কলমের খোঁচা

অগ্নিকন্যা কল্পনা দত্ত যোশীর প্রয়ান দিবসে চিন্তনের শ্রদ্ধার্ঘ্য।


চিন্তন নিউজ,  প্রতিবেদনে কল্পনা গুপ্ত ৮ই ফেব্রুয়ারি:- বিপ্লবী  কল্পনা দত্ত জন্মগ্রহন করেন অবিভক্ত বাংলার চট্টগ্রামের বোয়ালখালি উপজেলার শ্রীপুর জেলার এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে ২৭ শে জুলাই ১৯৯৩ সালে। পিতা বিনোদবিহারি দত্ত, মা শোভনবালা দত্ত। তাঁর শৈশব ও ছাত্রজীবন সূচিত হয় চট্টগ্রাম শহরে। দাদু ছিলেন খ্যাতনামা ডাক্তার রায় বাহাদুর দুর্গাদাস দত্ত। তাঁর জীবন ঘটনাবহুল, বর্ণময়। ছোটবেলা থেকেই তাঁর কোমল, দরদী মন স্বাধীন ও সমৃদ্ধ ভারতের স্বপ্ন দেখতো।  শৈশব ও কৈশোরে বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা উষাদি দেশ বিদেশের স্বধীনতা সংগ্রামীদের গল্প বলতেন। এভাবেই তাঁর স্বদেশ সেবার ও স্বাধীকারের জন্য আগ্রহ তৈরি হয়।  চট্টগ্রামের খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯২৯ এ ম্যাট্রিক পাশ করে ৪র্থ স্থান লাভ করেন। এরপর কলকাতার বেথুন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। এখানেই তিনি সূর্য সেনের ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি দলের সদস্য হয়ে বোমার জন্য গান- কটন তৈরি করতেন। কল্যাণী দাসের ‘ ছাত্রী সংঘ’ এ যোগ দেন ও রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।

এই সময়ে তিনি বিপ্লবী নেতা পূর্ণেন্দু দস্তিদার ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৩০ সালের ১৮ ই এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল  ও ২২ শে এপ্রিল  জালালাবাদ পাহাড়ে যুদ্ধ হয়। অস্ত্রাগার লুন্ঠনের দায়ে অনন্ত সিংহ, গনেশ ঘোষ, লোকনাথ বল গ্রেফতার হন। সূর্য সেন চলে যান আত্মগোপনে। এইসময় কল্পনা ও প্রীতিলতা অনেক কষ্টে চট্টগ্রামে মাস্টার দার সন্ধান পেয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা সশস্ত্র বিপ্লবে প্রত্যক্ষ ভাবে যোগ দিতে চান। সূর্য সেন তাঁদের শপথ বাক্য পাঠ করান।

ধলঘাটের সংঘর্ষে ক্যাপ্টেন ক্যামেরুন হত্যাকান্ডের পর কিছু গুন্ডা প্রকৃতির ছেলে তাঁকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। এক বছরের কারাদন্ডের পর কলকাতা থেকে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরক দ্রব্য কৌশলে নিয়ে আসেন তিনি যা দিয়ে অস্ত্রাগার লুন্ঠনের বিপ্লবীদের কারাগার থেকে মুক্ত করার দুঃ সাহসিক পরিকল্পনা জড়িয়ে ছিলো। কিন্তু সেই পরিকল্পনা সফল হতে পারেনি। ১৯৩২ সালে পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাবে আক্রমনের ভার প্রীতিলতা ও কল্পনার ওপর পড়লে পুরুষবেশী কল্পনা দত্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। জামিনে মুক্তি পান। ১৯৩৩ এ ১৯ শে মে গৈরাল গ্রামে এক সশস্ত্র সংঘর্ষে কল্পনা দত্ত কিছু বিপ্লবী সহ ধরা পড়েন। ১৯৩৯ সালে ছাত্র আন্দোলনের জেরে সরকার মুক্তি দিতে বাধ্য হন। তাঁর মুক্তির জন্য স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ গভর্নরের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। কল্পনা দত্তের নাম অগ্নিকন্যা রবীন্দ্রনাথের দেওয়া।
 
এরপরে তিনি কমিউনিস্ট  পার্টিতে যোগ দেন। জেলে থাকাকালীন তিনি সোস্যালিজম, কমিউনিজম সম্বন্ধে পড়াশোনা করতেন। ১৯৪০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। ওই বছরেই তিনি মুম্বাইয়ের এক সম্মেলনে চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেখানেই পি সি যোশীর সাথে পরিচয় হয়।  ১৯৪৪ সালে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক পি সি যোশীর সঙ্গে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন।১৯৪৬ সালে আইনসভার নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে প্রার্থী  ছিলেন কল্পনা দত্ত যোশী। ভারত স্বাধীন হবার পরে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ভারত – সোভিয়েত সাংস্কৃতিক সমিতির সাথেও ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত ছিলেন।

নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ ছিলেন কল্পনা দত্ত। দিল্লিতে বসবাস কালে রুশ ভাষায় শিক্ষকতা করেন এবং রুশ ভাষা কেন্দ্রের চেয়ার পার্সেন ছিলেন। অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব  ন্যাশানাল ল্যাঙ্গুয়েজ এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিছুদিন তাঁরা চন্দননগরে বসবাস করেছিলেন। ১৯৯৫ সালের ৮ ই ফেব্রুয়ারি  কলকাতার শেঠ সুখলাল করনানী মেমোরিয়াল  হাসপাতালে ৮২ বছর বয়েসে এই বহু গুনান্বিতা বিপ্লবী  কল্পনা দত্ত যোশীর জীবনাবসান ঘটে। চিন্তনের পক্ষ থেকে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর জীবনাদর্শ আমরা যেন অনুসরণ করতে পারি।


.


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।