কাকলি চ্যাটার্জি: চিন্তন নিউজ:২১শে মে:- প্রেসিডেন্সী, কলকাতা ইউনিভার্সিটি, কফিহাউস, বইপাড়া, কলেজস্টীট কথাগুলো যেন এক সূতোয় গাঁথা। ছোটবেলা থেকেই এই কথাগুলো শুনতে শুনতে কখন যেন এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছে মনের অগোচরে, অজান্তেই। দুপাশে সার বেঁধে অজস্র বইয়ের দোকান, ইচ্ছেমতো নাড়াচাড়া করে পছন্দের বইয়ের তল্লাশি, খুঁজে পাওয়ার আনন্দের পাশাপাশি হঠাৎ করেই চোখে পড়ে যাওয়া হয়তো বা বহু পুরোনো কোনো দুষ্প্রাপ্য বই। আশেপাশের একাধিক স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, খুচরো দোকানদার, বইপ্রেমীদের বড়ই পছন্দের জায়গা, সবসময় জমজমাট, কর্মব্যস্ত এই কলেজ স্ট্রিট বইপাড়া চত্বর।
বিগত কয়েক বছরে রাজনৈতিক সামাজিক পট পরিবর্তন হয়েছে, অনলাইনে বইপড়া, অনলাইনে ব্যবসা অনেকটাই বদলে দিয়েছে এলাকার চরিত্র। কিন্তু তবুও ছাপানো, বাঁধানো, ছোটবড়ো অজস্র প্রকাশনার ভিড়ে চলছিল! গত দুমাস লকডাউনে বিপর্যস্ত অন্যান্য সব ব্যবসার মতোই বইবাজার। ছোট দোকান, অল্প পুঁজির দোকানগুলো কিংবা অন্যের দোকানে কাজ করা অসংখ্য কর্মচারী, বাঁধাই এর সঙ্গে বা প্রিন্টিং এ যুক্ত থাকা মানষগুলো জমিয়ে রাখা টাকায় কষ্ট করেই চালাচ্ছিলেন। কাছাকাছি বাস করেন যারা প্রায়ই এসে উঁকিঝুঁকি মারতেন অভ্যাসমত কাজের জায়গায়। সামান্য গোছগাছ বা দেখে যেতেন সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা।
গতকাল আমফান লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেল সবকিছু। শুধুমাত্র কলেজস্ট্রীট নয়, পটলডাঙ্গা স্ট্রীট, কলেজ রো, ঝামাপুকুর লেন, পটুয়াটোলা, কলেজ স্কোয়ার, শ্যামাচরণ দে স্ট্রীট, সূর্য সেন স্ট্রীট, এরকম আশেপাশের অসংখ্য অলিগলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বইব্যবসার অনুষঙ্গ, বইয়ের দোকানগুলো। কালকের প্রবল ঝড় ও সারা দিনরাতের বৃষ্টিতে সম্পূর্ণ লন্ডভন্ড অবস্থা, ছোট দোকান, স্টলগুলো ভেঙেচুরে একাকার। বইগুলো জলে ভাসছে, কোনো দোকানে হাঁটু বা কোমর সমান জল। লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি। দূরে আছেন যে সব ব্যবসায়ী, পৌঁছনোর উপায় নেই অথচ দোকানের ভেতরে জল; কীভাবে বাঁচাতে পারবেন কিছুটা হলেও ভেবে আকুল। কত ক্ষতি হল এই মূহুর্তে তা হিসাব করা অসম্ভব।স্থানীয় দোকানদার এবং মানুষজন যতটা সম্ভব উদ্ধার কাজে নেমেছেন, হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বামপন্থী ছাত্র যুব কমরেডরা। একদিকে করোনা অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিল অসংখ্য বই ব্যবসায়ী এবং তার সঙ্গে যুক্ত আরও অনেক পরিবারকে।