রণদীপ মিত্র:চিন্তন নিউজ:২৮শে জানুয়ারি:–বিশ্বভারতীর উপাচার্যের বক্তব্য ভিডিও করার ‘অপরাধে’ ছাত্রকে হস্টেল ছাড়ার নির্দেশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
সাদা কাগজে সিল-মোহর ছাড়া, হাতে লেখা এক ফতোয়া নোটিশে ২৪ ঘন্টার মধ্যে হস্টেল ছাড়ার নির্দেশ বিশ্বভারতীর এক ছাত্রকে! উপাচার্যের বক্তব্যকে ভিডিও করে তা সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ায় ছাত্রটির অপরাধ। যা ঘিরে ফের নতুন করে তোলপাড় হয়েছে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস।
সূত্রের খবর গত ২৭ জানুয়ারি রাত্রে আচমকা হাতে লেখা এই নোটিশটি সর্বসমক্ষে আসে। তাতে বিজ্জু সরকার নামে ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে পূর্বপল্লী সিনিয়র বয়েজ হস্টেলে ছাড়ার নিদান দিয়েছেন বিশ্বভারতীর প্রক্টোর শঙ্কর মজুমদার। কারণ হিসাবে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে – সাধারনতন্ত্র দিবসের দিন ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বক্তব্য মোবাইলে রেকর্ড করে তা সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন বিজ্জু সরকার। যে ভিডিওটি পরবর্তীতে ব্যবহৃত হয়েছে নানা মাধ্যমে। এবং সেই ব্যবহারের ফলে নাকি উপাচার্যের মানহানি হয়েছে! তার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। এমনই অজুহাত দেওয়া হয়েছে নোটিশে। আর এই ‘অপরাধেই হস্টেল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ঐ ছাত্রকে। প্রোক্টর নোটিশে লিখেছেন, এই নির্দেশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদনেই দেওয়া হয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই এমন নোটিশে প্রশ্ন উঠছে সব মহলে। উপাচার্যের প্রকাশ্যে দেওয়া বক্তব্য ভিডিও করে তা সোস্যাল মিডিয়া ছড়ানোর পেছনে সংশ্লিষ্ট ছাত্রের কি দোষ রয়েছে তা ভেবে পাচ্ছেন না কেউই। সোস্যাল মিডিয়ায় পাওয়া কে কি উদ্দেশ্যে বা কোন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ব্যবহার করেছেনে তার জন্য বলির পাঁঠা কেন হতে হবে সাধারন একটি ছাত্রকে, এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য ক্ষোভের সাথে জানিয়েছেন, ‘‘এরকম আবার হয় নাকি। আরো একটি গা জোয়ারি সিদ্ধান্ত এটি। প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়েছেন উপাচার্য। তা মোবাইল বন্দী করার বা সোস্যাল মিডিয়ায় দেওয়ার কারনে কেন এক সাধারন ছাত্রকে এমনভাবে হেনস্থা করা হবে? বিশ্বভারতীতে এক মাৎস্যন্যায় চলছে। তাছাড়া নোটিশটি হাতে লেখা, নেই কোনো লেটার হেট, সিল।’’ এদিকে নোটিশ পাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে পড়েছেন ছাত্রটি। ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় রয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত: সাধারনতন্ত্র দিবসের দিন সকালে তোলা হয়েছে ভিডিওটি। তাতে দেখা যাচ্ছে, সাধারনতন্ত্র দিবস উদযাপানের একটি অনুষ্ঠানে উপাচার্য পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখছেন। তাতে তিনি বলেছেন, ‘‘সংবিধানটা বানানো হয়েছিল সংখ্যালঘু ভোট দিয়ে। ২৯৩ জন লোক সংবিধান সভায় বসে সংবিধান বানিয়েছিলেন। তৎকালীন কাগজ যদি দেখো, অনেকেই অপছন্দ করেছিলেন। আজকে সেটাই হয়ে গেল ‘বেদ’। যারা ভোটার, যারা সংসদ তৈরী করি , তারাই এর পরিবর্তন করব।এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এরকম বক্তব্য সংবিধান বিরোধী, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ ধরনের বক্তব্য রাখতে পারেন না। এই নিয়ে তোলপাড় বিশ্বভারতী সহ গোটা রাজ্য। এটা ঢাকতেই কি বিজ্জু সরকারকে সরানোর প্রচেষ্টা??ক্ষোভে ফু়ঁসছে বিশ্বভারতী।