কলমের খোঁচা

উত্তমকুমার- ঋত্ত্বিক এবং হেমন্তের সম্পর্কের খতিয়ান–গৌতম রায়


চিন্তন নিউজ:১৬ই জুন:– উত্তমকুমার তাঁর অভিনয় জীবনে সত্যজিৎ রায়ের অত্যন্ত  ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসে ছিলেন। সত্যজিৎ পরিচালিত ছবিতে উত্তমের অভিনয় যেমন তাঁর অভিনয় জীবনেরও  সম্পদ ,তেমনি সেই ছবিগুলি গোটা ফিল্মি দুনিয়ার এক বিস্ময়। সত্যজিতের সঙ্গে ব্যক্তি উত্তমের একটি ভদ্রতা পূর্ণ সুসম্পর্কের কথা ও সাধারণভাবে দুই কিংবদন্তির অনুরাগীদের মধ্যেই পরম সমাদরের  বিষয় হয়ে রয়েছে।

              উত্তম কুমারের অভিনয় জীবনের বিস্তীর্ণ পর্বে পরিচালক হিসেবে ঋত্বিক ঘটকের কার্যক্রমের কালটি ও বিস্তৃত রয়েছে। কিন্তু ঋত্বিকের কোনো ছবিতেই আমরা একবারের জন্যও উত্তমকুমারকে পাই না। ঋত্ত্বিকের ছবিতে উত্তম কে না পাওয়া- ঋত্বিক এবং উত্তম উভয় অনুগামীদের কাছেই একটা ‘না পাওয়ার’ অতৃপ্তি এনে দেয়। সেই’ না পাওয়ার ‘অতৃপ্তির পরিমণ্ডল থেকে বুঝিবা গোটা বাংলা ফিল্মের অনুরাগীদের জগতকে বাদ দেওয়া যায় না ।

                  সত্যজিৎ এবং ঋত্ত্বিকের সম্পর্কের চাপানউতোর ঘিরে ফিল্ম অনুরাগীদের ভিতর সত্যি মিথ্যে মেশানো অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে। সত্যজিতের  পারিপাট্য হয়তো ছিন্নমূল ঋত্বিককে কোনো কোনো জায়গায় বিক্ষুব্ধ করে তুলতো ।ঋত্বিক মানুষ হিসেবে নিজেকে  শহুরে মধ্যবিত্তের টিপিকাল আবর্তের ভিতরে    নিজেকে কখনোই আবদ্ধ রাখতেন না ।ফলে এক ধরনের আপাত অসহিষ্ণুতা এই দুই মহান চলচ্চিত্রকারের সম্পর্ক ঘিরে প্রচলিত আছে।

               ঋত্বিক  কোনো অবস্থাতেই নিজের ভালো লাগা বা মন্দ লাগা কে শহুরে লৌকিকতার কেতায় কোনোরকম সুগার কোটিংয়ের আবরণের   মাধ্যমে মানুষের কাছে হাজির করতে পারতেন না। তাই হয়তো তাঁর সঙ্গে সত্যজিৎয়ের সম্পর্কের  এক ধরনের আপাত রুক্ষ ছবি মানুষের ভিতরে গেঁথে আছে ।ঋত্ত্বিকের  এই রুক্ষতার ছবিটা মানুষের ভেতরে গেঁথে দেওয়ার ক্ষেত্রে একাংশের মানুষ , যাঁরা নিজেদের অতিরিক্ত সত্যজিৎ প্রেমী হিসেবে দাবি করে এই দুই মহান সৃষ্টিশীল এর সম্পর্কের ভেতরে যে মালিন্য ছিল না , সেই জায়গাটিতে একটি কল্পিত মালিন্য যুক্ত করে নিজেদের ভাবনাকে সু প্রতিষ্ঠিত করবার তাগিদ অনুভব করেন।সে ভাবেই একদল লোক সত্যজিৎ বা ঋত্ত্বিক কারোকে মহিমান্বিত , আবার কারুর গায়ে নানা ধরনের কাদা ছেটাতে  তৎপর থাকেন। 

                   এই চাপান-উতোরের  কোনো পর্যায়েই অত্যন্ত ক্যারিয়ারিস্ট উত্তম কুমার কোনো অবস্থাতেই নিজেকে সংযুক্ত করেননি ।সত্যজিতের ছবিতে অসামান্য অভিনয় করা সত্ত্বেও প্রকাশ্যে কখনো সত্যজিৎ সম্পর্কে মাত্রাতিরিক্ত অনুরাগ প্রকাশের ভেতর দিয়ে  ঋত্বিক বিদ্বেষ বা ঋত্ত্বিককে ছোট করে দেখানোর মানসিকতাও প্রকাশ করেননি।

                      সত্যজিৎ প্রেমে অন্ধ হয়ে ঋত্ত্বিকের  গায়ে হাত তোলা তো দূরের কথা , এই জায়গা থেকে অনেকের  ভিতরেই একটা ধারণা আছে যে, সত্যজিতের ছবিতে সফল অভিনেতা হওয়ার দরুনই কি উত্তম কুমারকে ঋত্বিকের কোন ছবিতেই আমরা দেখতে পাইনি?  এই ধরনের ধারণা তৈরিতে একাংশের অতি ভক্তদের ভূমিকা কোনো অবস্থাতেই কম নয়। তাঁরা   যে কোনো ছল ছুতোতেই  বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব ঋত্বিক কুমার ঘটক সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছে এক ধরনের বিকৃত ব্যাখ্যা উপস্থাপিত করতে চান ।

                   এই সব সাত-পাঁচ কথা মিলিয়েই অনেক মানুষের ধারণা , সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে অভিনয় করার দরুন ,সত্যজিতের সঙ্গে নৈকট্য হেতু ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে উত্তম বাবুর এক ধরনের দূরত্ব ছিল । আর সেই দূরত্বের কারনেই ঋত্ত্বিকের কোনো ছবিতে আমরা কখনই উত্তম কুমারকে দেখতে পাইনি।

                      ঋত্বিকের মদ্যপান ঘিরে সংস্কৃতি জগতে নানা ধরনের কাহিনী প্রচলিত আছে ।সেই সব কাহিনী গুলির ভিতরে বাস্তবতা কতখানি রয়েছে, তা আজ আর বোধহয় সবটুকু খুঁজে বের করা সম্ভব নয় । কিন্তু এটা সত্যি যে, পানাসক্ত অবস্থাতেও হোক কিংবা মদের থেকে সাত হাত দূরে থাকা অবস্থাতেই হোক, ঘনিষ্ঠ মহলে ঋত্বিক খানিকটা কৌতুক মিশিয়ে সত্যজিৎকে’ ঢ্যাঙা মানিক ‘বলে অভিহিত করতেন ।

                   এই নামকরণের ভেতরে সত্যজিৎ ভক্তেরা কোনো বিশেষ অর্থ খুঁজে বের করার চেষ্টা করলেও যাঁরা সত্যি ই ঋত্ত্বিককে কাছের থেকে দেখবার সুযোগ পেয়েছিলেন ,তাঁরা এটা জানতেন যে ,মুখে  দু একটা কটু শব্দ উচ্চারণ করলেও ,কারো সম্পর্কে বিদ্বেষ পোষণ করা ঋত্ত্বিকের স্বভাববিরুদ্ধ বিষয় ছিল।

                      উত্তম কুমার তখন তাঁর অভিনয় জীবনের শীর্ষবিন্দুতে আছেন। একের পর এক রোমান্টিক ছবি করে বাঙালির হৃদয়কে মাতিয়ে দিচ্ছেন। এন টি ওয়ান স্টুডিওতে শুটিংয়ের জন্য প্রায় সব সময় আসতে হয় উত্তমকে । আর এই স্টুডিওর ক্যান্টিনের সামনে বসে প্রকাশ্যে মদ খাওয়ার সাহস সেদিন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের একটিমাত্র মানুষই দেখাতে পেরেছেন , সেই মানুষটির নাম ঋত্বিক কুমার ঘটক । এই ‘সাহস’  শব্দটিকে এই কারনে  ব্যবহার করা হলো যে, মধ্যবিত্ত ভদ্রলোক সুলভ ন্যাকামো দেখানোটা ঋত্বিকের চরিত্রে কখনো ছিল না।

                      বিশ শতকের   পাঁচ, ছয়ের দশকে স্টুডিও পাড়ায় ক্যান্টিনের সামনে প্রকাশ্যে বসে মদ খাওয়ার সাহস বা স্পর্ধা কিংবা দুঃসাহস, যাই ভাবা যাক না কেন, সেটা দেখাতে পেরেছিলেন ঋত্বিক ঘটক। আর এই দৃশ্য , সেদিন শিল্পীরা থেকে কলাকুশলী কিংবা বিভিন্ন স্তরের টেকনিশিয়ানরা সেই সময় প্রায় প্রতিনিয়তই দেখেছিলেন।

                      এন টি ওয়ান স্টুডিওর ক্যান্টিনের সামনে বসে দিনের আলোয় মদ খাচ্ছেন ঋত্বিক ঘটক ,আর হয়তো শুটিংয়ের ফাঁকে কিংবা অন্য কোনো প্রয়োজনে তাঁর পাশ দিয়ে যেতে হচ্ছে উত্তমকুমারকে। মদ খেতে খেতেই ঋত্বিক হাঁক পাড়লেন উত্তম কুমারের উদ্দেশ্যে;

                  ” এই উত্তম শোন ।”

                 সেই সময় স্টুডিও পাড়ায় গ্ল্যামার দুনিয়ার শীর্ষবিন্দুতে থাকা উত্তম কুমারকে এভাবে প্রকাশ্যে হাঁক পাড়ার মতো সাহস এই একটি মাত্র মানুষেরই ছিল , মানুষটির নাম ঋত্বিক কুমার ঘটক। উত্তম কুমার কিন্তু তাঁর ঋত্বিকদার এই ডাক শুনে কখনো বিন্দুমাত্র বিরক্তি প্রকাশ করেননি। যতই কাজ থাকুক না কেন তিনি কিন্তু তাঁর ঋত্বিকদাকে এড়িয়ে যাননি । মদ খেতে খেতে ঋত্বিক তাঁকে ডাকছেন বলে মধ্যবিত্ত সুলভ উন্নাসিকতা কিংবা নাক সিটকানোতে একবারের জন্য পাশ কাটিয়ে যান নি ।

                       যতই ব্যস্ত তিনি থাকুন না কেন কখনো উপেক্ষা করতেন না উত্তম ঋত্ত্বিককে। উত্তম বাবু কাছে গেলেই ঋত্ত্বিকের ছিল বাঁধা কথা শোন ;

               “উত্তম আমি একটা ছবি করছি। তুই হবি হিরো। করবি তো  তুই আমার ছবি?”

                অনেকটা সেই রবীন্দ্রনাথের কাবুলিওয়ালা গল্পের কল্পিত শ্বশুরবাড়িকে ঘিরে কাবুলিওয়ালা ও মিনির কথোপকথনের মতোই  দিনের পর দিন সেই এক কথা শুনেও রুপোলি পর্দার খ্যাতির শীর্ষে থাকা উত্তম কুমার কিন্তু একটি দিনও , একটি মুহূর্তের জন্য ও তাঁর ঋত্বিকদার প্রতি এতটুকু বিরক্তি প্রকাশ করেননি ।

               ঋত্ত্বিকেকের প্রতিবারের আহ্বানে স্বভাবসুলভ বিনয়ের সঙ্গেই উত্তম কুমার প্রতিবারই বলেছেন;

                ” তুমি তো রোজই বল । যেদিন খুশি তুমি শুরু করো নতুন ছবি ।য়একটা কথা তুমি সব সময় জেনে রাখবে ঋত্বিক ঘটকের ছবির জন্য আমার কখনো কোনো সময়ের অভাব হবে না ।”

                  ঋত্বিক সত্যিই উত্তম বাবুকে নিয়ে কোনো ছবির পরিকল্পনা করেছিলেন কিনা– তা জানার আজ সত্যিই আর  কোনো উপায় নেই ।তাঁর ছবি বা কাস্টিং নিয়ে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বৃত্তে ঋত্বিক যেসব আলাপ আলোচনা করেছেন, সেইসব আলাপ-আলোচনার  নিরিখে এমন একটি সাক্ষ্য মেলে না যে, যেখানে তিনি উত্তম কুমারকে দিয়ে তাঁর কোনো ছবির কাস্টিং নিয়ে ভাবছেন, এমন প্রমাণ মেলে ।

               তাহলে এটি কি  ঋত্বিকের কেবলমাত্র এক ধরনের কথার কথা ছিল? মদ্যপ অবস্থায় , বাস্তব পরিমণ্ডলের ভিতরে অবস্থান করতে না পারা একজন মানুষের কোন রকম কষ্ট কল্পনা ছিল ?এ প্রশ্নের ইতিহাস নির্ভর উত্তর তৈরি করা আজ আর কোনো অবস্থাতে সম্ভব নয়।

                যদি খুব জোরের সঙ্গেই বলা হয় যে ঋত্বিক ভেবেছিলেন উত্তম কুমারকে নিয়ে আগামী দিনে কোনো ছবি করার কথা ভেবেছিলেন,  তাহলে হয়তো তথ্য-প্রমাণ নির্ভর সঠিক ইতিহাস বোধের আদৌ পরিচয় রাখা যায় না। তবে তার মানে এই নয় যে ,ঋত্বিক বা উত্তম কুমারের ভেতরে সম্পর্কের উষ্ণতা ছিল না। নানা পারিপার্শ্বিকতার চাপে ফিল্মি দুনিয়ায় ঋত্বিক যখন অনেকটাই কোণঠাসা ,তাঁর স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থানের দরুন সেই সময়ের   ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা লোকজন অনেকেই হয়তো যখন চাঁছাছোলা ভাষায় কথা বলা ঋত্ত্বিককে এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ মনে করেন, তখন কিন্তু কোনোরকম প্রচারমাধ্যমের আলোকবর্তিকা ছাড়াই ঋত্ত্বিকের  যে কোনো ব্যক্তিগত অসুবিধার নিরিখে নিঃস্বার্থভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাঁর ঋত্বিক দার প্রতি উত্তমকুমার।

                  সহ অভিনেতা কিংবা  পরিচালক ইত্যাদিদের প্রতি যে কোনো সমস্যাতে, বিশেষ করে আর্থিক সমস্যা তে পাশে দাঁড়ানোর প্রশ্নে উত্তম বাবু তাঁর  আগের যুগের অভিনেত্রী কানন দেবী বা সমসাময়িক যুগের সংগীত শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায় যেভাবে অভ্যস্ত ছিলেন, তেমন অভ্যস্ততার পরিচয় কিন্তু সব সময় রাখেন নি। উত্তমের  অভিনয় কুশলতা প্রশ্নাতীত হলেও সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রশ্নে উত্তম কুমার কতখানি প্রশ্নাতীত ছিলেন এ নিয়ে বিতর্ক থেকেই যায়।

                    তবে অনেকেরই হয়তো জানা নেই যে, ঋত্বিক ঘটকের জীবনের শেষ পর্যায়ে একেবারে নীরবে নিভৃতে উত্তম কুমার যেভাবে কোনোরকম সামাজিক ভ্রুকুটির পরোয়া না করে ঋত্ত্বিকের  প্রতি ভালোবাসার হাতটি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, তার জন্য তিনি ঋত্বিক অনুরাগীদের কাছে চির কৃতজ্ঞতা ভাজন হয়ে আছেন।

                   ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবিটি তৈরি করার অব্যবহিত আগে ঋত্বিক ঘটক যে অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন দক্ষিণ কলকাতার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন সেই অসুস্থতার কারণ কী ছিল, তা নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক এবং পরস্পর বিরোধী কথা আছে। সেই অসুস্থতা ঘিরে প্রকৃত সত্যটি বের করা আর সম্ভব নয়। সেই সময় ঋত্ত্বিকের যে  মানসিক অবস্থা তৈরি হয়েছিল,  সেই অবস্থার জন্য ঋত্ত্বিক নিজেই দায়ী , নাকি তাঁর পারিবারিক পরিমণ্ডল কিংবা পারিপার্শ্বিক পরিমণ্ডল দায়ী– এ নিয়ে চাপান-উতোর ছিল ,আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে ।

                   তবে ওই যে বলা হলো না শহুরে মধ্যবিত্ত ভদ্রলোক সুলভ সুগার কোটিং ঋত্বিকের কোনোদিনও ছিল না, সেটা ছিল না বলেই তিনি তাঁর এক ফিল্মের  বক্স অফিস সফল অভিনেত্রীকে নিজের বন্ধু পরিমণ্ডলে ভয়ঙ্কর বিরক্তিতে ‘গাধি’ বলে ডাকতেন। সেই অভিনেত্রীর সঙ্গে উত্তম বাবু সম্পর্কের কথা কারো অজানা নয় ।অভিনেত্রী টি ঋত্বিকের সাথে যাতে কোনো অবস্থাতেই উত্তমকুমারের ন্যূনতম ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠতে না পারে, শোনা যায় তার জন্য কম যত্নশীল ছিলেন না ।

                তবুও তিতাস ছবি তৈরীর আগে ঋত্বিক যখন অসুস্থ হয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি হন ,তখন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সবথেকে ব্যস্ততম অভিনেতা উত্তম কুমার, যাঁকে সত্যজিৎ ঘনিষ্ঠ , তাই ঋত্ত্বিকের ছবিতে কখনো অভিনয় করতে দেখা যায়নি বলে এক ধরনের গালগল্প বাংলা বিনোদন জগতে প্রচলিত রয়েছে, সেই উত্তম কুমার ই সবার আগে ছুটে গেছিলেন।

                        টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে একদিন শুটিং করতে গিয়ে যখন উত্তম শুনলেন ,ঋত্বিক অসুস্থ হয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি রয়েছেন ,নিজের ব্যস্ত শিডিউলের ভেতরৃও সমস্ত শুটিং বাতিল করে , কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে, নার্সিংহোমে ছুটলেন তার ঋত্বিক দা কে দেখতে। আজকের প্রজন্মের মানুষ ভাবতেই পারবেন না ষাটের দশকের শুরুতে,  জনপ্রিয়তার শীর্ষবিন্দুতে থাকা উত্তম কুমার সেদিনের দক্ষিণ কলকাতার কোনো নার্সিংহোমে অসুস্থ কাউকে দেখতে যাওয়ার খবরটি হাওয়ার বেগে প্রচার হয়ে যাওয়ার ফলে যে নার্সিংহোমে ঋত্বিক ভর্তি ছিলেন, তার আশেপাশে কি ধরনের অনুরাগীদের ভিড় জমেছিল ।

                    এমন অবস্থায় কি হতে পারে উত্তম বাবু কিন্তু সেটা জানতেন । কিন্তু জেনেও কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই, নিজের শুটিং বাতিল করে, গভীর উদ্বেগ নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন তাঁর ঋত্ত্বিক দার কাছে ।আর নার্সিংহোমে উত্তমকুমারকে আসতে দেখেই অসুখ ভুলে ভবা পাগলা সেই টিপিক্যাল মুখভঙ্গি করে রবীন্দ্রনাথের কাবুলিওয়ালা ছবির গল্পে কাবুলিওয়ালার সংলাপের;” আমি শ্বশুরকে মারিব”র মতো  বলে উঠলেন;

              ” সেরে উঠলে কিন্তু উত্তম ,আমি তোকে নিয়ে ছবি করবো । তোকে নায়ক হতে হবে।”

                 উত্তম কুমার বলে উঠেছিলেন  সেদিন;

           ” আমি কি একবারও বলেছি, তোমার ছবিতে নায়ক হব না ?অভিনয় করব না ?আগে তুমি সেরে ওঠো । আমি বরং ভেবেছি ,তোমাকে দিয়ে ছবি করাবো। তোমাকে আমার ছবির পরিচালক হতে হবে। প্রযোজনার সব দায়দায়িত্ব আমার। টাকা পয়সা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। সব ভাবনা আমার।”

                  ঋত্বিককে দিয়ে আদৌ উত্তম কুমার কোনো ছবির কথা ভেবেছিলেন, না অসুস্থ ঋত্বিককে ভোকাল টনিক দিয়ে সারিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন, তা জানার কোনো সঠিক উপায় আজ আর না থাকলেও এই কথা অত্যন্ত জোরে সঙ্গে বলা যায় যে, কোনোরকম অবস্থাতেই ছবি প্রযোজনা ঘিরে ঋত্বিক ঘটকের মতন ব্যক্তিত্বকে কোনো মিথ্যে স্তোক বাক্য দেওয়ার মত হালকা চালের মানুষ কিন্তু আর যাই হোক উত্তম কুমার ছিলেন না।

                    জীবনের শেষ পর্যায়ের বেশ কয়েকটা বছর পরিচিত মানুষজন, বন্ধুদের প্রতি একটা মানসিক নির্ভরতা ছিল ঋত্বিক ঘটকের।  তাঁদের কাছে কারনে-অকারনে টাকা চাওয়া টাও কার্যত  একটা মুদ্রাদোষে পরিণত হয়েছিল ঋত্ত্বিকের।

                 এই কারনটির জন্যেই ঋত্ত্বিকের বন্ধু বৃত্তের বহু মানুষ শেষ দিকে তাঁকে কিছুটা এড়িয়ে চলতেন । উত্তম কুমার নার্সিংহোমে যখন ঋত্বিক কে দেখতে গেলেন, ছবি করা নিয়ে সেই চিরপরিচিত কথার পুনরাবৃত্তি পর ঋত্বিক সরাসরি উত্তম বাবুর কাছে ৫০০টাকা চেয়ে বসলেন । উত্তম কুমারও  বিনা বাক্যব্যয়ে নিজের পার্স খুলে ৫ টি ১০০ টাকার নোট ঋত্ত্বিকের হাতে তুলে দিলেন।

                   এই সম্পর্কের পারস্পরিক আদান-প্রদানের ভিতর দিয়ে বোঝা যায় যে, নিজের পরিমণ্ডলের অন্যান্য শিল্পীদের অনেকের থেকেই সমসাময়িক ঘটনাক্রম  সম্পর্কে খানিকটা নির্মোহ উত্তম কুমার কিন্তু ঋত্বিক কুমার ঘটক সম্পর্কে একটা আলাদা ধরনের শ্রদ্ধাপূর্ণ মানসিকতা নিয়ে চলতেন ।

                 কলকাতার ছেলে ছিলেন উত্তম ।দেশভাগের প্রত্যক্ষ কোনো প্রভাব তাঁর উপরে কোনদিন পড়েনি। তাঁর আত্মীয় পরিজনের বৃত্তের ভেতরে ও দেশভাগ সরাসরি কোনো ক্ষত তৈরি করেনি ।অপরপক্ষে ঋত্বিকের ব্যক্তিজীবন এবং তাঁর সামগ্রিক সৃষ্টিতেই দেশভাগের  ছিল সবথেকে বড় বিষয়। ঋত্ত্বিকের এই দেশভাগ জনিত ট্রমা সম্পর্কে উত্তম বাবু কখনও কোনো রকম মন্তব্য তাঁর বন্ধু বৃত্তে করেছেন কিনা তার কোনোসঠিক ইতিহাস নির্ভর তথ্য প্রমাণ নেই । সত্যজিতের  ছবি , সত্যজিতের মননশীলতা ইত্যাদি সম্পর্কে একাধিকবার প্রকাশ্যে নিজের ইতিবাচক মনোভাব জানালেও ব্যক্তি ঋত্বিকের সঙ্গে এই গভীর বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্কনিয়ে উত্তম কুমার কেন প্রকাশ্যে  নীরবতা পালন করে গেলেন তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়।

                    উত্তম বাবুকে কাছে থেকে দেখা বেশ কিছু মানুষের দৃঢ় ধারণা ছিল যে,  বনপলাশীর পদাবলী প্রযোজনার করা উত্তম কুমার সত্যিই ঋত্বিক ঘটক কে দিয়ে একটি ছবি পরিচালনা করতে চেয়েছিলেন এবং ছবি তৈরীর যাবতীয় দায়-দায়িত্ব নিজে বহন করতে চেয়েছিলেন ।উত্তম – ঋত্ত্বিকের এই পর্যায়ের সম্পর্ক ঘিরে সেই সময় বিনোদন জগতের আর এক অবিস্মরনীয় ব্যক্তিত্ব হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে উত্তম বাবুর সম্পর্কের ওঠানামার বিষয়টিও এসে পড়ে।

                   ঋত্বিকের অকাল মৃত্যুর কারণে উত্তম বাবু তাঁকে দিয়ে ছবি করানোর যে ভাবনা ভেবেছিলেন ,সেই ভাবনাটি বাস্তবায়িত করতে পারেননি বলে তাঁর বন্ধু বৃত্তের কেউ কেউ যে ধারণা পোষণ করেছেন ,সেই ধারণার পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ না থাকলেও হেমন্ত -উত্তমের সম্পর্কের চাপানউতোর ঘিরে গুঞ্জন, ক্ষোভ ,পারস্পরিক ক্ষোভ-বিক্ষোভ ,সম্পর্কের উষ্ণতার ক্রমশ হিমশীতল পরিণতি, আবার উত্তম বাবুর জীবনের একদম শেষ পর্যায়ে শৈত্য কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা— এসব ঘিরে বাংলা বিনোদন জগতের দুই সেরা ব্যক্তিত্ব কে নিয়ে আলাপ-আলোচনা  আছেই।

                         ছয়ের, সাতের  দশকের বাংলার সামাজিক আন্দোলনের পেশাদার জগত কেন্দ্রিক প্রেক্ষিত এই সম্পর্কের চাপান- উতোরে যথেষ্ট উদ্বেলিত হয়েছিল বলে কেউ কেউ বলতে চান। পেশাদারিত্বের প্রশ্নে কোনোদিন এক বিন্দু আপোষ করেননি উত্তম কুমার ।তাই যখন তিনি খানিকটা বয়স বাড়ার সাথে সাথে উপলব্ধি করতে থাকেন যে,  রোমান্টিক নায়ক হিসেবে আর বোধহয় তাঁর অভিনয় করা  ঠিক নয়, তখন  সেই ভাবনার থেকেই তাঁরষ ধীরে ধীরে চরিত্র অভিনেতা হিসেবে নিজেকে মেলে ধরা ।অনেকের মতে এই ক্ষেত্রে উত্তমের অসামান্য সাফল্য উত্তম- হেমন্তের সম্পর্কের চাপানউতোর এ একটা বড় ভূমিকা পালন করেছিল।

                           সফল জনপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে জীবনের একটা পর্যায়ে অসম্ভব বাস্তবসম্মত পরিমিতি বোধের পরিচয় উত্তম কুমার রেখেছিলেন ।’সাড়ে চুয়াত্তর’ থেকে শুরু করে ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘ইন্দ্রানী ‘, ‘শিল্পী’ , ‘  হারানো সুর’  ইত্যাদি একের পর এক উত্তম- সুচিত্রার জনপ্রিয় জুটি যখন ‘প্রিয় বান্ধবী’ ছবিতে এসে বক্স অফিসে কোনোরকম সাফল্য দিতে পারল না ,তখনই কিন্তু উত্তম বাবু এটা বুঝে নিতে পেরেছিলেন যে, উত্তম- সুচিত্রার জুটির সেই মোহিনী মায়া নতুন করে আর কোনো রকম ব্যবসায়িক সাফল্য তাঁদের এনে দিতে পারবে না।

                      বস্তুত এই ‘প্রিয় বান্ধবী’ ছবিটি প্রযোজকের বিনিয়োগের ৭৫ শতাংশ টাকা তুলে দিতে পারলেও ২৫ শতাংশ টাকা কিন্তু তুলে দিতে পারেনি। এমনটা কিন্তু উত্তম-সুচিত্রা জুটির আগের কোনো ছবিতে কখনো ঘটেনি। ছবিটির প্রযোজক ‘হল মানি’ দিয়ে ছবিটি চালানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন,  কিন্তু মাত্র ৯ সপ্তাহ চলার পর, এই নয় সপ্তাহ প্রযোজকের আপ্রাণ চেষ্টা ই ছবিটিতে ওই সময়টুকু চলাতে পেরেছিল।তারপরছবিটি কে আর কোন অবস্থাতেই হলগুলিতে টিকিয়ে রাখা প্রযোজকের পক্ষে সম্ভবপর হয়নি ।

             এই ঘটনাটি যেমন অভিনেতা উত্তম কুমারের জীবনের পক্ষে পরবর্তী অভিনয়ের ধারা সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা নিরিখে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ই গুরুত্বের দাবি রাখে সুচিত্রা সেনের অভিনয় জগত থেকে সরে আসা নিয়ে নানা ধরনের কল্পকাহিনীর বাস্তবতার চিত্র ঘিরে ।ছবিটির বাণিজ্যিক অ সাফল্যই কিন্তু উত্তম বাবুর মতই বাস্তব বিচার বোধের প্রখর বুদ্ধির  অধিকারিনী সুচিত্রা সেনকে রুপোলী দুনিয়ার মায়াবী হাতছানি থেকে সরে আসার একটা বার্তা দিয়েছিল ।

                  উত্তম-সুচিত্রা দুজনেই  দুজনের জীবনের সফল ফিল্ম গুলির অসামান্য সাফল্যের নিরিখে  যে গ্ল্যামার তারা অর্জন করেছিলেন,  সেই গ্ল্যামার টিকে টিকিয়ে রাখতে যত্নবান ছিলেন। সেই গ্ল্যামার টিকিয়ে রাখার তাগিদই উত্তম বাবুকে নায়কের চরিত্র থেকে সফল পার্শ্ব অভিনেতার চরিত্রে অভিনয় করার দিকে অনেক বেশি করে উৎসাহিত করেছিল। গ্ল্যামার ঘিরে এই উদ্বেগ ই সুচিত্রা সেন কে ধীরে ধীরে রুপালি জগত থেকে এক ধরনের রহস্যময় পর্দার অন্তরালে নিয়ে গিয়েছিল। যে পর্দা কে ঘিরে পরবর্তীকালে নানা ধরনের আধ্যাত্মিকতা থেকে শুরু করে প্রচুর গালগল্প তৈরি হয়েছে।

                    উত্তম কুমারের এই বাস্তব বোধের পরিচয়ের   সাক্ষ্য বাহী বহু তথ্য প্রমাণ আছে,  যেগুলি পরবর্তীকালে বাংলা ফিল্মি জগত নিয়ে গবেষকদের গবেষণার কাজে সাহায্য করবে। তবে সুচিত্রা সেন  খানিকটা নিজের গ্ল্যামার ধরে রাখার তাগিদেই এই নিজের অন্তরালে চলে যাওয়ার সময় ক্ষেপের কোন তথ্য-প্রমাণ রাখেননি। নিজেকে চির রহস্যময়ী করে রাখা তাগিদেই সুচিত্রা এটা করেছিলেন।

                   নায়কের চরিত্রে অভিনয় থেকে কার্যত সরে এসে উত্তম বাবু যখন চরিত্রাভিনেতার চরিত্র গুলিতে অসম্ভব রকমের সফল হচ্ছেন, তখন কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এককালে উত্তম বাবুর লিপে সুপার ডুপার হিট হেমন্ত মুখোপাধ্যায়  কার্যত অনুপস্থিত ।সে জায়গায় উত্তম বাবুর লিপে গাইছেন প্রধানত মান্না দে। একটি দুটি গান কিশোর কুমার বা শ্যামল মিত্র ও গেয়েছেন।

                  এই পর্যায়ক্রম টিকে ঘিরে বাংলা বিনোদন জগতে একটা রহস্যের বাতাবরণ আছে। উত্তম বাবুকে কাছে থেকে দেখেছেন এমন অনেক মানুষ হেমন্ত -উত্তমের  ভেতরের  দূরত্বের আসল কারণ জানলেও উত্তম বাবুর প্রতি বিশেষ ধরনের পক্ষপাতিত্বের কারনে মূল বিষয়টি থেকে সরে গিয়ে উত্তম কুমারের পেশাদার দিকটিকেই গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন।

                  সম্পর্কের ক্ষেত্রে উত্তম কুমারের সঙ্গে এই দূরত্বের বিষয়টি কিন্তু হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে অত্যন্ত দুঃখ দিলেও প্রবল ব্যক্তিত্বের অধিকারী এবং সমসাময়িক শিল্পী ,অভিনেতাদের পেশাদার জীবনের নিরিখে অসম্ভব বেশি রকমের সমাজমনস্ক হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তাঁর স্বভাবসুলভ ব্যক্তিত্ব দিয়েই বিষয়টি সম্পর্কে নীরবতা পালন করে গেছেন।  উত্তম বাবুর জীবনের একদম অন্তিম পর্যায়ে আবারো  তাঁদের সম্পর্কের নতুন বিন্যাস টিকেই পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অনেক বেশি করে তুলে ধরার চেষ্টা করে গেছেন হেমন্তবাবু।

                       উত্তম বাবুর মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই কানন দেবী উত্তম কুমার সম্পর্কে যে মন্তব্যটি করেছিলেন ,সেটি ছিল সম্ভবত ব্যক্তি উত্তম সম্পর্কে শ্রেষ্ঠতম মূল্যায়ণ।

                         কানন বলেছিলেন ;

                “সবই ছিল উত্তমের ,ছিল না কেবল কোনো বন্ধু ।”

                এই বন্ধু না থাকাই বাংলা ফিল্ম জগতের সর্বকালের সর্বসেরা অভিনেতা উত্তম কুমারের ব্যক্তি জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছিল। যার জেরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো মানুষ, যিনি প্রকৃতপক্ষেই উত্তম বাবুর শুভানুধ্যায়ী ছিলেন , যে মানুষটির ভেতরে কখনো কোন রকম মেকি স্বভাব ছিল না, শৌখিন মজদুরি জনিত কোনো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল না , সেই মানুষটিকে ও ঋত্ত্বিক বর্ণিত সেই ‘ গাধী’ র  প্রভাবে অহেতুক এবং অনৈতিক ভাবে ভুল বুঝেছিলেন উত্তম কুমার।

                  নিজের ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন খানিকটা নিজের হাতে এলোমেলো করে উত্তম কুমার হয়তো বা কিছুটা মানসিক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে ই পড়েছিলেন ।সেই অসুস্থতার জেরেই হয়তো ভুল বুঝে বসেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় কে ।আর সেই ভুল বোঝার ক্ষেত্রে এই পর্যায়ের যে সমস্ত মানুষজন উত্তম বাবুর বেপরোয়া জীবনযাপনের  সঙ্গী সাথী ছিল, তাঁরা অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছিল।

                গান গাইবার ক্ষেত্রে, সুর করবার ক্ষেত্রে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় যেমন নিজের পরিধি সম্পর্কে অত্যন্ত বেশি রকমের সচেতন ছিলেন, কোনোদিন কোনো অবস্থাতে কোনোরকম রাগ ভিত্তিক কালোয়াতি দেখিয়ে নিজেকে পন্ডিত প্রতিপন্ন করবার তাগিদ অনুভব করেননি, তেমনি ই তিনি ব্যক্তি জীবনে ও সামাজিক জীবনে ও সর্বাংশে নিজের পরিধি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন।     

                 হেমন্ত পরিমিতিবোধ সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। পেশাদার জীবনে পারিপার্শ্বিকতার চাপে শেষ দিন পর্যন্ত কন্ঠ সাধ না দিলেও  গান গাইতে বাধ্য হয়েছিলেন পারিবারিক চাপে  কিন্তু ব্যক্তি জীবনে এক মুহূর্তের জন্যেও নিজের পরিমিতিবোধের বাইরে একটাও পা ফেলেন নি।

                  মানুষ হেমন্তের এই অনিন্দ্যসুন্দর চরিত্রটি হয়তো জীবনের একদম শেষ পর্যায়ে এসে উত্তম বাবু বুঝতে পেরেছিলেন। তাই আবারও হেমন্ত কন্ঠকে ফিরিয়ে এনেছিলেন নিজের লিপে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।