কলমের খোঁচা

কমিউনিস্ট নেত্রী ক্লারা জেটকিনের প্রয়ানদিবসে চিন্তনের শ্রদ্ধা নিবেদন।


প্রতিবেদনে কল্পনা গুপ্ত, চিন্তন নিউজ,২০ শে জুন ২০২১ – জার্মানে কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ক্লারা জেটকিনের মৃত্যু হয় ৭৫ বছর বয়েসে ১৯৩৩ সালের ২০ শে জুন। তাঁর ” নারী অধিকারের” জন্য লড়াই, সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য যে লড়াই সেই সময়ের এক প্রতিকূল সামাজিক শ্রেণি বৈষম্যের বিরুদ্ধে তা তাঁকে চির অমর ও স্মরণীয় করে রাখবে।

১৮৫৭ সালের ৫ ই জুলাই ক্লারা আইজেনারের জন্ম হয় জার্মানির স্যাক্সোনি প্রদেশের উইডারউ গ্রামে। তাঁর পিতা গডফ্রাইড আইজেনার ছিলেন একজন শিক্ষক ও প্রোটেস্টান্ট চার্চের সংগঠক। মা জোসেফিন ভিটালে আইজেনার ছিলেন লিপজিগেরএক সম্ভ্রান্ত, সুশিক্ষিত পরিবারের মেয়ে যিনি ফরাসি বিপ্লবের এক দৃঢ সমর্থক। ক্লারা জেটকিন যখন জন্মেছিলেন সেই সময়ে মেয়েদের পড়াশোনা, সমাজে সমানাধিকারের সুযোগ ও মর্যাদা বিশেষ ছিলো না। কিন্তু ক্লারা বিদ্যালয় স্তর থেকে মহাবিদ্যালয় পর্যন্ত লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন মাতুলালয়ের সহযোগিতায়। ছোট থেকেই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও ক্রমশ তিনি সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। এইভাবে তিনি ১৮৭৪ সালে জার্মানীর নারী আন্দোলন ও শ্রম আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। কলেজে পড়ার সময়ে তিনি একজন সোস্যালিস্ট হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৮৭৮ সালে ক্লারা নারীমুক্তির লক্ষ্যে জার্মানির সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক দলে যোগ দেন। এই দলটি ১৮৯০ সালে আধুনিকরূপে নামগ্রহন করে। নাম হয় – সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ জার্মানি।

১৮৭৮ সালে বিষমার্ক জার্মানিতে সমাজতন্ত্র বিরোধী জরুরী আইন ও সমাজতান্ত্রিক কাজকর্মের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে জেটকিন ১৮৮২ সালে জুরিখ থেকে প্যারিসে নির্বাসনে চলে যান। এই সময়ে তিনি সমাজতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক গঠনে মন দেন। সেখানে রাশিয়া থেকে পালিয়ে আসা মার্কসবাদী বিপ্লবী ওসিপ জেটকিনকে বিয়ে করেন। ক্লারা জেটকিনের সাথে রোজা লুক্সেমবার্গ এর গভীর বন্ধু গড়ে উঠেছিলো এবং দুজনেই নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পক্ষে সোচ্চার হয়ে ওঠেন।

ক্লারা ১৮৯৬ সালে অনুষ্ঠিত তার পার্টি কংগ্রেসে নারী সমস্যার ওপর বিশেষ বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত মালিকানাই হচ্ছে নারী নিপীড়নের মূল উৎস। সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদই পারে নারী নিপীড়নের মূল শেকড় উপরে ফেলতে। প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে কমিউনিস্ট নেত্রী ক্লারা জেটকিন সর্বপ্রথম রাষ্ট্র ও সমাজজীবনে পুরুষের সাথে নারীর সমানাধিকারের দাবী তোলেন। ১৯১০ সালে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক কর্মজীবী নারী সম্মেলন হয় কোপেনহেগেনে। সেখানে ১৭ টি দেশের নারী প্রতিনিধি যোগ দেয়। জার্মানির সমাজতান্ত্রিক দলের নারী কার্যালয়ের নেত্রী হিসাবে তিনি যোগ দেন ও ৮ ই মার্চকে আন্তর্জাতিক সর্বহারা ও নিপীড়িত নারীদের অধিকার আদায়ের প্রতীক দিবস করার প্রস্তাব দেন। এরপর থেকেই পৃথিবীব্যাপী ৮ ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারীদিবস পালিত হচ্ছে

১৯৩২ সালের ৩০ শে আগস্ট ফ্যাসিবাদী একনায়কত্বের বিরুদ্ধে তিনি বক্তৃতা দেন। তিনি শ্রমজীবী সর্বহারা নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন,… ফ্যাসিবাদে তোমাদের শুধু দাসী ও সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র বানাবে। ভুলোনা সেই নারী যোদ্ধাদের যারা ফ্যাসিবাদের হাতে প্রাণ দিয়েছে। এই সময়েই জার্মান ফ্যাসিস্টদের হাতে গ্রেফতার হন এবং তাদের অত্যাচারে ১৯৩৩ এর ২০ শে জুন ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৩৮ সালের ৮ ই মার্চ নারীমুক্তির মহান নেত্রী ক্লারা জেটকিনকে ” অর্ডার অফ লেনিন” মর্যাদায় ভূষিত করা হয়। এই মহান যোদ্ধা নেত্রীকে চিন্তন সশ্রদ্ধ অভিবাদন জানায়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।