বিদেশ

সমগ্র বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছেন এই ব্রাজিলীয় দম্পতি


মল্লিকা গাঙ্গুলী, চিন্তন নিউজ, ১০ জুলাই: বর্তমানে সমগ্র বিশ্বের পরিবেশ বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। তাঁদের মতে পৃথিবী থেকে ক্রমাগত উদ্ভিদের পরিমাণ কমে যাওয়াই বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের পরামর্শ সাম্প্রতিক বিশ্ব উষ্ণায়নের ভয়ংকর প্রকোপ থেকে পৃথিবীকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় বনভূমি সম্প্রসারণ। বিজ্ঞানীদের সমীক্ষা অনুযায়ী বিশ্বের ১৭০ কোটি হেক্টর জমিতে ৩ লক্ষ কোটি গাছ লাগানো সম্ভব হলে তবেই এই প্রাণঘাতী উষ্ণতা থেকে জীবজগতের মুক্তি হতে পারে। বর্তমানে উত্তর দক্ষিণ উভয় গোলার্ধের শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ সবুজায়ন, জল সংরক্ষণ, পরিবেশ দূষণ রোধ ইত্যাদি শব্দের সঙ্গে পরিচিত। কমবেশি বৃক্ষরোপণের পদক্ষেপও গ্রহণ করা হচ্ছে।

কিন্তু এখন হঠাৎ করে নয়; আজ থেকে কুড়ি বছর আগেই ব্রাজিলের মত ছোট্ট একটা দেশের এক অতি সাধারণ দম্পতি বনসৃজনের এই মহৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। পেশায় চিত্র সাংবাদিক সেবাস্তিয়াও সালগাদো এবং তাঁর স্ত্রী লেলেয়া ডেলুইজ ওয়ানিক সালগাদো তাঁদের দেশের ইনস্টিট্যুটো টেরা নামক এক পরিত্যক্ত মালভূমি কে বেছে নেন বৃহৎ বনাঞ্চলে রূপদান করার জন্য।

এই ব্রাজিলিয় সাংবাদিকদের ছেলেবেলা কাটে এই মালভূমি অঞ্চলে, যখন সেটি ছিল ঘন জঙ্গলাকীর্ণ। কর্মসূত্রে দীর্ঘ দিন দেশে বিদেশে কাটিয়ে মধ্য বয়সে তিনি দেশে ফিরে দেখেন, তাঁর স্বপ্নের মালভূমির বনাঞ্চলটির প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। তারই আপনজনদের স্বার্থে প্রকৃতি উজার হয়ে গেছে। স্বাভাবিক ভাবেই বন্যপ্রাণীর সংখ্যাও কমে গেছে। প্রকৃতিপ্রেমী হতাশ মিস্টার সালগাদো নিজের বিবেকের তাড়নায় সংকল্প করেন, তিনি তাঁর শৈশবের সেই বনভূমি পুনরায় গড়ে তুলবেন। স্ত্রী লেলিয়ে কে সঙ্গে নিয়ে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে অক্লান্ত অমানুষিক পরিশ্রম করে টেরা বনভূমিকে নতুন করে সুজলা সুফলা পরিচিত জঙ্গলের রূপদান করতে সক্ষম হন। এই সেবাস্তিয়ান দম্পতি যখন কাজ শুরু করেন তখন টেরা বনভূমির মাত্র ০.৫ শতাংশ জমিতে গাছ ছিল। ঐ দম্পতি জঙ্গল তৈরি এবং তাকে রক্ষা করার লক্ষ্যে প্রথমেই “ইনস্টিট্যুটো টেরা” অর্থাৎ মালভূমির নামেই একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা ক’রে বনসৃজনের কাজে নামেন। এই সংস্থা কর্তৃক চার লক্ষ গাছ লাগানো হয়। প্রায় বন্ধ্যা হতে বসা এই ব্রাজিলিয় মালভূমিটি অচিরেই ঘন জঙ্গলের রূপ নেয়। বর্তমানে এখানে ২৯৩ প্রজাতির গাছ আর সেই গাছকে আশ্রয় করে ১৭২ প্রজাতির পাখি, ৩৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৫ প্রজাতির সরীসৃপের সুখের সংসার গড়ে উঠেছে।

মানুষ চাইলে কি না পারে! শুধু সদিচ্ছা আর আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। খুব বেশি দিন নয় মাত্র ২০ বছরে ২০ লক্ষ গাছের বিস্তীর্ণ বনানী সৃষ্টির নজির গড়তে সক্ষম এই ব্রাজিলিয় দম্পতি বিশ্ব পরিবেশ রক্ষা অভিযানের সফল অভিযাত্রী। সালগাদো দম্পতির দেখানো পথে সমগ্র বিশ্ববাসীর শ্লোগান নয়, শপথ হোক- “দাও ফিরে সে অরন্য লও এ নগর।”


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।