মল্লিকা গাঙ্গুলী, চিন্তন নিউজ, ১১ জুন: গতকাল রাজ্যের প্রধান মেডিক্যাল কলেজ এন আর এস হাসপাতালের ঘটনা বাংলা সংস্কৃতির কলঙ্ক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চরম বেহাল দশা প্রমাণিত।
খবরে জানা যায় গতকাল ৮২ বছরের এক বৃদ্ধ রোগী নীল রতন সরকার মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন, এক জুনিয়র ডাক্তারের উপর তার চিকিৎসার দায়িত্ব পরে। কিন্তু চিকিৎসা চলাকালীন ঐ বৃদ্ধের মৃত্যু হলে তার পরিবার পরিজনরা চিকিৎসার গাফিলতির অজুহাত এনে তুলকালাম কাণ্ড বাঁধায়। হঠাৎ করেই ট্রাকে করে প্রচুর লোক এসে ডাক্তারের উপর চড়াও হয়। কোনো আলোচনা না করেই ব্যাপক ভাঙচুর করে ঐ জুনিয়র ডাক্তারকে নৃশংস ভাবে মারতে থাকে, ভারী ধাতব বস্তু দিয়ে ডাক্তারের মাথায় আঘাত করে। মাথার খুলির হাড় গুড়ো করে দেয়, দুষ্কৃতীরা রক্তাক্ত জুনিয়র ডাক্তারকে ভাঙা টেবিলের তলায় মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যায়। এখন ঐ জুনিয়র ডাক্তার পরিবহ মুখোপাধ্যায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এন আর এসের জুনিয়র ডাক্তাররা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারা এর পর থেকেই কর্ম বিরতি শুরু করে। আগামী কাল ও তারা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। এই কর্মবিরতি বাংলার চিকিৎসা সংকটে। একদিকে ডাক্তারদের প্রতি অনৈতিক দুর্ভাগ্যজনক আক্রমণ অপরদিকে ডাক্তারদের এই কর্মবিরতিতে সাধারণ রোগী আর তার পরিবার ভয়ংকর দুর্বিপাকে। অসহায় রোগীরা বিনা চিকিৎসায় কাতরাচ্ছে, এন আর এসের সব গেট বন্ধ করে নতুন রোগী ও তাদের পরিবারকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছেনা। শুধু এন আর এস নয় রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতীকী কর্মবিরতির ডাক দেওয়ায় সব হাসপাতালের আউটডোর পরিষেবা বন্ধ, অ্যাম্বুলেন্সকেও আটকানো হচ্ছে। দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীর আত্মীয়রা চূড়ান্ত বিপর্যস্ত।
দুঃখের বিষয় এইরকম একটি জরুরি পরিষেবা ভেঙে পরতে দেখেও অবস্থার উন্নতির জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থা সরকার নিতে পারে নি। ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও স্বাস্থ্য দপ্তর কোন সরকারী বিবৃতি দিতে পারে নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য পরিস্থিতি দেখতে এন আর এসে গেলে তার বিরুদ্ধে জুনিয়র ডাক্তাররা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে, এমনকি ডাক্তার নির্মল মাজিকেও হাসপাতালে ঢুকতে দেওয়া হয় না। স্বাস্থ্য মন্ত্রী, পুলিশ প্রশাসন কারো প্রতি এখন আন্দোলনকারীদের ভরসা নেই, তারা “স্বাস্থ্য মন্ত্রীর হাত রক্তে রাঙা” শ্লোগান তোলে। জুনিয়র ডাক্তার দের সঙ্গে যোগ দেয় সিনিয়র ডাক্তাররা এমন কি বাম সংগঠন SFI সমবেত ভাবে দাবি তোলে অবিলম্বে অভিযুক্ত দের গ্রেফতার করতে হবে এবং ডাক্তার দের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না করা পর্যন্ত এই অবস্থান উঠবে না বলে জানিয়ে দেয়।
এমতাবস্থায় সরকার কি পদক্ষেপ নেয় সেটাই দেখার। ডাক্তারদের প্রতি লুম্পেন বাহিনীর হামলা আর তার জেরে সাধারণ মানুষের অসহায় অবস্থা নিয়ে সর্বত্র বিস্তর চাপান উতোর আলাপ আলোচনা চলছে কিন্তু আরো বহু রোগীর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর আগে এই বিশৃঙ্খলার অবসান একমাত্র কাম্য।