শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্য ও বীভৎস সামাজিক দূর্দশার মাঝে দাঁড়িয়ে বিশ্ব


সুপর্ণা রায়: চিন্তন নিউজ:৬ইমে:- অতীতের পিছিয়ে পড়া সমাজ হোক বা বর্তমানের অতি আধুনিক সমাজ, সব সমাজেই মানুষের মধ্যে থাকে অজ্ঞতা, কুসংস্কার, অতিরিক্ত ধর্মের প্রতি আনুগত্য এবং জাতি বিদ্বেষ।। এই করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কথা নয়, আগে যতবার পৃথিবীতে মহামারী দেখা দিয়েছে ততবার একটি কথা ঘুরেফিরে এসেছে কার দোষে এই মহামারী।। তখন মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার থেকেও বড় হয়ে উঠে সেই শত্রুকে খোঁজার ব্যাপারে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।। মানুষের ভয় এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে তখন নানারকম কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে পড়ে।। এই করোনা মহামারীতেও সেই অজানা শত্রু খোঁজার অন্যথা হয়নি।।

আর কুসংস্কারের জন্যই থালা ঘন্টা বাজানো বা মোমবাতি জ্বালিয়ে যাতে যারা সামনের সারিতে থাকে এই মহামারীর বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করছে তাঁদের সমর্থনে।। কিন্তু সেই ডাক্তার,নার্স বা স্বাস্থ্য কর্মীরা যে বাড়ীতে থাকে সেই বাড়ীতে ঢুকতে দিতে চায় না বা পাড়ায় ও ঢুকতে দিতে চায় না।। আর এই জিনিস আরও গেঁড়ে বসে যখন সুযোগ সন্ধানী রাজনীতিক নেতা নেত্রীরা সমানে ভোটের কথা চিন্তা করে বা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ইন্ধন জুগিয়ে যায়।।

এরকম ঘটনা এই প্রথম নয় __১৫২৪ সালে সিলিফিস নামে একটি রোগ মারাত্মক মহামারীর রূপ নিয়েছিল তখন‌ও এখনকার মতো শত্রু খোঁজার চেষ্টা চলেছিল।। ১৯১৮ সালে ছড়িয়ে পড়ে মারাত্মক স্প্যানিশ ফ্লু।। তখন এখন কার মতো লকডাউন, কোয়েরেন্টাইন, মাস্ক ইত্যাদি দিয়ে রোগ সামলানোর চেষ্টা করা হয়েছিলো।। আবার ভারতে যখন কলেরা মহামারীর আকার ধারণ করেছিল তখন সেই অজানা শত্রু খোঁজার চেষ্টা চলেছিল।।প্লেগের ক্ষেত্রেও এক ঘটনা ঘটেছে।।
আজ যখন করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে গোটা বিশ্ব ত্রাহি ত্রাহি করছে তখনও চলছে সেই অজানা শত্রুর খোঁজ।।

সূত্র অনুযায়ী ২০১৯ এর নভেম্বর মাসের শেষের দিকে চীনের উহার শহরে এই করোনার আক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করে।। ২০১৯ এ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে চীন এই রোগের ভয়াবহ পরিণতির কথা জানায়।। কারন এই অল্প সময়ের মধ্যেই চীনের বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুও ঘটেছে প্রচুর।। ৩০ শেষ জানুয়ারি পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা সংক্রমণকে অতিমারী বলে ঘোষণা করে এবং স্বাস্থ্য এ আন্তর্জাতিক জরুরী অবস্থা জারী করে।। চারিদিকে রটে যায় চীনের খাদ্যাভ্যাস দায়ী এই রোগের জন্য।। বিশ্বের পুঁজি বাদী দেশ গুলো এই অপপ্রচারের প্রতিবাদ করা দূরের কথা আরও এই প্রচারকে ইন্ধন জোগালো।। সব রাষ্ট্র সমাজতান্ত্রিক চীনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালো।।

প্রথম থেকেই রোগকে অবহেলা করা হয়েছে এবং ততদিনে আমেরিকাতে প্রায় ১০০০ জনের মৃত্যু ঘটেছে।। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জোরের সাথে ঘোষণা করেন করোনা “”চীনা ভাইরাস””_ মিডিয়া গুলো এই প্রচারকে সমর্থন করে গোটা বিশ্ব জুড়ে কোনো রকম প্রমাণ না থাকা স্বত্বেও দায়িত্ব নিয়ে এই করোনা ভাইরাসকে “” চীনা ভাইরাস”” নামে প্রচার শুরু করে।। এতদিন হয়ে গেল শুধু হুমকি দেওয়া ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসন আর কিছুই প্রমাণ করতে পারে নি যে এই ভাইরাস চীন দেশের ভাইরাস।। অনেক দেশ আবার আফ্রিকা কে দায়ী করেছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য।। প্রতিটি দেশ নিজেদের মতো করে কোন প্রমাণ ছাড়াই অজানা শত্রু খোঁজার চেষ্টা করছে।। সেই ৪০০ বছর আগের ধ্যান ধারণা থেকে আর বেরোতে পারছে না , ওই জায়গাতেই ঘুরপাক খাচ্ছে।।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।