দেশ

লকডাউনে মজুরি ছাঁটাইয়ের পথে কেন্দ্র—


কাকলি চ্যাটার্জি: চিন্তন নিউজ:২১শে মে:- স্বাধীনতার প্রায় ৭৩ বছর অতিক্রান্ত, প্রধানমন্ত্রী যাই বলুন না কেন আত্মনির্ভর হওয়া দূর অস্ত, আত্মমর্যাদা হারিয়ে চরম দারিদ্র্যে তলিয়ে যেতে চলেছে প্রায় সাড়ে তেরো কোটি মানুষ। ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার কমতে চলেছে ১০.৮%। ১৩৮ কোটি জনসংখ্যার দেশে রক্তাল্পতা, যক্ষ্মা অপুষ্টিতে ভুগে, পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু আজও ঠেকানো যায়নি। বর্তমান অপ্রতুল রেশনব্যবস্থা, লকডাউনের ফলে বিপর্যস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি দেশের দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী এক বিশাল অংশের মানুষ না খেতে পেয়েই মারা যাবে করোনা আক্রান্ত না হলেও। প্রকৃত অর্থে লকডাউনের চিত্র সর্বত্র এক নয়। পরিকল্পনার অভাব, তথ্যগোপনের প্রচেষ্টা ব্যাহত করেছে প্রকৃত উদ্দেশ্য। শুধুমাত্র লোক দেখানো চমকদারি ভাষণ, অন্তঃসারশূন্য ঘোষণা, সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে দেশ চালানো সম্ভব হ’লেও করোনা তাড়ানো যে সম্ভব নয়, সেটা বোঝার ক্ষমতা নেই দিকপাল রাষ্ট্র পরিচালকদের।

দীর্ঘদিন কেন্দ্রে ক্ষমতায় শাসন ক্ষমতায় দক্ষিণপন্থী দলগুলো, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি, আমলা, পুলিশদের ব্যবহার করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে চরম স্বৈরাচারী, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী শক্তি ক্ষমতায় আসীন। কোভিড১৯ মোকাবিলায় প্রথম দফা লকডাউন ঘোষণার সময় বেসরকারি সংস্থাগুলোকে ছাঁটাই, মজুরি না কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলো লঙ্ঘিত হচ্ছিল যথেচ্ছভাবে। শূন্য হাতে পরিযায়ীদের ঢল নেমে এসেছে হাইওয়েতে বাড়ি ফেরার আশায়। ১৫০ জনের ও বেশি পরিযায়ীর মৃত্যু ঘটেছে বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনা, পথশ্রমের ক্লান্তিতে। এদের ঘরে ফেরাতে ট্রেন চালানোর দাবিতে বহু তর্কবিতর্কের পর কিছু ট্রেনের ছাড়পত্র মিললেও তা নেহাতই অপ্রতুল প্রয়োজনের তুলনায়। বাড়ি থেকে মা, স্ত্রীদের গহনা বিক্রি করে পাঠানো টাকার গাড়ি জোগাড় করে ফিরেছেন বা ফেরার পথে অজস্র শ্রমিক। এত সবকিছুর মধ্যেও কোথায় যেন একটা আশা ছিল সরকার যখন বলেছেন দেরিতে হলেও মিলবে বকেয়া মজুরি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হ’লে ফিরে যাবেন কাজের জায়গায়, প্রাপ্য টাকায় মেটাবেন ধারদেনা।

কিন্তু চতুর্থ দফায় লকডাউন ঘোষণা আর ২০ হাজার কোটি টাকার ভাঁওতাবাজির প্যাকেজের সঙ্গে মোদী সরকার বাধ্যতামূলক মজুরি দেওয়ার নির্দেশ খারিজ করল। চরম বিশ্বাসঘাতকতা করল শ্রমিকদের সঙ্গে। শুধুমাত্র কর্পোরেট স্বার্থ দেখতে তৎপর সরকারের শ্রমিকদের কোনো ক্ষতিই দেখতে পায় না, দেখতে চায় না। তার আগেই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো অর্ডিন্যান্স জারি করে কাজের সময় ৮ ঘন্টা থেকে ১২ ঘন্টা করে নিয়েছে কোনোরকম মজুরি না বাড়িয়েই। ন্যুনতম সুরক্ষা যেটুকু ছিল মজুরিতে শ্রম আইনে তুলে দেওয়া হচ্ছে তাও।

করোনা সংকটে বিশ্বজুড়ে আর্থিক মন্দায় ১ লক্ষ ১২ হাজার কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ ভারতের শেয়ার বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে লাগাতার মন্দা পরিস্থিতিতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ধারাবাহিক ভাবে কমেছে।করোনা ভীতি প্রভাব ফেলেছে পর্যটন, বিনোদন ভিত্তিক শিল্পে, বাজার আরও সংকুচিত হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের নীতি, পুঁজিবাজারে উন্মুক্ত বাজার, মৌলবাদী তোষণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে বৃহদাংশের শ্রমিক শ্রেণীর মানুষকে। ভারতের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে এই সংকটের সমাধান করা খুবই কঠিন। বিশ্বের বহু দেশ মজুরি ভরতুকি দিচ্ছে কিন্তু ভারত সেই পথে হাঁটলো না। স্বাধীনতার পর থেকে বিপর্যয় মোকাবিলার ফান্ড থেকে একটি টাকা ও বরাদ্দ করলো না শ্রমিক স্বার্থে উপরন্তু পি এম কেয়ার্স নামে আরও একটি ফান্ড গঠন করে নির্বাচন তহবিল পুষ্ট করে নিল।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।