দেবু রায়, চিন্তন নিউজ, ২৯ শে জুলাই,২০২৩:- ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে বোম্বাইয়ে প্রায় ৯০ হাজার শ্রমিক যুদ্ধবিরোধী ধর্মঘটে যোগ দেন কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে। যদিও সেই আন্দোলন সেভাবে ছাপ ফেলতে পারেনি। ইতিমধ্যে জাতীয় কংগ্রেস গান্ধীজির নেতৃত্বে ব্রিটিশ ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু করে। আবার এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের পক্ষে লড়াই করার জন্য জনসঙ্ঘ (অধুনা আরএসএস) মানুষের কাছে আবেদন জানান। তাঁদের মধ্যে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ছিলেন অন্যতম।
ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হওয়ার সাথে সাথে ব্রিটিশ সরকার দেশের প্রথম সারির নেতাদের গ্রেফতার করতে শুরু করে। গান্ধীজি সহ বহু কংগ্রেস নেতা এবং কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা কারারুদ্ধ হন। যদিও জনসঙ্ঘর প্রথম সারির কোনো নেতা গ্রেফতার হন নি। ঠিক এই সময় দেশের প্রথম সারির নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে দিল্লি, বোম্বাই, আমেদাবাদ, কানপুর, লাখনৌ, সুরাট, নাগপুর প্রভৃতি স্থানে শ্রমিকরাও ধর্মঘট, হরতাল পালন শুরু করে দেয়। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি রাজনৈতিক দিশা না দেখাতে পারার জন্য শ্রমিক আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যায় এবং দুর্বল হয়ে পরে।
১৯৪৫-৪৬ সালে আজাদ হিন্দ ফৌজের বন্দি সেনাদের বিচারের প্রতিবাদে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে বিভিন্ন জায়গাতে। ১৯৪৬-৪৭ সালে গন আন্দোলনে শ্রমিকরা পিছিয়ে থাকেনি। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইতে শ্রমিকরাও সামিল হয়ে ছিলো। ১৯৪৫ সালে মাদ্রাস অধিবেশনেই “অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস” এই মর্মে সিদ্ধান্ত নেয় যে, ইংরেজরা যেন অবিলম্বে ভারতবাসীদের স্বাধীনতা দেয়। ১৯৪৬-৪৭ বছর গুলোতে দেশের শ্রমিক শ্রেণী আরও সংঘবদ্ধ হয়ে তীব্র লড়াই আন্দোলন শুরু করে। এই সময়ে বাংলাতেও ট্রাম কর্মচারীরা বা হাওড়া ইঞ্জিনারিং শিল্পে কর্মরত শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করেন। শুধু কলকাতাতেই নয় কানপুর, কোয়েম্বাটুর, মাদ্রাস প্রভৃতি জায়গাতেও ধর্মঘট পালিত হয়ে ছিল। শুধু ১৯৪৬ এ সারা ভারতে প্রায় ২৮/২৯ টার মতো ধর্মঘট শ্রমিকরা পালন করেন এবং ধর্মঘট পালনে শ্রমিকদের অংশের সংখ্যা প্রায় সারে উনিশ লাখের মতো।
১৯৪৬ সালে বোম্বাইতে হওয়া নৌ বিদ্রোহের সমর্থনে কমিউনিস্ট নেতা বি. টি. রনদিভের নেতৃত্বে বিরাট সংখ্যক শ্রমিকরা বিক্ষোভ এবং ধর্মঘট পালন করে মানুষের মাঝে সারা ফেলে দিয়েছিলো। শ্রমিকরা নৌ বিদ্রোহকে সম্পূর্ণ ভাবে সমর্থন জানায়। এই ভাবে শ্রমিক আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াই এবং তার সাথে – সাথে নিজেদের দাবি দাওয়া গুলোকে লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাবে কমিউনিস্ট পার্টি তার ফসল নিজেদের ঘরে তুলতে পারেনি। বরঞ্চ কংগ্রেস সহ কিছু দক্ষিণপন্থী দল শ্রমিকদের লড়াইয়ের ফসলটা তুলেছিল নিজেদের ঘরে।
তবুও নৌ বিদ্রোহের ফলে ব্রিটিশ সরকারের ভীত নাড়িয়ে দেয়। মানুষ শ্রমিক শ্রেণীর লড়াই দেখে আরও বেশী প্রভাভিত হয়। একমাত্র তৎকালীন জনসঙ্গ ছাড়া। বি টি রণদিভে র নেতৃত্বে নৌ বিদ্রোহ দেখে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়। এবং সেই সময় দেশের অন্যান্য কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরাও কমিউনিস্ট দের আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করে। শুরু হয় ইতিহাসের নতুন অধ্যায়।