রাজ্য

তৃণমূলের সুপ্রীমোকেও বলতে হ’ল, তিনি তৃণমূল ছাড়বেন না !!


সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ২৪ জুলাই: কিছুদিন আগে, মানে মাত্র একমাস আগে তিনি কাটমানি ফেরত দেওয়ার কথা বলেছেন। আর তিনিই ২১ শে জুলাইয়ের সভাতে কাটমানি খাওয়া ছোট ছোট ভাইদের পাশে দাঁড়ালেন। কাটমানি ফেরতের সেই নির্দেশ তো দুরঅস্ত বরং পালটা হুমকি দিলেন প্রতারিত বিক্ষোভকারী মানুষদের। বললেন টাকা ফেরত চেয়ে তৃনমূল নেতাদের বাড়ি ধাওয়া করলে তিনি স্ট্রং ব্যবস্থা নেবেন। বললেন, “টাকা মাটি —মাটি টাকা। টাকা চলে যায় কিন্তু মানুষ থেকে যায়।”

২১ শে জুলাই ছিল তৃনমূলের বার্ষিক সভা। গত আট বছর ধরে পুলিশ প্রশাসনই এই সভার সব কাজ দায়িত্ব নিয়ে পালন করে। অন্যথা হয়নি কোনবার, এবারও হয়নি। কিন্তু এবার ফারাক একটা ছিল। সমাবেশের চেহারা দেখে মমতা ব্যানার্জীর ভাষন একঘন্টা এগিয়ে আনা হয়। ভাষনের মাঝে অন্তত তিনবার তাকে বলতে শোনা যায় “রেডরোড দিয়ে আসার সময় দেখলাম অন্তত চার পাঁচ লাখ লোক দাঁড়িয়ে আছে। এত্ত মানুষ, যেন ব্রিগেড হচ্ছে।”

তার এই বক্তব্যের সময় সমাবেশের স্থল থেকে মাত্র কয়েকশো মিটার দূরে মেট্রো সিনেমার সামনের রাস্তা ফাঁকা। এতটাই ফাঁকা যে দু’দুটো পাঞ্জাব লরী অনায়াসে পাশাপাশি যেতে পারে। এস.এন ব্যানার্জী রোড তার অনেক আগেই ফাঁকা। মাইকে তখন ঘোষনা করতে হচ্ছে, “কেউ মুখ্যমন্ত্রীর ভাষন শেষ হওয়ার আগে যাবেন না, চলে আসুন।” কিন্তু কে শোনে কার কথা।

২১ শে জুলাই এর সভাতে মমতা ব্যানার্জীকে বার বার বলতে শোনা গেল টাকার জন্য কেউ বিজেপি তে যাবেন না এবং তার কর্মীদের বারবার সতর্ক করতে হল। তারপরেই এক অদ্ভুত চমক। মুখ্যমন্ত্রী ভাষন শুরু করেছিলেন পৌনে একটা নাগাদ। বললেন তিনি ব্যালটে ভোট চান। তারপরেই বলে বসলেন, “আমাকে সিবিআই দিয়ে গ্রেপ্তার করা হলেও আমি তৃনমূল ছাড়ব না। তৃনমূলই আমার স্বপ্ন আর তা নিয়েই বাঁচব।”

তার এই কথা শুনে তার ভাইরা হতভম্ব হয়ে গেছে ততক্ষণে। তার কি তৃনমূল ছাড়ার ভাবনা এসেছিল? যে হারে তৃনমূল ছেড়ে কর্মীরা বিজেপি তে চলে যাচ্ছে তাতে নিজেকেই এমন কথা বলতে হল, “আমি তৃনমূল ছাড়ব না।” এবারের ভাষনে অভিষেক, ববি হাকিম, শুভেন্দু শুধু মাইকের অধিকার পেয়েছেন। আর পেয়েছেন শিউলি সাহা। কারণ তার বিজেপি তে যাওয়ার জোর সম্ভাবনা।

তাহলে এবারের বার্তা কি? গত ২১শে জুলাইয়ের বার্তা ছিল তিনি দিল্লী দখল করবেন এবং প্রধানমন্ত্রী হবেন। কি হল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এবার ২১শে জুলাই বললেন, “২০২১ এর বিধানসভা ভোট এখন অনেক দেরী, পরে বলব।” এবার তিনি সবার কানে কানে বলবেন তৃনৃূমূল কাউকে ভয় পায় না।

তার ভাষনে ঘুরেফিরে এসেছে “কাটমানি”। নজরুল মঞ্চে বলেছিলেন, “কেন সরকারি প্রকল্পে ২০% টাকা নেওয়া হবে? বাংলার আবাস যোজনা থেকে কেন ২৫ হাজার টাকা নেওয়া হবে? সমব্যাথি প্রকল্পের মাত্র ২০০০ টাকা থেকে কেন ২০০ টাকা নেওয়া হবে? এগুলো করবেন না। যারা টাকা নিয়েছেন তারা ফিরিয়ে দিন। এর পর রাজ্য জুড়ে প্রতারিত মানুষজন তৃনমূল নেতাদের ঘেরাও, বাড়ি ধাওয়া ও গাড়ী ভাঙচুর করেছে। অনেক জায়গায় রেগা বা আবাস যোজনার প্রকল্পের টাকা ফেরত দিয়েছে। এই নিয়ে প্রায় জায়গায় উত্তেজনা-সংঘর্ষ হয়েছে।

আর এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী বললেন তিনি নাকি একটা ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে কাটমানি ফেরতের কথা বলেছিলেন। যাতে সরকারি প্রকল্পের টাকা কাউকে ভাগ দিতে হবে না। কিন্তু সবাই এমন শুরু করলেন তৃনমূল নেতাদের টাকা ফেরত দিতে হবে। বিরোধীদের তিনি কুচো চিংড়ি, ল্যাটা মাছ বলে সম্বোধন করতেও ছাড়লেন না।

বললেন কেউ কোন টাকা ফেরত দেবেন না, ফেরত চাইলে পুলিশ দিয়ে পালটা পদক্ষেপ নেবেন। নেত্রী বললেন, “এবার ছেলেদের স্লোগান হবে ব্ল্যাকমানি ফেরত দাও।” কিন্তু কাকে ফেরত দিতে হবে সেটা বলেন নি। এ বিষয়ে তিনি অভিষেক, শুভেন্দুদের আন্দোলন করতে বলেছেন। আরও বললেন, “কারা টাকা খেয়েছে, ভোটের সময় কে টাকা ছড়িয়েছে, সবার উপর নজর রাখুন, নাম লিখে রাখুন।”

সিপিআইএম কে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে আক্রমন করলেন। গত আট বছরে যে কাজ তিনি করতে পারেন নি, বারবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সেই একই কথা বললেন আবার সিপিআই এম এর সব পুরনো মামলা সব টেনে বার করবেন।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।