মল্লিকা গাঙ্গুলি: চিন্তন নিউজ:২রা মে :- সমগ্র বিশ্ব তথা দেশ ভয়ংকর মারণ ভাইরাস কোভিড- ঊনিশ অতিমারির সংকটে বিপর্যস্ত! ইতিবাচক ভাবনা ভাবতেও এখন মানুষ কুন্ঠিত। তবু কিছু কিংবদন্তি মানুষ তাদের কীর্তি দ্বারা মানুষের হৃদয়ে জীবিত থাকেন তাঁদের সৃষ্টিসম্ভার আমাদের সাময়িক সব যন্ত্রণা ভুলিয়ে দেয়! বাংলা ও বাঙালী এমন বহু ক্ষণজন্মার দ্বারা সমৃদ্ধ। নানান ব্যস্ততায় আর পাঁচটা দিনের মতোই আমরা ভুলে যাই এমন বিশিষ্ট জনের জন্ম বা মৃত্যু দিবস।
আজ ২রা মে এমনই একটা বিশেষ দিন আজকের দিনটি সত্যজিত রায় এবং পুলক বন্দোপাধ্যায় বাংলার এই দুই বিরল প্রতিভার জন্মদিন। শ্রদ্ধেয় সত্যজিত রায়ের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান জানিয়ে বিশিষ্ট গীতিকার ও সঙ্গীত কার পুলক বন্দোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন…..বাংলা সঙ্গীত জগতে পুলক বন্দোপাধ্যায় আজও সমান জনপ্রিয় নাম। নির্বাক যুগের চিত্রনায়ক কান্তিভূষন বন্দোপাধ্যায়ের পুত্র পুলক বন্দোপাধ্যায় ১৯৩১ সালের ২রা মে হাওড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। এখানেই তাঁর বেড়ে ওঠা। কলকাতা স্কটিশচার্চ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তার পরিবার ছিল সংস্কৃতি জগতের সঙ্গে যুক্ত। বিশেষ করে সঙ্গীত নাটক ও সাহিত্যে পরিবারের যথেষ্ট খ্যাতি ছিল। এই পারিবারিক পরিমণ্ডল থেকেই পুলক বন্দোপাধ্যায় একজন স্বনামধন্যা সঙ্গীতকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
বিশেষ করে ১৯৬০-৭০ এর দশকের টলিউড ও বলিউড সিনেমা জগতে পুলক বন্দোপাধ্যায় ছিলেন শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতকার। স্বর্ন যুগের তাবড় তাবড় শিল্পী যেমন অখিলবন্ধু ঘোষ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, গীতা দত্ত, শ্যামল মিত্র, ভূপেন হাজারিকা, প্রতিমা বন্দোপাধ্যায়, আরতি মুখার্জি, থেকে লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলের মত অগণিত শিল্পীর কন্ঠে পুলক বন্দোপাধ্যায়ের গান খ্যাতি অর্জন করেছে! আর মান্না দে পুলক বন্দোপাধ্যায় তো স্বর্ণ যুগের সফল জুটি। মান্না দে পুলক বন্দোপাধ্যায় জুটির অনেক গল্প প্রচলিত আছে। সঙ্গীত জগতে উভয়ের এই যুগলবন্দি সঙ্গীত প্রিয় মানুষ কোনো দিন ভুলবে না।
দিল্লির এক অনুষ্ঠানে ভূপেন হাজারিকা মান্না দে কে জিজ্ঞেস করেছিলেন “তুমি এত সুন্দর করে গাও কি ভাবে”? মান্না দে হেসে উত্তর দিলেন “যদি পুলক বাবুর জন্ম না হতো তবে আমি বোধহয় গাইতেই পারতাম না”। আবার একবার ঢাকা শহরে এক অনুষ্ঠানে মান্না দে যত গান গাইলেন তার বেশির ভাগই দুঃখের গান পুলক বাবুর লেখা। জলসা শেষে মহিলা শ্রোতারা পুলক বন্দোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চান তাদের প্রিয় শিল্পীর এত দুঃখ কিসের? পুলক বাবু হেসে বলেন “ওটা মান্না দার ব্যাপার, ওনাকে জিজ্ঞেস করুন।” মহিলারা মান্না দের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন “পুলক বাবুই জানেন উনি আমাকে দিয়ে যা গাইয়ে নেন আমি তাই গাই”… এমন অনেক গল্প।।
তাঁর আত্মজীবনী- “কথায় কথায় যে রাত হয়ে যায়”- থেকে জানা যায়- কতদিন পরে এলে, এমন একটি ঝিনুক খুঁজে পেলাম না, যা যা বেহায়া পাখি যা, আজ মন চেয়েছে, থেকে সে আমার ছোটো বোন, আমি তার ঠিকানা রাখি নি, দীপ ছিল শিখা ছিল,…. এমন অসংখ্য গান আর অগণিত শিল্পী পুলক বন্দোপাধ্যায়ের সৃষ্টি দ্বারা নিজেরা সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং সঙ্গীত জগৎ কে ঋদ্ধ করেছে!
অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এমন এক দরদী মরমী শিল্পী ১৯৯৯ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর ভরা গঙ্গায় লঞ্চ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন! কোন্ গোপন যন্ত্রণা বুকে চেপে তাঁর ভালোবাসার রাজপ্রাসাদে নিশুতি রাত গুমরে কেঁদে উঠে অকালে ঝরে গেল সঙ্গীত জগতের এমন সম্পদ! কিন্তু পুলক বন্দোপাধ্যায়ের অকাল প্রয়াণে রিক্ত হলো, নিঃস্ব হলো বঙ্গ সংস্কৃতি। স্বর্ন যুগের স্বর্নশিল্পীর আজ এই নব্বই তম জন্ম দিবসে গীতি কার সুরকার পুলক বন্দোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধায় সম্ভ্রমে স্মরণ করি! পুলক বন্দোপাধ্যায় দৈহিক ভাবে উপস্থিত না থাকলেও তাঁর গান প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাঙালী হৃদয়ে বিরাজ করবে। বাংলার সুস্থ সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গীত জগতের স্মরণীয় নাম পুলক বন্দোপাধ্যায়ে।।