কৃষ্ণা সাবুই, চিন্তন নিউজ: ২৫ জুন: ২০২২:–
আজ ২৫শে জুন,কবি, ছড়াকার সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের প্রয়ান দিবস। তিনি জন্মেছিলেন ২৪পরগনার নিমতায়।
বাবা রজনীনাথ দত্ত। মা মহামায়া দেবী।
ঠাকুরর্দা ছিলেন অক্ষয় কুমার দত্ত ‘তত্তবোধিনী’
পত্রিকার সম্পাদক।
তিনি সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রাস পাশ করেন ১৮৯১ সালে।স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে এফ এ পাশ করেন কিন্তু বি এ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। তারপর তিনি পিতার ব্যবসায় যুক্ত হন।
কিন্তু কবি মন তখন মাইকেল মধুসুদন দত্ত, অক্ষয় কুমার প্রমুখের কবিতায় বিশেষভাবে অনুপ্রানিত । তাই, ব্যবসা ছেড়ে পুরোপুরি সাহিত্য চর্চা শুরু করেন।
সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন সাহিত্য জগতের এক উজ্বল জ্যোতিষ্ক।বিংশ শতাব্দীর প্রথম সারির অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি, ছড়াকার।রবীন্দ্রযুগে তিনি ছিলেন খ্যাতনামা ছন্দ রাজ। তাঁর কবিতায় ছন্দের কারু কাজ,শব্দ ও ভাষার যথোপযুক্ত ব্যবহারের কৃতিত্ত্বের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ছন্দের যাদুকর আখ্যায়িত করেন।
সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন প্রথম কবি,যিনি সফলভাবে বাংলা কবিতায় ছন্দের পাশাপাশি,সংস্কৃত,
আরবি, ফার্সি গ্রীক ইত্যাদি ছন্দ সুচারুরুপে প্রয়োগ করেছিলেন । কবি মোহিতলাল মজুমদার সত্যেন্দ্রনাথ সম্বন্ধে বলেছিলেন ছন্দের আনন্দ ও অর্থের চমৎকারিত্ব,দুইই তাঁর কাব্যে প্রচুর পরিমানে বিদ্যমান। বাংলা শব্দের সঙ্গে আরবী ফারসি শব্দের সমন্বিত ব্যবহার দ্বারা বাংলা কাব্য ভাষার শক্তির প্রাথমিক কৃতিত্ত্ব তাঁর। অনুবাদের মাধ্যমে তিনি বিশ্বের কথাসাহিত্যের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ ঘটান,’নবকুমার কবিরত্ন’ নামে। তিনি ‘ছন্দ-সরস্বতী’ নামে ছন্দ নিয়ে একটি নিবন্ধ লেখেন।১৯১৮ সালে ভারতী পত্রিকার বৈশাখী সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।এই নিবন্ধে তিনি দেশী বিদেশী ছন্দ নিয়ে গবেষণা করেন,
ফলশ্রুতিতে বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দিক উন্মোচন হয়।
তিনি সরাসরি রাজনীতি তে কখন জড়িত ছিলেন না। কিন্তু তাঁর সৃষ্টিতে জাতীয়তা স্থান পেয়েছে। নিজ দেশের খ্যাতি,স্বদেশ ও স্বজাতিকে সর্বৌচ্চ শিখরে প্রতিষ্ঠিত করার কাজ করে গেছেন। তাঁর ‘খাঁটী সোনা’ কবিতায় বলেছেন__
‘মধুর চেয়ে আছে মধুর
সেই আমার দেশের মাটী
আমার দেশের পথে ধূলা
খাঁটী সোনার চাইতে খাঁটী’
মানবতা স্থান পেয়েছে তার কবিতায়। তিনি লিখেছেন-
‘জগৎ জুড়িয়া আছে এক জাতি
সে জাতির নাম মানুষ জাতি
এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত
একই রবি শশী মোদের সাথী’
বাংলা মায়ের রুপ বর্ননা করেছেন__
‘মুক্ত বেনীর গঙ্গা কোথায়
মুক্তি বিতরে রঙ্গে
আমরা বাঙালী বাস করি সেই
তীর্থে বরদ বঙ্গে’
ছন্দে ভরা কবিতা যা আজও আমাদের মন কে দোলায় –
‘ছিপখান তিন দাঁড়
তিন জন মাল্লা
চৌপর দিন ভর দেয় দুর পাল্লা’
তাঁর প্রকৃতি প্রেম ধরা দেয় ‘ হেমন্ত’ কবিতায়_
‘হাওয়ার মত হাল্কা হীমের
ওড়না দিয়ে গায়
অন্ধকার বসুন্ধরা
শুন্য চোখে চায়
তারার আলো দুর
কন্ঠভরা বাষ্প আঁখি
অশ্রু পরিপুর’
তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ – সবিতা,সন্ধিক্ষণ,
বেনু ও বীণা, হোমশিখা, ফুলের ফসল,কুহু ও কেকা, তুলির লিখন,অভ্র আবীর,বেলা শেষের গান,বিদ্যায় আরতি, তাঁর উল্লেখ যোগ্য অনুবাদ সাহিত্য গুলি হলো তীর্থ সলিল, তীর্থ রেনু।