মিতা দত্ত: চিন্তন নিউজ:১০ ডিসেম্বর:- আজ বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে একটু স্মৃতির পাতা উল্টে ঘুরে আসা যাক আদি সাম্যবাদী সমাজে। যে সমাজে সকলে মিলে একসাথে না শুধু একজোট হয়ে থাকতো। ফলত জন্মসূত্রে পাওয়া স্বাধীনতা, সমান মর্যাদা মানুষ ভোগ করতো। সমাজে কোনোরকম ভেদাভেদ না থাকায় মানুষের অধিকার লঙ্ঘিত হতো না । শুরু হলো গোষ্ঠী শাসন। গোষ্ঠীপতি নাম দিয়ে যখন কেউ একজন গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করলো তখন থেকে মানুষের অধিকারও আক্রান্ত হলো।
সভ্যতার ঘোড়া ছুটতে লাগল ,মানুষের মধ্যে বিভেদ শুরু হলো। সামাজিক জীবনকে বাঁধতে এলো শাসক । সমাজ ও শাসকে দেখা দিলো দ্বন্দ্ব। মানুষের জন্মগত অধিকার অর্থাৎ মানবাধিকার শাসকের করায়ত্ত হলো। শাসক শাসিতের ওপর তার আধিপত্য বজায় রাখার জন্য নতুন এক শাসক এলো। সে হলো ধর্মীয় শাসক। দুই শাসকের গাঁটছড়ায় সরলমতি মানুষ ভুলেই গেলো যে তার পৃথক সত্তা আছে। নানা ধর্ম নানা অনুশাসনে কথা বললেও মানুষের অধিকার কিন্তু মানুষের অধরাই থেকে গেলো।
শাসক নিজেকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে ঘোষণা করে স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করল। মানুষ ভুলেই গেলো সে মানুষ । কখনো ক্রীতদাস, কখনো ভূমিদাস। সৃষ্টি হলো শ্রেণীববৈষম্য। স্বাভাবিকভাবে বৈষম্যহীনতা দূর করার জন্য চলল জীবনপণ লড়াই । সভ্যতার ছুটন্ত ঘোড়া নিয়ে এলো সাম্রাজ্যবাদ। পরপর দুটো যুদ্ধ। যুদ্ধের হাত ধরে এলো দুটো ব্যবস্থা। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ব্যবস্থা, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার ব্যবস্থা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানবাধিকার স্থাপনের একটা চেষ্টা রাষ্ট্রসংঘ করল। সেই চেষ্টার প্রাথমিক কাজ হিসেবে আজকের দিনটি মানবাধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু ঘোষিত হলেও সেটি রূপায়িত হয় না তার প্রমাণ আমরা দেখছি পাচ্ছি গোটা পৃথিবীজুড়েই ।ভারতবর্ষ ও আমাদের রাজ্যের দিকে যদি তাকাই তবে দেখতে পাবো প্রতিক্ষণে মানবাধিকার বিভিন্নভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। নামে গণতন্ত্রে কাজে একনায়কতন্ত্র চলছে। শাসক ভুলেই যাচ্ছে সে জনপ্রতিনিধি।
তাই , আলংকারিক এই গণতন্ত্রে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা সোনার পাথরবাটি। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে একমাত্র সেই ব্যবস্থায়, যেখানে মানুষ , মানুষ বলে পরিচিত হবে। সেই শ্রেণীহীন সমাজই পারে মানষকে মানুষের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে। তাই এই দিবসে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই জারী রাখার শপথ নিতে হবে।