রাজ্য

জলপাইগুড়িতে কি টর্নেডো?


দীপশুভ্র সান্যাল, জলপাইগুড়ি,চিন্তন নিউজ:২ রা এপ্রিল:২০২৪:– রবিবারের জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির ঘূর্ণিঝড় মিনি টর্নেডোই। এমনটাই জানালো আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। যার উৎপত্তিস্থল নেপাল।

ঘড়ির কাঁটায় ঠিক তিনটে বেজে পনেরো মিনিট। আচমকা কালো করে আসে জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির আকাশ। মুহূর্তে দৈত্যর মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে ছুটে আসে ঝড়। চোখের নিমেষে যা তছনছ করে দেয় গোটা এলাকা। উড়ে যায় বাড়ির চাল, উপড়ে যায় গাছ। কার্যত লন্ডভন্ড হয়ে যায় গোটা এলাকা। দুর্যোগের জেরে মৃত্যু হয় ৫ জনের। আহত বহু। তাঁরা জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল পরিস্থিতি খানিকটা আয়ত্তে আসার পরই সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল একটা ভিডিও। সেখানে দেখা যায়, দৈত্যর মতো ছুটে আসছে ঝড়। যা দেখে প্রাথমিকভাবে হাওয়া অফিসের অনুমান ছিল, এই ঝড় মিনি টর্নেডো হতে পারে।

সেই অনুমানেই এবার সিলমোহর। এদিন আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের তরফে আবহাওয়াবিদ সোমনাথ দত্ত জানান, ময়নাগুড়ির ওই ঝড় মিনি টর্নেডোই। রবিবার দুপুর তিনটে পনেরো থেকে সাত মিনিট টর্নেডো দাপট দেখায় এলাকায়। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গের উপরের দিকের ৫ জেলায় বুধবার পর্যন্ত ঝড়-বৃষ্টি চলবে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঝড় বৃষ্টির সতর্কতা। শিলাবৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে দার্জিলিং জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলায়। ৫০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা। তবে দক্ষিণবঙ্গে পাঁচদিন শুষ্ক থাকবে আবহাওয়া। পশ্চিমের ৫ জেলায় তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা। ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পশ্চিম বর্ধমানের তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা। বুধবার থেকে শুক্রবার এই তাপপ্রবাহ চলবে।

জলপাইগুড়িতে ‘মিনি টর্নেডো’ বড় বিপদের ইঙ্গিত? ব্যাখ্যা আবহাওয়া দফতরের কর্তার
জলপাইগুড়িতে আচমকাই দুর্যোগ। লণ্ডভণ্ড চারিপাশ। প্রাণহানি হয়েছে, আহত শতাধিক। কিন্তু, কেন হঠাৎ এই দুর্যোগ? কোথাও গিয়ে কি কোনওভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে বাংলায়? এবার এই নিয়ে মুখ খুললেন আবহবিদরা। এই প্রসঙ্গে দ্বিধাবিভক্ত তাঁদের মতামত। অনেকেই বলছেন, পর্যাপ্ত তথ্য নেই। আবার কেউ কেউ দেখছেন আশঙ্কার মেঘ। ঠিক কী বলছেন এই বিশেষজ্ঞরা?

কয়েক মিনিটের ঘূর্ণিঝড়, আর তাতেই কার্যত তছনছ জলপাইগুড়ি। কিন্তু, কেন হঠাৎ রুদ্ররূপ নিল প্রকৃতি? জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কি প্রকারান্তরে পড়তে শুরু করছে? উঠছে একগুচ্ছ প্রশ্ন। বিষয়টি নিয়ে গ্যাংটক আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত যে প্রাথমিক যে তথ্য আমরা হাতে পাচ্ছি সেই মোতাবেক এই ঘটনা মিনি টর্নেডো। ঝড়ের গতিবেগ নিয়ে এখনও নির্দিষ্ট কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে যেভাবে গাছপালা ভেঙেছে সেই মোতাবেক ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটারের উপরে ছিল বলেই অনুমান করা যাচ্ছে। তবে এখনও নির্দিষ্ট কোনও তথ্য আমাদের হাতে নেই।’ উল্লেখযোগ্যভাবে, উত্তরবঙ্গের আবহাওয়ার উপর নজর রাখে গ্যাংটকের আবহাওয়া দফতরও।

এদিকে জলপাইগুড়ির ঘটনায় আশঙ্কার কালো মেঘ দেখছেন জিওমর্ফোলজিস্ট ড. সুজীব কর। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা এবং ভূমিভাগের তাপমাত্রা যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে যে কোনও মুহূর্তে এই ধরনের সাইক্লোন তৈরি হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই ঝড় বেশি স্থায়ী হয় না। তবে ক্ষতি করার ক্ষমতা অনেক বেশি হয়। জলপাইগুড়ির ঝড়টা টর্নেডো। এখন যে পরিস্থিতি রয়েছে তাতে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।’

যদিও এখন থেকেই জলপাইগুড়ির ঘটনার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের যোগসূত্র খুঁজতে নারাজ গোপীনাথ রাহা। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘টর্নেডো খুব অল্প জায়গায় মধ্য দিয়ে যায়। ফলে যেটুকু জায়গায় মধ্যে দিয়ে যায় সেটা অনেকটাই ক্ষতি করে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে কিনা তা এভাবে বলা সম্ভব নয়। এর জন্যও আমাদের সমস্ত দিক খতিয়ে দেখতে হবে।’


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।