রাজ্য

বিরাট লুঠ, ধরল অডিট রিপোর্ট


সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ১৯ নভেম্বর: পুরুলিয়া জেলা জুড়ে চাঞ্চল্য; অডিট রিপোর্টে ধরা পড়েছে গরীবদের রেগা খাতের টাকায় কেনা হয়েছে দামী ফোন, দামী টি.ভি.। পুরুলিয়া জেলার একটি বিশেষ পত্রিকা “একশো তে একশো”, অডিট সংস্থা এই পত্রিকার খরচের হিসাব করছিল আর তাতেই জানা গেছে এই বিরাট লুঠের খবর। দুর্নীতি, টাকা লুঠে ১০০তে ১০০ ছাপিয়ে গেছে। গত বছর ৭ই অগাস্ট জেলার সাফল্য লিখে রাখার জন্য এই পত্রিকাকে পেমেন্ট করা হয়েছে ১ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা। মাসের শেষে ড্রাইভেন খাতে খরচ করা হয় ২ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা, এর দু-দিন যেতে না যেতেই গত ২০১৮ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর খরচ করা হয় ৩ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা। শেষ খাতের খরচ দেখানো হয়েছে ৬ দিনের খরচ হিসেবে।

৭ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা খরচ করে থেমে থাকেনি ১০০ তে১০০ পত্রিকা। অডিট সংস্থার রিপোর্ট বলছে ২০১৮ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর “ডালমিয়া কম্পিউটার”কে পেমেন্ট করে ৪লক্ষ ৪১ হাজার টাকা। এই পেমেন্ট হয় ওই পত্রিকার ফটো শ্যুট, ডিজাইন, আর্ট ওয়ার্কের জন্য। এই বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করেছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন, কিন্তু এর টেন্ডারের কাগজ পত্র দেখাতে পারেনি অডিট টিমকে। এত টাকা খরচের যৌক্তিকতা বোঝাতে প্রয়োজনীয় কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি অডিট টিমকে। এত টাকা খরচ করেছে স্রেফ কোটেশন নিয়ে। কিন্তু সেখানেও দুর্নীতির গন্ধ। এই পত্রিকার গোটা কাজের জন্য মাত্র চারটি সংস্থার কাছ থেকে কোটেশন নেওয়া হয়েছে এবং এই সংস্থা গুলোর মধ্যে আঁতাত স্পষ্ট। কারণ একটাই প্রিন্টার থেকে কোটেশন দেওয়া হয়েছে। কালো দাগের যে কালি ব্যবহার করা হয়েছে চারটি কোটেশন, তা এক।

অডিট টিম ২০ লক্ষ টাকার হিসেব খুঁজতে ফরেনসিক অডিটের সুপারিশ করেছে। ২০১৮-১৯ সালে ১০০ দিনের কাজে বিপুল দুর্নীতি উঠে এসেছে অডিট রিপোর্টে। শাসক দল ও জেলা প্রশাসন যৌথ ভাবেই নয়ছয় করেছে কোটি কোটি টাকা। কেনা হয়েছে দামী মোবাইল, ল্যাপটপ, রাজকীয় ভাবে সাজানো হয়েছে অফিস ঘর, খাওয়া দাওয়া, গাড়ির তেলের দাম হিসেবে খরচ করেছে টাকা। গরিবের পাওনা টাকাতে কেনা হয়েছে ফ্ল্যাট রঙিন টিভি। ৬৮ হাজার টাকা খরচ করে মোবাইল ফোন কেনা হয়েছে, মডেল স্যামসাঙ “এস ৯+জি ৯৬৫” সেট, ১২৮ জিবি। রেগার কাজের জন্য এত দামী মোবাইল ফোন কেন? এর কোন সদুত্তর দিতে পারেনি জেলা প্রশাসন। অডিট টিম বলেছেন ক্যাশবুকে একাধিক ফোন কেনার উল্লেখ আছে। শুধু একটা মোবাইলেই শেষ নয়, কোনরকম প্রয়োজন ছাড়াই ৩৮ হাজার ৯৯৫ টাকা খরচ করে কেনা হয়েছে আর একটা ফোন। কে ব্যবহার করছে এমন দামী মোবাইল?

খরচের শেষ নেই; ৭২ হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে একটা ৩২ ইঞ্চি আর একটা ৪৩ ইঞ্চির সোনি টি.ভি. কেনা হয়েছে। কিন্তু টি.ভি কোথায়? ১০০ দিনের কাজে এতো দামী টি.ভি.! উত্তর দিতে পারেনি জেলা প্রশাসন। পুরুলিয়া জেলা পরিষদ ভবনের নীচে আছে সুরুচি ক্যাটারিং গোষ্ঠী। এটা একটা স্বনির্ভর গোষ্ঠী। বিতর্কে এই গোষ্ঠীও। গত বছর ৭ই অগাস্ট একটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়েছিল ঊষর মুক্তি সভাঘরে। শুধু খাওয়ার জন্য এই গোষ্ঠীকে ১ লক্ষ ১৮ হাজার টাকার বিল পেমেন্ট করা হয়েছে। সেটিও নজরে এসেছে অডিট টিমের। যথারীতি এতেও কোন টেন্ডার বা কোটেশন ছাড়াই বিল মিটিয়ে দেওয়া হয়।

১০০ দিনের কাজের টাকা খরচ করার পর অডিট করার কথা আইনে সুষ্পষ্ট ভাবে লেখা আছে। কোন চাটার্ড অ্যাকাউন্ট ফার্ম অডিট করবে তা রাজ্য সরকারই ঠিক করে দেয়। সেই অডিট টিমের সামনে আসে গরিব মানুষের কাজের নিশ্চয়তার টাকা নির্বিচারে লুঠের কথা। এই লুঠের বিরুদ্ধে পথে নামতে চলেছে সিপিআইএম পুরুলিয়া জেলা কমিটি। পার্টির জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, “১০০ দিনের কাজের টাকায় সীমাহীন দুর্নীতি ও লুঠের প্রতিবাদে বুধবার জেলার প্রতিটি ব্লক অফিসে আন্দোলনে সামিল হবেন সাধারণ মানুষ।”


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।