মাধবী ঘোষ:চিন্তন নিউজ:১২ই অক্টোবর:- বুদ্ধিজীবীদের খুন করতে ২২ জনকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ!গত শুক্রবার মহারাষ্ট্র থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিন ব্যক্তিকে। দু’
জন সনাতন সংস্থা এবং হিন্দু জনজাতি সমিতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত । অভিযোগ ,বিভিন্ন জায়গায় বোমা হামলার ষড়যন্ত্র করছিল এরা।
গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে বিশেষ তদন্ত দল প্রায় এক বছর ধরে তদন্তের পর একথা জানতে পারে যে বেশ কয়েক বছর ধরে নয় নয় করে ২২ জনকে আগ্নেয়াস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল বুদ্ধিজীবীদের খুন করার জন্য।
গোটা কর্নাটক জুড়ে প্রথমে বেছে নেওয়া হয় প্রায় ৬০জনকে। উদ্দেশ্য অন্তর্ঘাতমূলক মূলক কাজ চালানো । তার মধ্যে রয়েছে সাম্প্রদায়িকতা উস্কানি দেওয়া থেকে শুরু করে বিস্ফোরক ব্যবহার সবকিছুই। তার মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া হয় এই ২২ জনকে। সম্প্রতি ৪ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার পর গোটা নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ পদ্ধতি সামনে এসেছে।
অস্ত্র প্রশিক্ষণ এ যোগাযোগ রয়েছে সন্দেহে সঞ্জয় শেট্টি ও যুবরাজ কাকাকে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে বিশেষ তদন্ত দল সূত্রে জানা গেছে এরা দুজনেই কর্নাটকের বেঙ্গালুরু এলাকায় হিন্দু জাগরণ ভেদিকে নামক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত।
অস্ত্র প্রশিক্ষণ রাজেশ ভেড়ার সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারে প্রশ্ন করার জন্য ওই দুজনকে ডাকা হয়েছিল জিজ্ঞাসাবাদের পর দু’জনকেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যারা এই প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিল তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে তাদের নামে মোটেও তৈরি করা হবে যাতে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে পারে।
যে চারজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হ’ল ৩৮বছরের আমোল কালে,৩৮বছরের সুজিত কুমার,৫০বছরের রাজেশ বাঙ্গেরা,এবং৩৭বছরের ভারত কুরনে।হট নাটকের গোপন হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর অপারেশন এই আমলকালি এমনটাই অভিযোগ সুজিত কুমার হিন্দু জনজাতি সমিতির প্রাক্তনকর্মী ।এরা সরকারি চাকুরে এবং সনাতন সংস্থার অধীন হিন্দু জনজাতি সমিতির প্রাক্তন আহবায়ক।ভারত কুরনে মহারাষ্ট্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন শিবপ্রতিষ্ঠান হিন্দুস্থানের সঙ্গে যুক্ত, যার খানাপুরের ৩একর জমির উপর তৈরি হাউসেই এই অস্ত্রপ্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ।কিভাবে এই যুবকদের নিয়োগ করা হতো তার একটা মোটামুটি চিত্র সামনে এসেছে সুজিত কুমারের দেওয়া বয়ানের উপর নির্ভর করে। সুজিত কুমারই ছিল মূল নিয়োগকারী তার সঙ্গে ছিল আমল কালেও।সুজিত কুমারের দেওয়া বয়ান থেকে জানা গেছে গোপন হিন্দুত্ববাদী এই গোষ্ঠীটি কাজ করে প্রচন্ড জনক গোপনীয়তা অবলম্বন করে পুলিশের চোখে ধুলো দিতে তারা ভুয়া পরিচয় দেয় এবং নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ব্যাপক সর্তকতা নিয়ে থাকে।সুজিত কুমার তার বিবৃতিতে বলেছে আমরা যথেষ্ট ধূর্ত কৌশল ব্যবহার করি যাতে দলের একজন ধরা পড়লে শুধু সেই পাশে দল যাতে গোপন থাকে।
হিন্দু জনজাগৃতি সমিতি, শ্রীরাম সেনা ও অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর মিটিংয়ে প্রাথমিকভাবে নাশকতামূলক কাজকর্মের জন্য লোক নিয়োগ করা হত। এর পর ভারতে হিন্দু রাষ্ট্র স্থাপনের ব্যাপারে তারা কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ তার পরীক্ষা দিতো সুজিত কুমার।যারা সবচেয়ে ভালোভাবে উতরে যেত তাদের হাজির করা হতো আমল কালে ও পলাতক আরেক ব্যক্তির নিহাল ওরফে দাদার সামনে তারা স্থির করত এই ব্যক্তি দলের পক্ষে কার্যকর হবে কিনা এবং গোপন দলের কোন ধরনের কাজে তাদের নিযুক্ত করা যেতে পারে এসব কাজের মধ্যে থাকত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নাশকতার কাজে বোমা বিস্ফোরণ।
গত পাঁচ বছরে কর্ণাটকে গোপন দলে মোট ৬০জনকে নিয়োগ করেছে এই সুজিত কুমার একই ধরনের কাজ চলছে সেখানকার স্থানীয় নেতাদের অধীনে সুজিত কুমার তার বয়ানে জানিয়েছে গোপনীয়তা আমাদের দলের প্রধান ফোকাস আমরা যখন কাউকে নিয়োগ করি তাদের কখনোই আমাদের মোবাইল নম্বর দিন শুরুর দিকে আমরা পাবলিক ফোন ব্যবহার করি
সুজিত কুমার তার বয়ানে জানিয়েছে গোপনীয়তা আমাদের দলের প্রধান ফোকাস আমরা যখন কাউকে নিয়োগ করি তাদের কখনোই আমাদের মোবাইল নম্বর দিনা শুরুর দিকে আমরা পাবলিক ফোন ব্যবহার করি পরে যখন আমরা নিশ্চিত হই যে এই আমাদের কাজের পক্ষে উপযুক্ত তখন আমরা তাদের একটা মোবাইল ফোন দি শুধুমাত্র আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তাদের একটা কোড দেয়া হয়
এ বছর মে মাসে সুজিত কুমারের গ্রেপ্তারের পর কর্নাটকের উপকূলে উদ্ভিদে তার বাড়ি রান্নাঘর থেকে ২২ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে বিশেষ তদন্ত দল গ্রেপ্তারের সময় তার কাছে থেকে উদ্ধার হয় ২১ টি মোবাইল ফোন বিশেষ তদন্তকারী দলের একটি সূত্র জানিয়েছে এই ফোনগুলি যাদের নিয়োগ করা হয়েছে কেবলমাত্র তাদের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান ব্যবহারের জন্য যাদের নিয়োগ করা হয়েছে তাদের কাছেও এরকম একটি ফোন থাকত যার মাধ্যমে সে এদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ফোন গুলি অন্য কারো সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নয় গৌরী লঙ্কেশ হত্যা তদন্তে নেমেছে এই দলে নিযুক্ত পদ্মাবত ছবির প্রদর্শনে সময়ে গন্ডগোল পাকিয়ে ছিল এবং গত নভেম্বরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে ছিল আমাদের কাছ থেকে সারাদেশে 34 জন লেখকের যুক্তিবাদী নামের তালিকা উদ্ধার করেছে বিশেষ তদন্ত দল যাদের হত্যা করা সম্ভব সম্ভাবনা টার্গেট হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছিল।
কর্ণাটক স্টেট ফরেনসিক ল্যাবরেটরি জানিয়েছে গৌরী লঙ্কেশ ও এমএম কালবুর্গিকে একই ৭. ৬ ৭এম.এম পিস্তল থেকে গুলি করে খুন করা হয়েছিল। কালবুর্গি কে ২০১৫ সালের ৩০শে আগস্ট হত্যা করা হয়। ব্যালিস্টিক তথ্যাদি থেকে মনে করা হচ্ছে গোবিন্দ পানসারেকেও খুন করা হয়েছিল দেশী ৭ দশমিক ৬৫ এমএম পিস্তল দিয়ে। ৮১ বছর বয়সী গোবিন্দ পানসারেকে মহারাষ্ট্রের কোলাপুরে গত ২০১৫ সালে ১৬ ই ফেব্রুয়ারি খুন করা হয়। ২০১৬সালে ১০ই আগস্ট পুনেতে খুন হয়েছিলেন যুক্তিবাদী নরেন্দ্র দাভোলকর। ব্যালিস্টিক প্রমাণ থেকে মনে করা হচ্ছে, গোবিন্দ পানসারেকে হত্যা করার জন্য যে দুটি বন্দুক ব্যবহৃত হয় তারই একটি দিয়ে খুন করা হয় নরেন্দ্র দাভোলকর কে।