কলমের খোঁচা

প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধায় স্মরণে কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়


সুপর্ণা রায়: চিন্তন নিউজ:১লা নভেম্বর:-কথা সাহিত্যিক বিভূতি ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকৃতি ও মানুষকে বড় ভালোবাসতেন। দু’চোখ ভরে দেখতেন জগৎটাকে। মানুষের সুখ দুঃখ তাঁর চোখ এড়াতো না আর সাহিত্যেও তার ছাপ পড়েছে।

১৯২৮ এ প্রকাশিত হয় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর প্রথম উপন্যাস যা তাঁকে জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করতে সাহায্য করে। পরে সত্যজিৎ রায় এই পথের পাঁচালী নিয়ে চলচ্চিত্র করেন এবং তা পুরো বিশ্বে সমাদৃত হয়। বিভূতিভূষণ, স্ত্রী গৌরী দেবীর মৃত্যুর আগে থেকেই লিখছিলেন পথের পাঁচালী,। কিন্তু স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাঁর লেখায় বেশ কিছুদিন ছেদ পড়ে ,পরে মেসের বন্ধু নীরদচন্দ্র এর তাগিদাতে পথের পাঁচালী শেষ হয়। তিনি যে প্রচন্ড আর্থিক কষ্টের মধ্যে পড়াশোনা করেছিলেন এটা তাঁর বন্ধু নীরদচন্দ্র জানতেন না—– জানলেন তাঁর অপরাজিত গ্রন্থে। বড় বেশী দারিদ্র্য দেখেছিলেন লেখক। তাঁর উপন্যাসের মধ্যে তাই খিদের কথা বার বার উঠে এসেছে।।স ই , পুঁই মাচা,বা অনুবর্তণে বারবার খিদের কথা উঠে এসেছে লেখকের কলমে। পরে ঘাটশিলাতে তিনি একটি বাড়ি কেনেন এবং সেখানে গিয়ে মাঝে মাঝেই থাকতেন। ততদিনে বেরিয়ে গেছে আরণ্যক। জীবনের শেষ দশ বছর তিনি ছিলেন বারাকপুরে । তখন লিখেছেন কালজয়ী লেখা অশনিসংকেত ও ইছামতী। মৃত্যুর মাত্র কয়েক দিন আগে লিখেছেন শেষলেখা। ইছামতী উপন্যাসের জন্য মরোনোত্তর রবীন্দ্র পুরস্কার এ ভূষিত হন।।

বিভূতি ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর জন্ম ১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর উত্তর চব্বিশ পরগনার মুরাতিপুর গ্রামে এবং বিহার অধুনা ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলাতে। তাঁর পিতা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন প্রখ্যাত সংস্কৃত পন্ডিত এবং পান্ডিত্যের জন্য শাস্ত্রী উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।মাতা মৃনালিনী দেবী আর তাঁরা পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ছিলেন।

অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র বিভূতি ভূষণ তাঁর পড়াশোনা শুরু করেন তাঁর পিতার কাছে এবং পরে বনগ্রাম উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।। কিন্তু অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় তিনি পিতৃহারা হন।১৯১৪ সালে প্রথম বিভাগ এ এন্ট্রান্স এবং বর্তমান সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষা পরে ঐ কলেজ থেকেই বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাঁর বিবাহ হয় গৌরী দেবীর সাথে। বিয়ের কিছুদিন এর মধ্যেই গৌরী দেবীর মৃত্যু হয়। ১৯১৯ সালে হুগলি জেলার জাঙ্গীপাড়ার দ্বারকানাথ হাইস্কুলে পড়ানো শুরু করেন এবং এর বেশ কিছুদিন পরে ফরিদপুর এর ছগাঁও নিবাসী ষোড়শীকান্ত মহাশয় এর কন্যা রমা দেবীর সাথে বিবাহ হয় ।। তাঁদের পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৫০ সালের ১লা নভেম্বর মাত্র ৫৬ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। আজ তাঁর প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধায় স্মরণ।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।