কল্পনা গুপ্ত :- চিন্তন নিউজ,:- ২২শে নভেম্বর – আজ ২২শে নভেম্বর তাঁর জন্মদিবস। তিনি হ’লেন এক ক্রান্তিকালের সাক্ষী, সে সময়ের কিশলয়, ছাত্রছাত্রীদের সময়োপযোগী দেশভক্ত, দেশসেবক করে তোলার এক মূর্ত প্রতীক শিক্ষক বেণীমাধব দাস। আসলে আজকের আমরা খুব দ্রুত লয়ে ছুটছি সময়কে অতিক্রম করার তাগিদে। তাই অতীত ইতিহাস জানার আগ্রহ নেই। ওঁর নামটাই জানেননা অনেকে। তাই একটা দায়িত্ব তো এসেই যায় ইতিহাসকে জানানোর।বিশেষত আজ ওঁর জন্মদিন। যাঁর সান্নিধ্যে সুভাষ বসু, শরৎ বসুর মত দেশ বরেণ্য নেতাদের শিশু বয়েসের ভিত গড়ে উঠেছিলো এক প্রজ্ঞাময়তায়।
বেণীমাধব দাস জন্মেছিলেন অধুনা বাংলাদেশের চট্টগ্রামের শেওড়াতলী গ্রামে ২২ শে নভেম্বর ১৮৮৬ তে। পিতার নাম কৃষ্ণচন্দ্র রায়। বেণীমাধব প্রধানত দর্শনের ছাত্র হ’লেও অর্থনীতি ও ইতিহাসে সুপন্ডিত ছিলেন। জীবনের শুরুতে চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যাপনা করেন। পরে ঢাকা, কটক, কৃষ্ণনগর, কলকাতা নানান জায়গায় শিক্ষকতা করেছেন। সেইসময়ে ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের প্রভাব তাঁর জীবনে পড়েছিলো তাই তিনি সেখানে যোগ দেন। কলকাতা সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদকের কন্যা সারিদাদেবিকে বিবাহ করেন।
১৯০৯ সালে কটকের কাঠজুরি নদীর ধারে বাংলা মাধ্যমের র্যাভেনশে কলিজিয়েট স্কুলে সুভাষ বসু পড়তে আসেন ক্লাস সেভেনে। প্রধান শিক্ষক বেণীমাধব দাস চিনতে পারেন সুভাষের ভেতরের আগুনকে। সে আগুন চরিত্রের। সেখানে তিনি দেশপ্রেমের বীজ বপন করেন। স্বামী বিবেকানন্দকে পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।
ভবিষ্যৎ জীবনে সুভাষ নেতাজিতে পরিণত হন।
তিনি তাঁর প্রিয় প্রধান শিক্ষককে কখনও ভোলেননি। ১৯১১ সালের ১১ ই আগস্ট সুভাষ তাঁর সহপাঠীদের নিয়ে শহীদ ক্ষুদিরাম বসু’র তৃতীয় শহীদ দিবস পালন করেন। সেদিন কটকের ঘরে ঘরে অনশন ও অরন্ধন পালিত হয়েছিলো। এই ঘটনার অপরাধে বেণীমাধবকে কৃষ্ণনগরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সুভাষ কখনও তাঁর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেননি। এমনকি ভারত ত্যাগ করে বিদেশে যাওয়ার আগেও তাঁর পরামর্শ চেয়েছিলেন।
বেণীমাধব দাসের অগ্নিকন্যাদের মধ্যে কনিষ্ঠা বীণা দাস ১৯৩২ সালের ৬ ই ফেব্রুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করলে ধৃত হন ও ৯ বছর কারাদন্ড হয়। বেণীমাধব দাস স্বাধীন ভারত দেখে গেছেন। ১৯৫২ সালের ২রা মে তিনি প্রয়াত হন।