কলমের খোঁচা

বলশেভিক বিপ্লবের পটভূমি তৃতীয় এবং শেষ অধ্যায়


দেবু রায়, চিন্তন নিউজ, ১ মার্চ: তিনশো বছর ধরে রোমানোভ রাজবংশের শাসনে রাশিয়ার জাতীয় অর্থনীতি এক বিধ্বস্ত অবস্থার মধ্যে ছিলো। জাতীয় অর্থনীতি একবারে ভেঙ্গে পরে। তার উপর ১৮৯১-৯২ সালে দুর্ভিক্ষ রুশ অর্থনীতিকে আরও ধ্বংস করে দেয়। সেই সময়ে কৃষি উৎপাদন ব্যাপক ভাবে হ্রাস পায়। রাশিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৫% ছিলো কৃষক শ্রেনি। দ্বিতীয় আলেকজান্ডার রাশিয়া থেকে ভূমিদাস প্রথা উচ্ছেদ করলেও কৃষকের অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয় নি। কেবল শোষকের পরিবর্তন হয়েছিল মাত্র। জমিদারদের অধিকার হস্তান্তরিত হয়েছিল মারে নামে গ্রাম সমিতির উপর। শোষিত কৃষক শ্রেনীর অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে প্রধানমন্ত্রী স্টালিপিন কয়েকটা আইন পাস করেন যার মধ্যে গ্রাম সমিতির উপর জমির মালিকানা তুলে দেওয়া হয় এবং মুক্তিপ্রাপ্ত ভূমিদাসদের প্রদেয় জমি বাবদ ক্ষতিপুরন বন্ধ করে দেয়া হয়।

স্টেপলিংয়ের আইনের ফলে বহু কৃষক জমির মালিকানা লাভ করেন যেটাকে ইতিহাসে বুর্জুয়া কৃষি বিপ্লব বলা হয়। তথাপি কৃষকদের জীবনে আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিলো না। কৃষকদের দারিদ্রতার সুযোগে জেন্ত্রী ও কুলার্ক শ্রেনি তাঁদের জমি কিনে নিয়ে কৃষক দের ভূমি হীন মজুরে পরিনত করে। আবার সেই সময়ে সমগ্র রাশিয়ার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিলো প্রচুর বেশি। ১৮৬১ সালে ৭৩ মিলিয়ন থেকে ১৯১৭ সালে বিপ্লবের আগে জনসংখ্যা হয় ১৭০ মিলিয়ন। এই জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য কৃষকরা নতুন করে জমি বন্টনের দাবি করে জার সরকারের কাছে। ফলে সমস্যা আরও জটিল আকার নেয়। তাঁদের নেতৃত্ব দিতে থাকে বলসেভিক পার্টি। কৃষকরা বিদ্রোহী হয়ে উঠে, বিদ্রোহী কৃষকরা জমিদার দের খেত খামার লুট করতে শুরু করে। তাঁদের দাবি ছিলো “লাঙ্গল যার জমি তার।” কৃষকদের সাথে জমিদার দের লড়াইতে যেমন অনেক কৃষকের মৃত্যু হয় তেমনি অনেক জমিদারদেরও মৃত্যু হয়। এই ভাবে জমিদাররা মধ্যযুগীয় বর্বরতা এত দিন ধরে কৃষকদের উপর চালিয়ে আসছিলো। মহান লেনিনের নেতৃত্বে কৃষকরা জমিদার দের জমি থেকে উৎখাত করে।

রাশিয়ার মোট জন সংখ্যার মাত্র ১৫% ছিলো শ্রমিক (বিপ্লবের আগে)। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে রাশিয়াতে শিল্প বিপ্লবের জন্য (যেটা ইউরোপে হয়েছিল, তার কিছুটা প্রভাব রাশিয়াতেও পড়েছিল) কিছু কল কারখানা গড়ে উঠেছিলো। তবে এই কল কারখানাগুলোর অধিকাংশ মালিক ছিলো রাশিয়ার অভিজাত শ্রেনি, ফরাসি, জার্মানের পুঁজিপতিরা। এদের শোষন মূলক ভূমিকার জন্য শ্রমিকদের মধ্যে ছিলো চাপা তীব্র ক্ষোভ, অসন্তোষ, কারন শ্রমিক শ্রেনিকে তখন অল্প মজুরিতে উদয়স্ত পরিশ্রম করতে হতো। তার সাথে তাঁদের থাকতে হতো অস্বাস্থকর পরিবেশে, তাঁদের কাটাতে হতো বস্তিবাসির জীবন। জীবনের এই অভিশাপ সাধারন রুশ শ্রমিকদের জীবনকে আরও দুর্বিসহ করে তুলেছিলো।

সেই সময়ে শ্রমিকরা যাতে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে লড়াই না করতে পারে তার জন্য ট্রেড ইউনিয়ন করা ছিলো নিষিদ্ধ (যেমন আজকে মোদীজি চাইছেন তাই নানা রকম বিল আনতে চাইছেন)। যাই হোক সেই সময়ে রুশ বলশেভিক পার্টি ধীরে ধীরে শ্রমিক কৃষকদের একত্রিত করে মালিক শ্রেনি এবং জারদের বিরুদ্ধে লড়াই করার উস্কানি দিতে শুরু করে। শুরু হয় শ্রেনিহীন, শোষণহীন সমাজ গড়ার লড়াই, যার নেতৃত্বে একেবারে সামনের সারিতে আসেন কম. লেলিন। তার পরের অধ্যায় ঐতিহাসিক নভেম্বর বিপ্লব নামে বিখ্যাত।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।