কল্পনা গুপ্ত, চিন্তন নিউজ:১৭ই জুন:- – ‘একটু কথা বলুন প্লিজ, আমার যে ভীষণ প্রয়োজন ‘- বাঁচবার করুন আর্তি নিয়ে খুব কাছের, নিজের বলে মনের ভিতর বাঁচিয়ে রাখা মানুষটার কাছে আবেদন। না, এটা কোন গল্প বা রোম্যান্টিসিজম নয়। নির্মম সত্য ঘটনা।
আজ কেন এই আত্মহনন? একাকিত্বের করাল গ্রাসে আক্রান্ত সমাজ করোনা সংক্রমণের চেয়েও যে সাংঘাতিক তা বুঝিয়ে দিয়ে গেলো সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু। অভিনয়ে সফল এক আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব।
একটু ফিরে দেখা যাক। সমাজে শিশুর শৈশব নেই। আছে স্কুল, টাস্ক, প্রজেক্ট, প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা ইত্যাদি। মা, বাবার গগনচুম্বী চাহিদার পাহাড় ডিঙোতে গিয়ে এরা এখনই ক্লান্ত। খুুব ছোট বয়স থেকে ছেলে মেয়েদের থেকে শৈশব কেড়ে নিচ্ছেে আজকের উদারনীতি। শুধু বিপনন।
উদারনীতির শিকার যদি পর্যবেক্ষণ করা যায়, তো দেখা যাবে,২০১৮ সালে চাকরি না থাকার কারণে মানসিক অবসাদে আত্মহত্যা করেছেন ১২হাজারের বেশী জন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর রিপোর্ট চমকে দিয়েছিলো। ফসলের দাম না পেয়ে মানসিক অবসাদে আত্মহত্যা করেন প্রায় সাড়ে দশ হাজার কৃষক।
নয়া উদারনীতি কেড়ে নিচ্ছে ৩৪বছরের সুশান্ত সিং রাজপুতের জীবন। ছোট থেকেই বিষ ঢালছে মুক্ত বাজার।মুক্ত অর্থনীতি বুঝিয়ে দিচ্ছে শুধুমাত্র অর্থের মূল্য আছে, বাকি অন্যকিছুর মূল্য নেই , ভালোবাসা, সম্পর্ক, সবকিছু মাপা হয় অর্থমূল্যে। প্রথম হওয়ার দৌড়ে অংশগ্রহণ করতে করতে আসছে অবসাদ। গ্লোবাল ওয়ার্মিং যেমন প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করছে। ঠিক তেমন মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করছে আজকের জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার প্রতিযোগিতা।
এই আর্থ সামাজিক কারনেই পরিবারগুলি এখন ছোট। মা, বাবা তাদের একটি সন্তান নিয়ে পরিবার, যেখানে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও প্রতিযোগিতার ঝড়ে জন্ম নিচ্ছে অবসাদের অসুখ। নয়া উদারনীতি জন্ম দিচ্ছে দুশ্চিন্তা, অবসাদ, ভয়, একাকিত্ব, কেড়ে নিচ্ছে জীবন।
যারা মানসিক অবসাদে ভুগছেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষার দিকটি বিমার আওতায় নিয়ে আসা উচিত এই মর্মে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয় সুপ্রিম কোর্টে। মঙ্গলবার শীর্ষ আদালত জানিয়েছে সব বিমা কোম্পানি যেন এই বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করে। এই মর্মে একটি নোটিশ পৌঁছেছে কেন্দ্র ও ইনসিওরেন্স রেগুলেটরি এন্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটির কাছে। পরবর্তী শুনানি দু’সপ্তাহ পরে। জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন আইনজীবী গৌরব কুমার বনশল।
সুশান্তের মৃত্যু অনেকগুলি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে প্রমানিত হয়েছে এটা মূলত গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা। গত তিনমাস ধরে নিজেকে বন্ধ রেখেছিলেন বাড়িতেই। ভুগছিলেন তীব্র মানসিক অবসাদে। মনোবিদদরা বলছেন ২০১৫সালে হু’-এর (WHO) প্রকাশিত তথ্যে জানা যায় প্রতি বছর প্রায় ৮ লক্ষ মানুষ মানসিক অবসাদের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
প্রত্যেরকের জীবনেই নানান জটিল সমস্যা থাকে,সেখান থেকে সহজে বেড়িয়ে আসা সম্ভব হয় না। কিন্তু কাছের মানুষ কাউকে বলতে পারলে মানসিক চাপ অনেকটা কমে। কিন্তু বিচ্ছিন্ন ও স্বার্থপর মানসিকতা পূর্ণ মানুষের কাছ থেকে এই সহৃদয় বন্ধুত্ব আজ বড় বিরল। তাই আজ সময় এসেছে-
সবার সন্তানদের সুস্বাস্থ্যের জন্য, ভালো মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার জন্য, এই আপোষহীন শ্রেণি ঘৃণার আগুনের দিকে হাত বাড়ানো প্রয়োজন। আর তা এখনই।