইসব বিষয় নিয়ে গবেষনা চালানো র জন্য জিএসএলভি এমকে থ্রি রকেট থেকে একটি অংশ অরবিটার আগামী একবছর চাঁদের কক্ষপথে ঘুরপাক খাবে।। এই অরবিটের ওজন ২ হাজার ৩৭৯ কেজি।
জিএসএলভি এম কে রকেটের আর একটি অংশ বিক্রম, এটি চাঁদের মাটিতে নামবে। ভারতের মহাকাশ গবেষনার জনক বিক্রম এ সারাভাইয়ের নাম অনুসারে এই যানটির নাম বিক্রম রাখা হয়েছে। এটির ওজন ১ হাজার ৪৭১ কেজি। চাঁদের মাটিতে নামার পর এর পেট থেকে বেরিয়ে আসবে ছ’ চাকার রোভার যান।। এই যানটিই চাঁদের মাটিতে বিচরন করবে, নানা তথ্য সংগ্রহ করবে আর সংগৃহীত তথ্য সে বিক্রমকে পাঠাবে।। বিক্রম সেই তথ্য অরবিটার এর মাধ্যমে আমাদের মহাকাশ গবেষনা কেন্দ্রে ইসরোর বেঙ্গালুরুর দপ্তরে পাঠাবে।
পৃথীবির ১৪ দিন চাঁদের একদিনের সমান।। ভারতের এই চন্দ্রযান -২ মহাকাশ অভিযানের বিশেষত্ব হল দেশীয় প্রযুক্তির সাহায্যে এই প্রথম চাঁদের দক্ষিনমেরু তে মহাকাশ যান নামছে।। এর সাথে একসঙ্গে চাঁদের মাটিতে রোভার যান চলে সম্পুর্ন দেশীয় প্রযুক্তির সহায়তায়।। সব মিলিয়ে ভারতের এই চন্দ্রভিযান সফল হলে তা বিশ্বের দরবারে মহাকাশ গবেষনায় এগিয়ে থাকা দেশ গুলির কাছে সমীহ আদায় করে নেবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আগামী দিনে দেশের কোনও মহাকাশচারিকে চাঁদের মাটিতে পা রাখার পথ প্রশস্থ করবে।