কিংশুক ভট্টাচার্য: চিন্তন নিউজ:১৯শে আগস্ট:- রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী রবিবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙককে সরকারবিরোধী সমাবেশ মিলিত হয়েছিলেন। এই বিক্ষোভের নেতৃত্বে রয়েছে ছাত্রদের সংগঠনগুলি।
বিক্ষোভকারীরা একটি সংশোধিত সংবিধান চান। তাঁরা থাইল্যান্ডের অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয় ‘রাজতন্ত্রের’ সংস্কারের ডাক দিয়েছেন। থাই আইনের অনুসারে রাজপরিবারের সমালোচনা কারি যে কোনো ব্যাক্তিকে দীর্ঘ কারাবাসের শাস্তি ভোগ করতে হতে পারে। এতদ্সত্তেও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে প্রায় প্রতিদিন ছাত্রদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ মিছিলে ঊত্তাল হচ্ছে গোটা দেশ।বেশ কয়েকজন প্রতিবাদী নেতাকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রবিবারের সমাবেশের আয়োজকরা বলেছেন যে তারা আশা করছেন ঐদিনের সমাবেশটি ছাত্রসমাজের বাইরেও পরিবর্তনের জন্য বিস্তৃত অংশের মানুষের সমর্থন লাভের সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। রবিবার সন্ধ্যায় ব্যাংকক পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী ঐ প্রতিবাদ কর্মসূচীতে প্রায় দশ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন।
“আমরা জনগণের কাছ থেকে একটি নতুন নির্বাচন এবং একটি নতুন সংসদ চাই,” ঐদিনের সমাবেশে উপস্থিত জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে চব্বিশ বছর বয়সী ছাত্র নেতা পাটসালাওয়ালি তনাকিত্বিবিউনপোন বলেছেন। তিনি আরও বলেন যে, “সর্বশেষে, আমাদের স্বপ্ন একটি এমন রাজতন্ত্র যা সত্যিকারের নিরপেক্ষ ঊন্মুক্ত সংবিধানের নিয়ন্ত্রনাধীন।
প্রয়ূথ পরিচালিত রাজতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ জানাতে শিক্ষার্থীরা এই ধরনের ঝুঁকিও নিচ্ছেন। গোটা বিশ্ব থাই তরুন সমাজের প্রতিবাদের অন্তরনিহিত কারন জানতে আগ্রহী। বিক্ষোভকারীরা থাইল্যান্ডের লিজ-মাজেস্ট আইন ব্যাখ্যা করছেন।
পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, দুইহাজার চৌদ্দ সালের অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী প্রয়ূথ চ্যান-ওচা ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ব্যাংককে গণতন্ত্রের স্মৃতিসৌধে রবিবারের এই প্রতিবাদ ছিল সরকার-বিরোধী একটি অন্যতম বড় বিক্ষোভ।
এদিনের সমাবেশে বহু মানুষকে “স্বৈরশাসনের অবসান চাই” এবং “গণতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক” লেখা ব্যানার ওড়াতে ওড়াতে অথবা শ্লোগান দিতে দিতে অংশ গ্রহন করতে দেখা গিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা দাবি করেছেন যে গত বছর বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী সৈন্যবাহিনীর প্রাক্তন জেনারেল প্রয়ূথকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে।
ব্যাংককে বিবিসির প্রধান জোনাথন জানিয়েছেন যে বিক্ষোভকারীদের দাবিতে সাম্প্রতিক রাজতন্ত্রের সংস্কারের অন্তর্ভুক্তি বিতর্ককে বৈদ্যুতিক গতিতে জনপ্রিয় করে তুলেছে। এদিন প্রায় ছয়শত পুলিশ কর্মচারি মোতায়ন করা হয়েছিল এই সমাবেশ পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রনের জন্য। এই সমাবেশের অল্প কয়েকদিন আগে মুষ্টিমেয় কিছু বর্তমান রাজতান্ত্রিক ব্যাবস্থার সমর্থকগণ একটি সমাবেশ সংগঠিত করেছিলেন।
দুইহাজার আঠারো সালে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পরে গত বছরের নির্বাচনগুলিই ছিলো প্রথম নির্বাচন। তখন অনেক তরুণ এটাকে তাঁদের জন্য পরিবর্তনের একটা সুযোগ হিসাবে দেখেছিলেন।
কিন্তু সামরিক বাহিনী রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহনের পদক্ষেপ নিয়েছিল এবং নির্বাচনে মিঃ প্রয়ূথকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা হলো। প্রধানমন্ত্রী প্রয়ূথ বলেছেন, থাইদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বিক্ষোভকারীদের দাবী সমর্থন করেন না।
গণতন্ত্রপন্থী ফিউচার ফরওয়ার্ড পার্টি (এফএফপি) আদালতের আদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা হওয়ার পরে ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবাদের বর্তমান আন্দোলনের শুরু হয়েছিল। তখন কিছু বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তবে কোভিড -১৯ নিষেধাজ্ঞাগুলির কারনে দ্রুত সমাবেশ ইত্যদি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
জুনে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়, যখন দুইহাজার চৌদ্দ সাল থেকে কম্বোডিয়ায় নির্বাসনে বসবাসরত বিশিষ্ট সমাজ কর্মী ওয়াঞ্চ্লেয়ারেম সটসাকসিত নিখোঁজ হয়েছিলেন। যদিও থাই সরকার তাঁর নিখোঁজ হওয়ার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
দেশের জরুরি অবস্থা আইন অনুযায়ী জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও, গত আঠারো জুলাই এই সমাবেশ ও ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভগুলি আবার শুরু হয়েছিল এবং এর পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে।
গত সপ্তাহে বিশিষ্ট বাইশ বর্ষীয় ছাত্রনেতা ‘পারিত চীবরাক’ কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, লাঞ্ছিত করা এবং অতিমারি কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা যুক্ত কাজের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
![](https://chintannews.com/wp-content/uploads/2020/08/IMG_20200819_192618-1024x650.jpg)