দেবু রায়:-চিন্তন নিউজ:-১৪ই আগস্ট:-স্বাধীনতার তিয়াত্তর বছর পরে দেশের জিডিপি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বেকারত্ব, এসব ছেড়ে আমাদের আজকে ধর্ম নিয়ে পড়ে থাকতে হচ্ছে!বিজেপিকে দেখে মনে হচ্ছে যেন দেশের সব সমস্যার পিছনে একমাত্র কারন হলো হিন্দু ধর্মকে প্রাধান্য না দেওয়া। আচ্ছা সত্যি কি তাই? সামনে আমাদের রাজ্যে ২০২১সালে বিধানসভা ভোট আছে , বিজেপিও চাইবে ধর্মকে হাতিয়ার করে ভোটে জিততে । আমার প্রশ্ন বিজেপি’র কাছে ধর্মটা কি?. তার সংজ্ঞাটা কি?.
আমি আমার সীমিত অভিজ্ঞতায় যা দেখেছি, আসলে ধর্মটা হলো এক-এক শ্রেনীর কাছে এক-এক রকম, গরীব অশিক্ষিত মানুষদের কাছে ধর্মটা হলো ভয় এবং ভক্তির, শিক্ষিত মানুষের কাছে ধর্মটা হলো ভক্তি, ভালোবাসা, জীবনের একটা শৃঙ্খলা । বড়ো লোকদের কাছে ধর্মটা হলো সমাজে প্রতিষ্ঠা ও পরিচিতির একটা মাধ্যম । ধর্মগুরুদের কাছে ধর্মটা হলো কোনো পরিশ্রম না করে সব সুখ স্বাচ্ছন্দ ভোগ করা অর্থাৎ ধর্মটা হলো তাঁদের কাছে একটা পুঁজি যার মাধ্যমে তারা সব ভোগ করে । নেতাদের কাছে( বামপন্থী বাদে)ধর্মটা হলো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার একটা মাধ্যম । হিন্দুদের কোনো এক বাবাজি বলুন বা কোনো এক গুরুজী বলুন, আবার মুসলিমদের মৌলবী বা ইমাম, আবার খৃস্টানদের ফাদার বা পাদ্রী যাই বলুন তাঁদের জীবন যাত্রার মান এত উন্নত হয় কি ভাবে?. তারা না করে কোনো ব্যবসা বা চাকরি কিন্তু তাঁদের হাতে এতো টাকা আছে যেটার জোরে তারা সবকিছুই ভোগ করছে!
এবার আসা যাক ব্যবসায়ীদের প্রসঙ্গে যারা হিন্দু তারা মন্দিরে যাচ্ছেন, পুজো দিচ্ছেন, মন্দিরে কোটি -কোটি টাকা দান করছেন, দামি গহনা দিচ্ছেন ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য অথচ ন্যায্য ট্যাক্স তারা না দিয়ে দেশের মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন! তারা দান করছেন কিন্তু তাঁদের কাজের লোক বা কর্মচারীদের সঠিক মাহিনা কিন্তু দিচ্ছেন না, বরঞ্চ তাঁদেরকে দিয়ে পারলে অতিরিক্ত কাজ করিয়ে নিচ্ছেন ।কোনো অতিরিক্ত পারিশ্রমিক না দিয়ে । জানি না এতে ভগবান , আল্লা বা গড কতটা খুশি হন!
বড়োলোক বা পয়সা ওয়ালাদের কাছে ধর্মটা হলো একটা সামাজিক প্রতিষ্ঠা বা পরিচিতি পাবার একটা মাধ্যম । দেখবেন বাড়িতে বা পাড়ায় পুজো উপলক্ষ্যে তারা হাজার-হাজার লোককে খাওয়াছেন কিন্তু লকডাউনের সময় তারা কেউ একটা মানুষকেও একদিনের খাবারের ব্যাবস্থা করেন না।কোনো গরিব অসহায় মানুষকে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করেন না।
এবার আসা যাক গরীবদের প্রসঙ্গে -গরীবদের কাছে ধর্মটা হলো একটা ভয়, আর কুসংস্কার।গরীবরা জানে তারা লেখা-পড়া শেখে নি, তাঁদের বুদ্ধিও শিক্ষিত মানুষদের মতো নয়, তাই তাঁদের ধর্ম গুরুরা যা বলে তাই মানে। কারন সেই ভক্তি আর ভয় । তাইতো যখন দাঙ্গা বা খুনো-খুনি হয় দেখবেন গরীবরাই মরে অন্য কেউ নয় ।তাঁদের উপরই শোষণটা আগে নেমে আসে। অর্থাৎ নেতা বা গুরুরা তাঁদেরকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থে । তাইতো সাপে কাটা রোগীকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে ওঝার কাছে যায় যার ফলে রোগীর চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হয়।
শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের কাছে ধর্মটা হলো জীবনের একটা শৃঙ্খলা, আদৰ্শ বোধ, নীতি মেনে চলা, কিন্তু খুবই দুঃখের বিষয় হলো এই শিক্ষিত মানুষদের মধ্যেও এমন কিছু ধান্দাবাজ আছেন তারা নিজেদের আখের গুছাতে নেতা বা গুরুদের অন্যায়কে সমর্থন করেন। সেটা কুসংস্কার হলেও বা ভুল হলেও সমর্থন করেন(না হলে কিছু শিক্ষিত মানুষ কি করে বিজেপি’র ভণ্ডামিকে সমর্থন করেন)
এবার আসা যাক দক্ষিণপন্থী দলগুলোর নেতাদের প্রসঙ্গে, এরা ধর্মকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে সব সুখ, সাচ্ছন্দ, সম্পদকে ভোগ করার জন্য। আর এটা করার জন্য এই সমস্ত দলের নেতারা ধর্মগুরু, ব্যবসায়ীদের সাথে আপোস করে ।তাঁদের অন্যায়কে প্রশয় দেয় । আজকে যখন কোভিড ১৯ এ প্রতিদিন হাজার-হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে তখন দরকার হাসপাতাল এবং ঔষধের ।শাসকদল সরকারের সহায়তায় তখন মন্দির তৈরি করছে । কোটি -কোটি টাকা ব্যয় করে যেন মন্দির তৈরি হলেই সব ভালো হয়ে যাবে ! কি অদ্ভুত দেখুন দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের নেতারা নেমে পড়লো পূজা করতে!একমাত্র বামপন্থী দলগুলো মন্দির মসজিদ নির্মাণের বিরোধিতা করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির জন্য দাবি জানায়। তাঁরা আরও দাবি করেন হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ বানান । এমনিতে তো দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিশাল কিছু কোনো দিনই ছিলো না, যেটুকু ছিলো সেটাও প্রয়োজনের তুলনা সামান্য। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে সেটাকেও প্রায় শেষ করে দিয়েছে । বাজেটে স্বাস্থ্যের ব্যয় কমাতে কমাতে একবারে ২ শতাংশের কম । আর অন্য দিকে কর্পোরেটদের নানান সুবিধা দিয়ে তাঁদেরকে উৎসাহিত করা হচ্ছে যার নিট ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারন মানুষকে কারন এত ব্যয় বহুল খরচ কথা থেকে সামলাবে, তাই আমাদের মত সাধারন মানুষের বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে আমাদের থালা, ঘটি, বাটি সব বিক্রি করতে হয় তাতেও কিন্তু বিলের ব্যয় মেটানো যায় না, তাই তো ডিসান বা পিয়ারলেস হাসপাতাল বার – বার সংবাদের শিরোনামে আসে। জানি না ভগবান রাম কোথায় বলেছেন মানুষকে দুঃখে রেখে রাম মন্দির তৈরি করো, মানুষের শিক্ষা বন্ধ করে টাকা খরচ করে পূজার ব্যয় করো!
করোনা আবহে দেশের মানুষ যখন অর্ধাহারে বা অনাহারে, কয়েক কোটি মানুষের চাকরি চলে গেছে, কেউ অসুস্থ হলে তার কি ভাবে চিকিৎসা হবে তার ঠিক নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম সর্বনিম্ন অথচ ভারতবর্ষে তেলের দাম দিন দিন ঊর্ধ্বমুখী । , তখনই মোদীজি সাড়ে আট হাজার টাকা কোটি টাকা দিয়ে প্লেন কিনছেন তার বিলাস বহুল ভ্রমণের জন্য! ২০২১সালের ভোটে বিজেপি আসবে আপনার কাছে, দয়া করে তাঁদের ভোট দেবার আগে লেখাটা প’ড়ে ভেবে ভোট দেবেন।নাহ’লে চরম সর্বনাশ আমাকে, আপনাকে, সকলকে দেখতে হবে!