দেশ

আসামের সিপিআই(এম) পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তথা কৃষক নেতা, সাংসদ নুরুল হুদার ষষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকীতে চিন্তণের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলী।


সীমা বিশ্বাস, আসাম ১৮ই ডিসেম্বর ২০২১—- আসামের সিপিআই(এম) পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তথা কৃষক নেতা, নুরুল হুদার ২০১৫ সালের ১৭ডিসেম্বর দেহাবসান হয় । মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৮৬ বছর। সাত দশক ধরে তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত করে রেখেছিলেন। কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। নিঃস্বার্থভাবে নিপীড়িত মানুষের মুক্তির জন্য সারা জীবন কাজ করে গেছেন । পার্টি এবং কৃষক সভার অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন । ১৯৩০ সালে আসামের কাছাড় জেলার শিলচরের ডালু গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ।মহম্মদ আলী এবং আয়েশার তিনি তৃতীয় সন্তান । তাঁর পিতা ব্রিটিশ শাসনের ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন ।

নুরুল হুদা’র প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় গৌহাটিতে।১৯৪৬ সালে মেট্রিক পাশ করার পর কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের উচ্চমাধ্যমিকে তিনি ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে তিনি যাদবপুর থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্নাতক হন ১৯৫৩ সালে । মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হওয়ার এক বছরের মধ্যেই তিনি ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন ।আগস্টের ১৯৪৮সালে অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্ট ফেডারেশনে তিনি যোগদান করেন এবং সেই সময়ে অর্থাৎ ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট আন্দোলনের নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন ।১৯৪৯সালের অক্টোবরে তিনি পার্টিতে যোগদান করেন । সেই সময় পার্টি নিষিদ্ধ ছিল ।শচীন সেন প্রশান্ত শুর শিবু সেন সুকুমার রায় এবং অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয় ।১৯৪৯ সালে কংগ্রেস সরকারের নীতির প্রতিবাদ করতে গিয়ে বহুবার তিনি প্রেসিডেন্সি জেল আলিপুর সেন্ট্রাল জেল দমদম সেন্ট্রাল জেলে কারাবরণ করেন।১৯৬৬ সালে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে এল.এল.বি ডিগ্ৰী লাভ করেন । ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর কলকাতার বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি কাজ করেন পরবর্তী সময়ে পার্টি নির্দেশে পার্টি সর্বক্ষণের কর্মী হয়ে আসামের শিলচরে পার্টি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আত্মনিয়োগ করেন।কিষাণ সভা পার্টির কাজ করতে অবিভক্ত কাছাড় জেলার কমিউনিস্ট নেতা গোপেন রায় অচিন্ত্য ভট্টাচার্য দিগেন গুপ্ত রুক্ষ্মনি আচার্যের সান্নিধ্যে আসেন।

সুরমা উপত্যকার ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিল। বিধানসভা নির্বাচনে কয়েকবার তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১৯৭৩ এ উপনির্বাচনে কমরেড প্রমোদ দাশগুপ্ত শিলচর এসে কমরেড হুদাকে পার্টির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বলেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছিল সেসময়ের রাজ্যসভার সদস্য কংগ্রেসের অগ্রণী নেতা মহিতোষ পুরকায়স্থের বিরুদ্ধে ।সেই নির্বাচনে নুরুল হুদা নিঃসন্দেহে পুরকায়স্থকে পরাজিত করে বড় জয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন । নিঃসন্দেহে আসামের বরাক উপত্যকায় সিপিআইএম পার্টি থেকে প্রথম পার্লামেন্ট মেম্বার হয়েছিলেন নুরুল হুদা ৮মারচ ১৯৭৪ সালে ।সেই সময়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে থাকে । ইন্দিরা গান্ধীর স্বৈরতান্ত্রিক শাসন জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর নুরুল হুদাসহ বহু নেতা কারাবন্দি হন।১৯৭৭ সালের ১৫জানুয়ারি নুরুল হুদা জেল থেকে মুক্তি পান । জরুরি অবস্থা উঠিয়ে নেওয়ার পর তৎক্ষণাৎ নির্বাচন ঘোষিত হয় ।সেই সময় অর্থাৎ ১৯৭৮ সনে জনতা পার্টির কোবিন্দপুরকায়স্থকে হারিয়ে শিলচরে আইন সভায় নুরুল হুদা জয় যুক্ত হন। আসামের বিধানসভার সিপিএম পার্টি থেকে ১১ জন নির্বাচিত হন ।আসামের পার্টির এটা ছিল ঐতিহাসিক জয়।

১৯৮৩ সালের নগাও জেলার নেলিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির আক্রমণে একদিনে ২০০০গরিব মুসলিমদের উপর আক্রমণ হয় এবং অনেককে নিশংস ভাবে হত্যা করা হয়। সিপিএম পার্টির ঐক্য শান্তি রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং নুরুল হুদার নেতৃত্বে লাল ঝান্ডা ঊর্ধ্বে তুলে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।১৯৮৫ সালে ১২ তম পার্টি কংগ্রেসের সেন্ট্রাল কমিটির তিন সদস্য পদ লাভ করেনতিনি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান কর্মী ছিলেন মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত তিনি পার্টির দায়িত্ব নিষ্ঠা সহকারে পালন করে গেছেন। চিন্তণের পক্ষ থেকে কমিউনিস্ট নেতা নরুল হুদাকে শ্রদ্ধা , লাল সেলাম।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।